1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীদের তুলনায় পুরুষদের ফ্লু হয় বেশি

৬ অক্টোবর ২০২০

অনেক গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীদের তুলনায় পুরুষরাই আরো জোরালো মাত্রায় করোনা ভাইরাসের শিকার হচ্ছে৷ রোগ প্রতিরোধ ও ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে সত্যি কিছু পার্থক্য রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷

https://p.dw.com/p/3jUCC
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose

জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ পুরুষরাই হুমকির মুখে থাকে৷ শীতকালে নারীরা সর্দিকাশিতে ভুগলেও ফ্লু মূলত পুরুষদেরই কাবু করে৷ এ ক্ষেত্রে পুরুষরা নারীদের মতো কেন শক্তসমর্থ নয়?

প্রফেসর গ্যুন্টার ভাইসের মতো রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন যে, সংক্রমণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ অনুযায়ী একটা পার্থক্য দেখা যায়৷ প্রো. ভাইস বলেন, ‘‘এর পেছনের কারণ সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ পুরুষ ও নারীর ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে সামান্য কিছু তফাত রয়েছে বলে মনে হয়৷ পুরুষের ইমিউন সিস্টেম নারীদের তুলনায় কিছুটা দুর্বল এবং সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষেত্রে কম কার্যকর৷’’

হরমোনও এই পার্থক্যের কারণ বটে৷ নারীদের শরীরে অনেক এস্ট্রোজেন থাকে৷ ফলে প্রতিরোধক কোষ দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ সে কারণে পুরুষের তুলনায় কোনো নারীর শরীরে আরও দ্রুত ও আক্রমণাত্মকভাবে ভাইরাসের মোকাবিলা করা হয়৷ পুরুষদের শরীরে অনেক টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে৷ পুরুষ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ফ্রাংক সমার বলেন, ‘‘নারীদের তুলনায় পুরুষের রক্তে অনেক বেশি টেস্টোস্টেরন থাকে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যে ইমিউন সিস্টেমের উপর টেস্টোস্টেরনের প্রভাব রয়েছে৷ কিছু গবেষণা অনুযায়ী এই হরমোনের কারণেই পুরুষদের আরও ঘনঘন ফ্লু হয়৷’’

এর ফলে ধারণা হতে পারে, যে টেস্টোস্টেরনের উচ্চ মাত্রাসম্পন্ন পুরুষদেরই ফ্লু হবার আশঙ্কা বেশি৷ বাস্তবে কিন্তু এর বিপরীতটাই দেখা যায়৷ প্রফেসর সমার বলেন, ‘‘যে পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি, সে বিপাকীয় ক্রিয়ার মাধ্যমে সেই হরমোনকে এস্ট্রাডিয়লে পরিণত করে, যা নারীর হরমোন হিসেবেই পরিচিত৷ ফলে ইমিউন সিস্টেমের উপর তার ইচিবাচক প্রভাব পড়ে৷ অর্থাৎ উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরন থাকলে সংক্রমণ থেকে ভালো সুরক্ষা পাওয়া যায়৷ নিম্ন মাত্রার টেস্টোস্টেরন-সম্পন্ন মানুষের তুলনায় তার রোগব্যাধী কম হয়৷’’

জিনের কারণেও পুরুষের আরেকটি অসুবিধা রয়েছে৷ কারণ ক্রোমোজোমের পার্থক্যও ইমিইউন সিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলে৷ প্রফেসর ফ্রাংক সমার বলেন, ‘‘সেই অংশে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ এবং রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া কোডের মাধ্যমে স্থির করা রয়েছে৷ অর্থাৎ পুরুষদের ক্ষেত্রে ওয়াই ক্রোমোজোমের মধ্যে তার অভাব রয়েছে৷ ফলে সে কারণেও আমদের সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি৷’’

মোটকথা হরমোন ও জিনের কারণে পুরুষরা আরও দ্রুত রোগে আক্রান্ত হয়৷ কিন্তু রোগের ধাক্কাও কি নারীদের তুলনায় বেশি হয়? বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী বাস্তবে এর বিপরীতটাই ঘটে৷ নারীরা সম্ভবত আরও গুরুতরভাবে রোগে আক্রান্ত হয়৷ ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. অলিভার ভ্যারৎস বলেন, ‘‘পুরুষ ও নারীদের ব্যথার অনুভূতি সংক্রান্ত অসংখ্যা গবেষণা রয়েছে৷ দেখা গেছে, নারীরা আরও বেশি ব্যথাবেদনা অনুভব করে৷’’

তাছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জোরালো ক্ষমতা আখেরে শরীরের উপর বিশাল ধকল সৃষ্টি করে৷ সেই ক্ষমতা স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে এমনকি রোগের উপসর্গ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে৷

পুরুষরা নারীদের তুলনায় আরও মনোনিবেশ করায় তাদের ব্যথাবেদনার অনুভূতি আরও পুঞ্জিভূত হয়৷ সর্দিকাশি হলে গলা খুশখুশের প্রতিটি ঘটনার দিকে তাদের পূর্ণ মনোযোগ চলে যায়৷

পুরুষদের ঘনঘন সংক্রমণের আরো একটি কারণ রয়েছে৷ নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক কম হাত ধোয়৷ অথচ নারীপুরুষ নির্বিশেষে হাত ধোয়ার অভ্যাস ভাইরাস মোকাবিলার সেরা উপায়৷

উলরিকে হেলমেস/এসবি