নাৎসি বিচারের সাক্ষী ‘কোর্টরুম ৬০০’
হলোকস্ট ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত ‘ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়াল’৷ আদালতের যে কক্ষে ঐ বিচারকাজ হয়েছিল সেটা এখন জাদুঘর৷
নাৎসিদের বিচার
হলোকস্টসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত ‘ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়াল’৷ ১৯৪৫ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে উচ্চপদস্থ নাৎসি কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের বিচার করা হয়েছিল৷ জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের ন্যুরেমব্যার্গ শহরের ‘প্যালেস অফ জাস্টিস’এর কোর্টরুম ৬০০-তে এই বিচার হয়৷
যে কারণে ন্যুরেমব্যার্গ
নাৎসিদের বিচারের জায়গা হিসেবে ন্যুরেমব্যার্গের প্যালেস অফ জাস্টিসকে বেছে নেয়ার কারণ, স্থানটি তখন মার্কিন বাহিনীর দখলে ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভবনটি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি৷ এছাড়া বন্দিদের রাখার জন্য পাশেই একটি কারাগার ছিল৷ আরো একটি কারণ হচ্ছে, ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ন্যুরেমব্যার্গেই নিয়মিত সমাবেশ করতো নাৎসি পার্টি৷ এবং সেখান থেকেই ইহুদিদের বিচারের আইনের ঘোষণা এসেছিল৷
নাৎসি শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার
ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালে বিমানবাহিনীর কমান্ডার হেয়ারমান গ্যোরিং, নাৎসি দলের উপনেতা রুডল্ফ হেস (সর্বডানে) ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম ফন রিবেনট্রপসহ নাৎসি পার্টির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার বিচার করা হয়৷ এই তিনজনকেই তাদের অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়৷ পরে গ্যোরিং কারাগারে নিজের কক্ষে আত্মহত্যা করেন, রিবেনট্রপকে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ আর হেসকে তার বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে হয়৷
চিকিৎসকদের বিচার
নাৎসিদের বিচার শেষ হওয়ার পর কোর্টরুম ৬০০-তে অন্য যুদ্ধাপরাধেরও বিচার হয়েছে৷ যেমন ‘ডক্টরস ট্রায়াল’ বলে বিবেচিত বিচারে ২৩ জন ব্যক্তিকে (অধিকাংশই চিকিৎসক) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দিদের উপর ভয়াবহ পরীক্ষা চালানো ও তাদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়৷ পরে ঝুলিয়ে সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷
পুরনো কাজে ফিরে যাওয়া
নাৎসি ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শেষে ১৯৬০ সালের জুন মাসে কোর্টরুম ৬০০-কে বাভারিয়া রাজ্যের বিচারকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ এই কক্ষের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০০ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে সেখানে গাইডেড টুরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ অনেক পর্যটক এতে উপস্থিত থাকতেন৷ পরে ‘মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালস’ স্থাপনের জন্য ২০০৮ সালে ঐ টুর আয়োজন বন্ধ করা হয়৷
বিচার কার্যক্রমের সমাপ্তি
২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেষবারের মতো কোর্টরুম ৬০০-তে বিচারকাজ চলে৷ স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ঐ ঘরটি এখন মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালসের অংশ৷ অর্থাৎ, দর্শনার্থীরা সেটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ মেমোরিয়াম ন্যুরেমব্যার্গ ট্রায়ালস হচ্ছে একটি তথ্য ও নথিকেন্দ্র, যেখানে ঐ বিচার সংক্রান্ত কাগজপত্র সংরক্ষিত আছে৷
ক্রিস্টিনা বুরাক, জেনিফার কামিনো গঞ্জালেস/জেডএইচ