নিজামউদ্দিন দরগা
৭০০ বছরের পুরনো নিজামউদ্দিন দরগা। দিল্লির এই দরগা তৈরি করেছিলেন সুফি সাধক হযরত নিজামউদ্দিন। এই সাধনস্থল সব ধর্মের মানুষেরই তীর্থস্থান।
দিল্লিতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া
ভারতীয় উপমহাদেশে সুফি সংস্কৃতি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া। দিল্লিতে তাঁর দরগায় এখনও সুফি সাধনা এবং সঙ্গীতের চর্চা হয়।
নিজামউদ্দিনের মাজার
দরগার ভিতরেই হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার। রয়েছে আমির খসরুর কবরও।
সুফি ভাব
১২৩৮ সালে উত্তরপ্রদেশে জন্ম হয়েছিল হযরত নিজামউদ্দিনের। খুব ছোট বয়সেই বাবাকে হারান তিনি। পরে মায়ের সঙ্গে চলে আসেন দিল্লি। অল্প বয়সেই সুফি সাধানার প্রতি আকৃষ্ট হন নিজামউদ্দিন।
ভালবাসাই ধর্ম
নিজামউদ্দিন বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর বাস করেন প্রতিটি মানুষের ভিতরে। ভালবাসা দিয়েই সেই ঈশ্বরকে জয় করা যায়। তাঁর দরগায় সব ধর্মের মানুষেরই ছিল আনাগোনা। সকলকে নিয়েই চলার কথা বলতেন নিজামউদ্দিন।
সর্বধর্ম সমন্বয়
যে সময় দরগা তৈরি করছেন নিজামউদ্দিন, উপমহাদেশে তখন সদ্য পৌঁছেছে ইসলাম। শুরু হয়েছে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজামউদ্দিন গোটা দেশ জুড়ে প্রচার করেছিলেন সম্প্রীতির বার্তা।
এলেন আমির খসরু
সুফি সঙ্গীতকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন কবি আমির খসরু। তিনিও ছিলেন নিজামউদ্দিনের শিষ্য। নিজামউদ্দিন দরগায় হজরত আউলিয়ার কবরের পাশেই রয়েছে তাঁর কবর।
বিশ্ব সংস্কৃতি
৭০০ বছরের পুরনো এই দরগায় এক সময় গোটা পৃথিবী থেকে এসেছেন সুফি সাধকরা। ধর্ম এবং সংস্কৃতির চর্চা করেছেন। এখনও বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের সুফিরা আসেন এখানে।
সেই সংস্কৃতি চলছে
নিজামউদ্দিন আউলিয়ার বংশধররাই এখনও দরগার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হয় সুফি গান। পালিত হয় নানা উৎসব। উৎসবেও থাকে না ধর্মের ভেদাভেদ।
বসন্ত পঞ্চমী
বসন্ত পঞ্চমীতে বাংলার ঘরে ঘরে যখন সরস্বতী পুজো হয়, খাজা নিজামউদ্দিনের দরগায় তখন হয় বসন্ত আবাহনের অনুষ্ঠান। হাতে সর্ষে ফুল নিয়ে হলুদ কাপড়ে সেজে বিকেল থেকে শুরু হয় গান।
বসন্ত ভালবাসার কাল
বসন্তের আবাহনে ভালবাসার গান গাওয়া হয় দরগায়। সমস্ত ধর্মের মানুষ আসেন সেখানে। সকলের গলায় পরিয়ে দেওয়া হলুদ চাদর। হাতে দেওয়া হয় ফুল।
নিজামুদ্দিনকে হলুদ চাদর
নিজামউদ্দিনের কবরের উপরেও দেওয়া হয় হলুদ চাদর। সঙ্গে ঢোল বাজিয়ে চলতে থাকে গান। সেটাই প্রার্থনা।
আমির খসরুর গান
আমির খসরুর কবরের সামনে বসেও গাওয়া হয় তাঁরই লেখা বসন্তের গান। গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে তালে বাদ্যে।
আকবরের কথা
নিজামউদ্দিন আউলিয়ার এই প্রেম ধর্মে আকৃষ্ট হয়েছিলেন সম্রাট আকবরও। আইন-ই-আকবরীতেও সুফি সাধকের কথা বলা হয়েছে। লেখা হয়েছে আমির খসরুর কথাও।
পাশেই মসজিদ
দরগার গায়েই রয়েছে মসজিদ। নামাজের সময় বন্ধ হয় গান। নিস্তব্ধ পরিবেশে ভেসে আসে আজানের সুর।
দরগার চাতালেই নামাজ
দরগার চাতালে বসেই নামাজ সেরে নিচ্ছেন এই ভদ্রমহিলা।
সুফির প্রার্থনা
অনেকেই দরগার বারান্দায় বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সামনে রাখা পছন্দের সুফি কবিতার বই নামিয়ে পাঠ করেন। সেটাই প্রার্থনা।
সুফি সাধক
দরগায় এখনও বাস করেন বহু কাওয়ালি গায়ক এবং সাধক। তাঁদের ঘিরে বসে থাকেন সাধারণ মানুষ। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন সুখ-দুঃখের কথা। সাধকরা শোনেন, উপদেশ দেন।
এ এক অন্য জগৎ
সরু গলি বেয়ে জাফরির দেওয়াল ধরে যেতে হয় দরগায়। এ যেন এক অন্য জগৎ। শহর থেকে অনেক দূরের কোনও পৃথিবী।
মনের ইচ্ছা সুতোয়
দরগা ছেড়ে যাওয়ার আগে অনেকেই জাফরি দেওয়ালে মনের ইচ্ছে সুতোয় বেঁধে ঝুলিয়ে দেন। বলা হয়, নিজামউদ্দিন সকলের ইচ্ছা পূরণ করেন।