1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিজ কথা বলতে শুরু করলেন নারী

৮ মার্চ ২০১৮

নারীরা নিজেদের কথা বলতে শুরু করেছেন৷ কিন্তু এখনো অনেক পথ চলার বাকি৷ অধিকারের লড়াই আরো তীব্র করতে হবে৷ সাক্ষাৎকারে জানালেন জাতিসংঘের নারী বিষয়ক বিভাগের প্রধান৷

https://p.dw.com/p/2tw0U
জাতিসংঘের নারী বিষয়ক বিভাগের প্রধান ফুমজিলা ম্লামবো নকুকাছবি: AFP/Getty Images

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ কিন্তু একুশ শতকে দাঁড়িয়ে বিশ্ব জুড়ে আদৌ কি খুব ভালো আছেন নারীরা? প্রশ্নটা উঠেছে এবং উঠছে বিভিন্ন কোণ থেকে৷ কার্যত সমস্ত নারীর সেই স্বরই শোনা গেল জাতিসংঘের নারী বিষয়ক বিভাগের প্রধান ফুমজিলা ম্লামবো নকুকার ভাষ্যে৷ সংবাদসংস্থা এপি'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আনন্দের কথা যে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীরা তাঁদের হেনস্থার কথা জানাচ্ছেন৷ আর মুখ বুঁজে থাকছেন না সকলে৷ কিন্তু সেই সংখ্যাটি হিমশৈলের শিখর মাত্র৷ এখনো অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ পাচ্ছে না৷ তা প্রকাশ পেলে সমস্যাটির ভয়াবহতা আরো স্পষ্ট হবে৷

Infografik Karte Most dangerous megacities for women ENG

তবে নকুকা আশাবাদী৷ তাঁর মতে, আগামী দিনে আরো বেশি নারী তাঁদের হেনস্থার শিকার হওয়ার কথা সামনে আনবেন৷ বিচার চাইবেন৷ দোষীদের সমাজের সামনে তুলে ধরবেন৷ শুধু তাই নয়, অভিযুক্তরাও দ্বিতীয়বার এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর আগে দু'বার ভাববে৷ আগে তাদের ধারণা ছিল, দোষ করলেও মেয়েরা কিছু বলেন না৷ তাঁরা সমস্ত যন্ত্রণা মুখ বুঁজে সহ্য করে নেন৷ সমাজকে তাঁরা ভয় পান৷ কিন্তু আস্তে আস্তে মেয়েরা সমাজের সামনে সব কথা জানানো শুরু করায়, দোষীরা শঙ্কিত৷

নকুকার কথায়, পেন্ডুলাম এতদিন স্থির ছিল৷ এবার তা দুলতে শুরু করেছে৷ জাতিসংঘের দেখা উচিত, যাতে সেই পেন্ডুলাম আবার পিছন দিকে চলে না যায়৷ শুধু জাতিসংঘ নয়, বিশ্বের সব সংগঠনেরই একযোগে কাজ করার সময় এসেছে৷ মেয়েদের বোঝাতে হবে তাঁদের অধিকার৷ সমাজের কাছে নারী অধিকারের জন্য লাগাতার দাবি জানাতে হবে৷ দাবিগুলি আদায় করে নিতে হবে৷ নারীদের জানাতে হবে, মানসিক, শারীরিক বা অন্য যে কোনো রকম হেনস্থার শিকার হলে কীভাবে তাঁরা সে কথা জানাবেন৷ অভিযোগ দায়ের করবেন৷

Infografik Weibliche Präsidentinnen weltweit female heads of government ENG

সম্প্রতি হলিউডের এক বিখ্যাত প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল৷ নিজেদের হেনস্থার কথা জানিয়েছিলেন নারীরা৷ একযোগে সেই ঘটনার নিন্দা করেছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীরা৷ অস্কার থেকে বার্লিনালে, গোল্ডেন গ্লোব থেকে গ্র্যামি সর্বত্র যৌন নিগ্রহের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে৷ সরাসরি ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন অনেকেই৷ নকুকার মতে, এটা ভালো লক্ষণ৷ কিন্তু যৌন নিগ্রহ শুধু হলিউডেই হচ্ছে না, ট্রামে-বাসে-ট্রেনে-কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন দুনিয়া জুড়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ সকলকে মুখ খুলতে হবে৷ তাহলেই এর বিরুদ্ধে সত্যিকারের আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে৷

আইনের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন নকুকা৷ তাঁর বক্তব্য, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এখনো বিভিন্ন আইনে নারী অধিকারবিরোধী ধারা আছে৷ এখনো বিভিন্ন দেশে নারীদের প্রতি অবিচারের শাস্তি নেই৷ এ সমস্ত আইনের বদলের জন্য লাগাতার আন্দোলন হওয়া দরকার৷ শুধু তাই নয়, এখনো বিভিন্ন দেশে পুরুষের সমান কাজ করলেও নারীদের কম বেতন দেওয়া হয়৷ নারীদের প্রতি কম সম্মান দেখানো হয়৷ যতদিন এই অসাম্য থাকবে, ততদিন নারীদের তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাবে না৷

যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়

সমীক্ষা বলছে, আইসল্যান্ডে নারী অধিকার সবচেয়ে বেশি রক্ষিত হয়৷ কিন্তু নকুকার মতে, সেখানেও এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ নারী স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি৷ এখনো সেখানে পারিবারিক হিংসা, নারীদের প্রতি অসম্মানের ঘটনা ঘটছে৷

নারী দিবসকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানারকম আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ কিছুদিন আগেই লন্ডনে বিশাল মিছিল হয়৷ নারী স্বাধীনতার দাবিতে লন্ডনের রাস্তা স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন অগণিত মহিলা৷ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ‘মি টু’ আন্দোলন পৌঁছে দিয়েছেন জার্মানির প্রতিনিধি টেরি রিয়েন্টকে৷ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি একটি পিটিশন বা অভিযোগ পত্র তুলে দিতে চেয়েছিলেন৷ সেখানে বিশ্বের ১লক্ষ ১৮ হাজার নারীর সই রয়েছে৷ সকলেই নানাবিধ হেনস্থার শিকার৷ টেরি চেয়েছিলেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বিষয়টিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিক৷ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে সহানুভূতির চোখে দেখলেও পিটিশনটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন৷ কিন্তু টেরি থেমে থাকেননি৷ বিষয়টির প্রতিবাদ করেছেন এবং ‘মি টু' আন্দোলনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের মতো করে একটি সংগঠন তৈরি করতে শুরু করেছেন৷

এক সময় মনে করা হতো, নারীরা নিজেদের হেনস্থার কথা প্রকাশ্যে বলতে লজ্জা পান৷ নিজেদের অধিকারের কথা তাঁরা বলেন না৷ সময় বদলাচ্ছে৷ মেয়েরা নিজেদের কথা বলতে শুরু করেছেন৷ অধিকারের লড়াইও তীব্র হচ্ছে৷

এসজি/এসিবি (এপি/গার্ডিয়ান/রয়টার্স)