1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপত্তা সুশাসন ও গণতন্ত্রের প্রত্যাশা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রত্যাশার ভিন্নতা আছে৷ কারুর চিন্তা রাজনৈতিক আবার কারুর চিন্তা অর্থনৈতিক৷ কারুর সামাজিক৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা নিরাপত্তা, সুশাসন ও গণতন্ত্রের৷

https://p.dw.com/p/3VXWU
ছবি: DW/H. Ur Rashid

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে নতুন বছরে একটি বা দু'টি চাওয়ার কথা জানতে চাওয়া হয়৷ আর এই প্রত্যাশা জানতে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে প্রশ্ন করা হয়৷ তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ আছেন, আছেন অর্থনীতিবিদ৷ আছেন সাধারণ মানুষ৷ সাধারণ মানুষের প্রধান চিন্তা টিকে থাকা নিয়ে৷ তারা ভাবছেন বাজারদর, নিরাপত্তাসহ ভালোভাবে বেঁচে থাকার কথা৷ কিন্তু প্রায় সবার কথায় উঠে এসেছে অস্বস্তি আর অনিশ্চয়তা৷


ঢাকার কলাবাগানের গৃহবধূ তাসমিয়া ইসলাম নতুন বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল দেখতে চান৷ তার কথা,‘‘এবছর পেঁয়াজের দাম নিয়ে যা ঘটেছে তাতে আতঙ্কিত হয়েছি৷ মনে হয়েছে বাজারের ওপর কারোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ সিন্ডিকেট করে যেকোনো শক্তিশালী গ্রুপ চাইলে যেন যা কিছু তাই করতে পারে৷ এটার অবসান চাই৷''


নিরাপত্তার বিষয়টিকে মানুষ এখন শুধু আক্ষরিক অর্থে নিরাপত্তা মনে করেন না৷ তারা এটাকে অনিশ্চয়তার দিক থেকে দেখেন৷ কাজের নিরাপত্তা, চলাফেরার নিরাপত্তা, ভালো থাকার নিশ্চয়তা এসব দিক তারা বিবেচনায় নেন৷ একজন শিক্ষিত তরুণ তার নিরাপত্তা দেখেন তার চাকরি বা কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তার দিক থেকে৷ যেমন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করর যুবক অভীক ইসলাম মনে করেন,‘‘আসলে টিকে থাকার লড়াই করছি আমরা৷ এই সংগ্রামে অনিশ্চয়তা আছে নানা দিক থেকে৷ এটা আমাদের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে৷ এই নিরপত্তাহীনতা অবসান চাই৷''


সাংবাদিক দীপু সারোয়ারও নিরাপত্তার কথা ভাবেন৷ কিন্তু তার আঙ্গিক ভিন্ন৷ তিনি চান তার পেশাগত নিরাপত্তা৷ তার মতে,‘‘সাংবাদিকেরা বাংলাদেশে নানা দিক দিয়ে ঝুঁকির মুখে আছেন৷ তারা শারীরিক নিরাপত্তা ঝুঁকি যেমন রয়েছে৷ তেমনি আছে আর্থিক অনিশ্চয়তা৷ আর সবার ওপরে আমাদের প্রয়োজন বাকস্বাধীনতা৷ এই জায়গাটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে৷ এর অবসান না হলে সাংবাদিক সাংবাদিকতা করবেন কিভাবে?''


বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ নতুন বছরে দুইটি বড় চ্যালঞ্জে দেখতে পাচ্ছেন৷ তার মতে,‘‘রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা দেখাতে পারছেনা সরকার৷ আর এটা করতে না পারলে সরকারের উন্নয়মূলক কাজসহ আরো অনেক প্রয়োজনীয় কাজ বাধাগ্রস্ত হবে৷ আর ঋণখেলাপিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছে৷ তাদেরও আইনের আওতায় এনে খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে৷ এটা করা না হলে অর্থনীতি বড় ধরনের বিপদে পড়বে৷ নতুন বছরে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট হবে৷ এটা আশার কথা৷ বিনিয়োগ বাড়বে৷ কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে সুফল পাওয়া নাও যেতে পারে৷''


দেশের মালিকানা এখন কার হাতে তা নিয়ে সংশয় আছে রাজনীতিবিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর৷ তাই নতুন বছরে তার প্রত্যাশা,‘‘দেশের মালিকানা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরে আসুক৷ ভোট ডাকাতির মাধ্যমে মানুষের মালিকানা কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ আর এই মালিকানা ফিরে পেতে আমি দেশের জনগণের পক্ষে থাকব৷''


আর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ দেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চান৷ তার মতে,‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি তিনি চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায়৷ কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি নানাভাবে এই উন্নয়ন ব্যাহত করতে চায়৷ তারা চায় বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে৷ সেটা যেন না হয়৷ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেন আরো এগিয়ে যায় নতুন বছরে এটাই আমার চাওয়া৷''


তবে স্থিতিশীলতা আইনের শাসনের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে মানুষের অনেক চাওয়াই পুরণ হবে বলে মনে করেন তিনি৷ আর এরজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা৷ তিনি বলেন,‘‘আইনের শাসন দুর্বল থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে পড়ে৷ মানবাধিকার, সুশাসন , জনগণের নিরাপত্তা সবখানেই এর প্রভাব পড়ে৷ এটা যদি আমরা ঠিক করতে পারি তাহলে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ, জীবন সবখানেই স্থিতিশীলতা চলে আসবে৷''


বাংলাদেশের নাগরিক জীবনে এই নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তা বোধ তৈরির পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিইটউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন,‘‘আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে অস্থিরতা চলছে৷ যা মানুষকে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তার বোধে আক্রান্ত করছে৷ মানুষ এখন আরো কি খারাপ হতে পারে সেই চিন্তা করছে৷''