সোশ্যাল মিডিয়া
১০ ডিসেম্বর ২০১২রেডিও শো করার নামে একটি ঠাট্টা ফোনকল থেকে যে এ'রকম মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির সৃষ্টি হতে পারে, সেটা যারা ঐ ঠাট্টাটি করেছে অথবা যারা পরে সেই ঠাট্টাকে ইন্টারনেটে লক্ষবার উপভোগ করেছে, তাদের কারোরই জানা ছিল না৷
এক সাধারণ নার্স, দুই সন্তানের জননী, ব্রিটেনের এক সন্তানসম্ভবা রাজকুমারীর মর্নিং সিকনেস সংক্রান্ত একটি খেলো ঠাট্টার জন্য প্রাণ দিলেন – অথবা নিজের প্রাণ নিলেন, যদিও সেটা অটোপ্সির পরেই সঠিকভাবে জানা যাবে৷
জাসিন্থাকে বোকা বানানো হল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং প্রিন্স চার্লসের অতি খেলো অনুকরণের মাধ্যমে৷ তাঁর অপরিচিত কিংবা আধা-পরিচিত একটি কিংবা একাধিক জগত থেকে তাঁকে হঠাৎ টেনে এনে, তাঁর চেনা, বাঁধা গণ্ডিগুলি থেকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দিশেহারা করে দেওয়া হল৷ তিনি ঠাট্টার ফোনকলটি ডাচেস অফ কেম্ব্রিজ যে বিভাগে রয়েছেন, সেখানে ট্রান্সফার করে দিলেন৷ এতে যে দোষ কিংবা লজ্জার কিছু নেই, আর যদি থেকেও থাকে তবে সেটা তাঁর নয়, সেলেব্রিটি পাগল, প্রচারলুব্ধ, মিডিয়া-পরিচালিত আধুনিক পৃথিবীর – জাসিন্থাকে সে'কথা বলে দেবার মতো কিছু লোক অন্তত থাকা উচিত ছিল৷
জাসিন্থার ট্র্যাজেডির পর এখন হাওয়া ঘুরেছে৷ ফেসবুক, টুইটারে হেইট-মেইলের ঝড় বয়ে যাওয়ার পর টুডেএফএম রেডিও'র অবস্থা এখন কাহিল: শেয়ারের দর পড়েছে পাঁচ শতাংশ, বড় বড় বিজ্ঞাপনদাতারা নিজেদের নাম কাটাচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়ার বেতার-টেলিভিশন সংক্রান্ত কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছেন৷
অন্যরা চিন্তায় পড়েছেন এই পুরো ঘটনাচক্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে৷ সোশ্যাল মিডিয়া মতপ্রকাশের অভূতপূর্ব স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, এ'কথা ঠিক৷ কিন্তু সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার বন্ধ করার পন্থা কি? আরো বড় কথা, সেই সোশাল মিডিয়া যখন বোতলের ভূতের মতো দৈত্যাকারে বেরিয়ে এসে ঠিক সেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কোনো অংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তবে তাকেই বা ঠেকা দেয় কে?
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি, এপি)