নামিব মরুভূমিতে যাদের বাস
দিনের বেলা সূর্যের জ্বলন্ত আগুন, রাতে ঠিক সেইরকম ঠান্ডা, ওদিকে পানির চিহ্নমাত্র নেই: এমন দেশে মানুষ তো দূরের কথা, প্রাণীরা বাঁচে কী করে? প্রকৃতিই তার সমাধান জুটিয়ে দিয়েছে৷
নামই যাদের উটপাখি
তারা যে মরুভূমিতে বাস করতে পারবে, সে তো জানাই কথা৷ উটপাখিরা উড়তে পারে না বটে, কিন্তু দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে স্বেদ কমাতে পারে, যার ফলে শরীর থেকে কম পানি ক্ষয় হয়৷ অন্যদিকে উটপাখিদের পানি খাবার দরকার পড়ে না; ঘাসপাতা যা খায়, তা থেকেই যথেষ্ট পানি পায়৷
জ্বর হলে আর গরম লাগবে কেন?
গেম্সবক আসলে একটি অরিক্স জাতীয় হরিণ৷ গরমের দিনে এরা শরীরের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১১৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি বাড়াতে পারে৷ তাতেও এদের কিছু হয় না, কারণ এদের নাকে বহু ছোট ছোট শিরা-উপশিরা আছে, যেগুলো এদের রক্তকে ঠান্ডা রাখে৷ এদের শরীরের নীচের দিকটা সাদা, যার ফলে মাটির তাপ প্রতিফলিত হয়৷ এরা পানি পায় মরুভূমির শেকড়-বাকড় ও সামা নামের এক ধরনের তরমুজ থেকে৷
বহুরূপী হওয়ার সুবিধে
নামাকোয়া গিরগিটিরা রং বদলাতে পারে; কাজেই ভোরের ঠান্ডায় তাদের রং কালো হলেও, রোদ আর গরম যত বাড়ে, ততই তাদের রং হালকা হয়ে পড়ে, কেননা হালকা রং সূর্যের আলো বেশি প্রতিফলন করতে পারে৷ ভরদুপুর বেলা মরুভূমির বালি যখন তেতে আগুন হয়ে থাকে, তখন নামাকোয়া গিরগিটিরা ছোট-বড় পাথর কিংবা ঝোপে-ঝাড়ে বসে বালি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে৷
লম্বা ঠ্যাংও কাজে লাগে
নামিব মরুভূমির পিঁপড়েদের পা প্রায় পাঁচ মিলিমিটার লম্বা৷ এই লম্বা ঠ্যাঙের ফলে পিঁপড়েদের শরীর যে উচ্চতায় থাকে, সেখানকার তাপমাত্রা বালি থেকে প্রায় ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম৷
মরুভূমিতে গরম? গর্তের মধ্যে থাকলেই পারো...
নামিব স্যান্ড গেকো বা বালিয়াড়ির টিকটিকি বালিতে গর্ত করে দিনেরবেলা তার মধ্যে থাকে, বেরোয় শুধু রাতে৷ পায়ের আঙুলগুলো জোড়া, কাজেই বালি সরাতে কোদালের মতো কাজ করে৷ চোখগুলো বড় বড়, যাতে রাতে শিকার ধরতে পারে৷ গায়ের চামড়া এত স্বচ্ছ যে, ভিতরে দেহযন্ত্রের কিছু কিছু অংশ দেখা যায়৷ সব মিলিয়ে গায়ের রংটা মরুভূমির বালির সঙ্গে মেলে – যা কিনা গা ঢাকা দিতে ভালো৷
শাঁকচুন্নি
ইংরেজি নাম ড্যান্সিং হোয়াইট লেডি স্পাইডার, ল্যাটিন নাম লয়করকেস্ট্রিস আরেনিকোলা, আমরা নামিব মরুভূমির ভুতুড়ে মাকড়শা বলতে পারি৷ এরা গরম পছন্দ করে না, তাই বালির দেড় হাত নীচে বালি আর নিজের লালা মিশিয়ে বাসা তৈরি করে দিনের বেলাটা সেখানেই কাটায়৷ রোদ্দুরে বেরোয় না বলে এদের গায়ের রং ফ্যাকাশে৷
নামিব বালিয়াড়ির কাঁকড়া বিছে
ইংরেজি নাম নামিব ডিউন স্কর্পিয়ন৷ এদের মেটাবলিজম বা বিপাকের প্রক্রিয়া এতই মন্থর যে, এরা মাসের পর মাস না খেয়ে থাকতে পারে৷ এদের শরীরের অক্সিজেন পরিবহণ প্রণালীও মানুষের থেকে স্বতন্ত্র – তাই এদের গরম লাগে না৷ বালির তিন মিটার নীচে গর্ত করে বাস করে, কাজেই গরম কোথা?
বালিতে সাঁতার
নামিবের বালিয়াড়ির বালি এতোই মিহি যে ‘কোদালে নাক টিকটিকি’ সেই বালিতে সাঁতার দিতে পারে৷ গর্ত খোঁড়ারও দরকার হয় না, কেননা এই জীবটির নাকটাই কোদালের আকারের৷ বালিতে সাঁতার দেয় বলে এর নাকের ফুটোগুলো পিছন দিকে করে বসানো; তায় আবার সেগুলোয় এক ধরনের ঢাকনা লাগানো আছে, যাতে তাড়াহুড়োতে নাকে বালি না ঢোকে৷
কুয়াশা খেকো পোকা
‘ফগ বাস্কিং বিটল’-এর একটি বিশেষত্ব হলো, তার পানি খাওয়া৷ ভোরবেলা বালিয়াড়ির উপর উঠে শীর্ষাসন করে দাঁড়ায়৷ ভোরের কুয়াশার বাষ্প জমে পানি হয়ে, সেই পানি এই পোকার পীঠ বেয়ে তার মুখে এসে পড়ে৷ কুয়াশা খেকো পোকা এভাবে একটি সকালে তার নিজের ওজনের ৪০ শতাংশ পানি সংগ্রহ করতে পারে৷