নারী পুতুলের মাথা কাটার নির্দেশ তালেবানের
পোশাকের দোকানে ‘মডেল পতুল’ নারী হলে, সেগুলোরও মাথা থাকা চলবে না৷ আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে দোকান মালিকদের এমন নির্দেশ দিয়েছে তালেবান৷ তাদের দাবি, মানুষের আকৃতি নকল করে তৈরি এসব পুতুল ‘অনৈসলামিক’৷
নারীর পুতুলের মাথা কাটো
আফগানিস্তানে সমস্ত দোকানদারকে নারী পুতুলের মাথা তাটার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। তালেবানের যুক্তি- এসব পুতুল ইসলামী আইনের পরিপন্থি। হেরাতের এক দোকানদারের পুতুলের ‘শিরশ্ছেদ’ করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ এ নিয়ে একদিকে যেমন ব্যাপক সমালোচনা চলছে, দেশের ভেতরে ও বাইরে অনেকে নানারকম হাসি-তামাশাও করছেন৷
নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা
আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবান নানা ক্ষেত্রেই ‘ইসলামি আইনের’ প্রয়োগ করছে। মানুষের স্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে নারীদের ওপর অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যদিও কট্টরপন্থি ইসলামিক গোষ্ঠীটি এখনও ভাস্কর্য বা পুতুলের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক জাতীয় নীতি বা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেনি, তবে দেশের অনেক অঞ্চলে এসবকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয়ভাবে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে৷
স্কার্ফ দিয়ে ঢাকলেও চলবে না
হেরাত প্রদেশের নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান আজিজ রহমান বুধবার এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই আদেশ আসার পর কিছু দোকানদার স্কার্ফ বা ব্যাগ দিয়ে পুতুলের মাথা ঢেকে রেখেছিলেন। কিন্তু তাদের হুঁশিয়ার করে রহমান বলেন, "যদি তারা শুধুমাত্র তাদের মাথা ঢেকে রাখে বা পুতুল লুকিয়ে রাখে, তাহলে আল্লাহ তাদের দোকান বা ঘরে প্রবেশ করবেন না এবং তাদের বরকত দেবেন না।"
ক্ষুব্ধ কাপড় বিক্রেতারা
ছয় লাখ জনসংখ্যার এই শহরের অনেক দোকানদারই এই আদেশে ক্ষুব্ধ। বশির আহমেদ নামে একজন পোশাক বিক্রেতা বলেন, "আপনি দেখতে পাচ্ছেন, আমরা মাথা কেটে ফেলেছি৷" তিনি জানান, একেকটি ডামির দাম প্রায় সাড়ে তিন হাজার আফগানি। বশির বলেন, "যখন পুতুলই নেই, তখন আমরা কীভাবে আমাদের পণ্য বিক্রি করবো? যখন পুতুলটিকে কাপড় দিয়ে সাজানো হয়, তখনই কেবল গ্রাহক এটি পছন্দ করার মতো কিনা বুঝতে পারেন।"
ফিরে আসছে কঠোর আইন
২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট আবার ক্ষমতায় আসার পর আগের (১৯৯৬-২০০১) মতো কঠোর আইন প্রয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান৷ আগের শাসনামলেও মানুষের মতো দেখতে যে-কোনো অবয়ব নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান৷ অনেকেই ধারণা করছেন, ধীরে ধীরে আবারও সেদিকেই যাচ্ছে গোষ্ঠীটি৷ স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন বিধিনিষেধে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া, পুরুষদের দাড়ি বড় করা এবং পশ্চিমা পোশাক না পরার ব্যাপারেও উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
অধিকাংশ বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ
নতুন নানা বিধিনিষেধে এরই মধ্য়ে নারীরা বিপত্তিতে পড়েছেন। অধিকাংশ বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সরকারি চাকরিতে নারীদের যোগদানে বাধা দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে একটি নতুন আদেশে দীর্ঘ যাত্রায় নারীদের একা যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে তাদের কোনো না কোনো পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গে যেতে হবে।
মদ ও গানের বিরুদ্ধে অভিযান
মদ বিক্রি বন্ধে অভিযান জোরদার করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে গানও। আফগানিস্তানে এরই মধ্যে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি আরো চাপের মুখে পড়েছে৷ কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাহায্য বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ আফগানিস্তানকে দেওয়া বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সাহায্যও বন্ধ হয়ে গেছে।