1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নিউক্লিয়াস’-এর সদস্য ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা

১৫ ডিসেম্বর ২০২১

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ পেতে একাত্তরের বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়েছে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের সংগ্রামী নেতা-কর্মীদের৷ এমনই একজন সংগ্রামী নেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা আমিন৷

https://p.dw.com/p/14KFe
Bangladesch Historische Bilder
ছবি: Journey/R. Hoque

শরীয়তপুরে ১৯৪৯ সালের ১৫ই জুন জন্ম গ্রহণ করেন রাশিদা আমিন৷ পিতা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এবং মা রাজিয়া বেগম৷ ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের প্রতিশ্রুতিশীল কর্মীদের নিয়ে গঠিত ‘নিউক্লিয়াস' নামের বিশেষ বাহিনীর সদস্য হন সাহসী নারী রাশিদা আমিন৷ এই বিশেষ গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে রাশিদা এবং তাঁর সহকর্মীরা বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য নিজেরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন৷ একইসাথে বিভিন্ন সভা, বৈঠক এবং মিছিল ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও দেশের মানুষকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন তারা৷ এভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৃণমূল পর্যায়ের ভিত্তিকে শক্ত করে গড়ে তোলার কাজ করেন রাশিদা ও তাঁর সঙ্গীরা৷

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ পড়ছিলেন তিনি৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বের কথা জানালেন রাশিদা আমিন৷ তিনি বলেন, ‘‘ছয় দফার ডাক দেওয়া হলে, আমরা ছয় দফার কথা না বলে এক দফার কথাই বেশি করে বলতাম৷ আর সেই এক দফা হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা৷ এভাবে মানসিকভাবে ও সাংগঠনিকভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি৷ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঝেই ছিলাম৷ একাত্তরের মার্চ মাসে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম৷''

একাত্তরের ২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে রাশিদা আমিন ও তাঁর সহকর্মীরা যুদ্ধের জন্য কাজ করতে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন৷ রাশিদা চলে যান শরীয়তপুরে নিজের গ্রামের বাড়িতে৷ তাঁদের বাড়িটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি বানানো হয়েছিল৷ সেখান থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার তিন নম্বর আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা আমিন৷ এসময় একটি অভিযানের কথা জানালেন রাশিদা৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘সেসময় আওয়ামী লীগ, ন্যাপসহ দল-মত নির্বিশেষে সবাই এসে আমাদের বাড়িতে এসে সমবেত হতেন৷ সেখান থেকে আমরা প্রথম সফল অভিযান চালিয়েছিলাম পালং থানায়৷ এই সফল অভিযানের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়েছিল৷ ফলে এ খবর শুনে সবাই খুব প্রশংসা করেছিল এবং উজ্জীবিত হয়েছিল৷ কিন্তু এ সফল অভিযানের পর প্রায় দেড়শ পাক সেনা আমাদের গ্রামে অভিযান চালায়৷ তবে আমরা নিজেরাও সেটা বুঝেছিলাম এবং খবর পেয়েছিলাম যে, পাক সেনারা এ গ্রামে হামলা চালাবে৷ তাই তাদের আসার আগেই খালেদা আপা মেয়েদের একটি দল নিয়ে একদিকে সরে পড়েন৷ আমিও অন্য মেয়েদের নিয়ে আরেকদিকে চলে যায়৷ এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরাও ঘাঁটি ছেড়ে দূরে অবস্থান গ্রহণ করেছিল৷ সময়টা ছিল বর্ষাকাল এবং আমাদের বাড়ির চারিদিক পানিতে ডুবে ছিল বলে পাক সেনারা বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি৷ কিন্তু বাজারে আমাদের একটি দোতলা ওষুধের দোকান ছিল৷ সেটিতে তারা প্রথমে আগুন দেয় এবং পরে গোটা বাজারটাই জ্বালিয়ে দিয়েছিল৷''

এভাবে যুদ্ধ চলাকালীন নয় মাস শরীয়তপুরে রাশিদা এবং মুক্তিযোদ্ধা খালেদা খানম নারীদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন৷ তাঁদের কাছে এটি গেরিলা যুদ্ধের মতো ছিল৷ ফলে তাঁরা মেয়েদেরকে দিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে অস্ত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে আঙ্গারিয়াতে একটি সিনেমা হলে প্রায় পাঁচশ' নারীর একটি সম্মেলন আয়োজন করেছিলেন রাশিদা এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ সেই সম্মেলনে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহসী নারীরা নৌকায় পতাকা টাঙিয়ে এবং স্লোগান দিতে দিতে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান রাশিদা৷ সেই সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ডা. কাশেম উপস্থিত ছিলেন৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য