নানা ধর্মে ধর্মীয় আচারে প্রথাভাঙা নারীরা
অনুসারীর সংখ্যায় এগিয়ে থাকা সবগুলো ধর্মেই প্রথা অনুযায়ী নারীরা উপাসনালয় বা ধর্মীয় আচারে নেতৃত্ব দিতে পারেন না৷ তবে সমান অধিকারের দাবিতে সেই প্রথা ভাঙার অনেক উদাহরণও আছে৷
স্বীকৃতি না মিললেও পাদ্রি
চার্চে নারীরা পাদ্রিদের সহযোগী হিসেবে কিছু দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি পেলেও পাদ্রি হওয়ার অনুমতি নেই৷ তবে অনেক দেশের নারীরা ভ্যাটিকানের এই নিয়ম মানতে রাজি নন৷ তারাও দীক্ষা নিয়ে চার্চ প্রধান হতে চান৷ সেই সুযোগ করে দিচ্ছে রোমান ক্যাথলিক উইমেন প্রিস্টস অর্গ্যানাইজেশন৷ ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের অধীনে ২০৫ জন নারী পাদ্রি আছেন৷ তারা স্বাধীনভাবে পরিচালিত বিভিন্ন চার্চে দায়িত্ব পালন করছেন৷
মসজিদেও ব্যতিক্রমী চিত্র
কিছু দেশে পুরুষদের ইমামতিতে নারীরা আলাদাভাবে জামাতে অংশ নিতে পারেন৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে তাদের ইমামতির অনুমতি নেই৷ তবে ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কিছু দেশে নারী ইমামের নেতৃত্বে নারী মুসল্লিদের নামায পড়ার নজির আছে৷ ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৬০ জন নারী-পুরুষ ফ্রান্সের একটি মসজিদে দুই নারীর ইমামতিতে জামাতে অংশ নেয়ার খবর আসে রেডিও ফ্রান্সে৷ (ছবি: ফ্রান্সের ইমাম কাহিনা বাহলুল)
বার্লিনের নারী ইমাম সাইরান আতিস
আরো ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছেন সাইরান আতিস৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত এই জার্মান প্রশিক্ষণ নিয়ে বার্লিনের ইবনে রুশদগ্যোটে মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ২০১৭ সালে আতিস নিজেই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেখানে যেকোনো ধর্মের মানুষেরই প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং নারী-পুরুষ একসঙ্গেই প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন৷ আতিস ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের মসজিদে কাউকে নিকাব বা বোরকা পরে আসতে হবে না৷’’
ইতিহাস বদলানো দুই নারী
ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু ধর্মে ঋতুমতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়৷ ২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এর বিরুদ্ধে রায় দেয়৷ এরপর ঋতুমতী অবস্থায় কেরালার শবরীমালার ‘আয়াপ্পা’ মন্দিরে প্রবেশ করে ইতিহাস গড়েন দুই নারী৷ ঘটনাটি ভারতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে৷ রক্ষণশীল হিন্দুরা ঋতুমতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পুনর্বহাল চাইলে সুপ্রিম কোর্ট নতুন আইন তৈরির কথা জানায়৷
রীতি ভেঙে পৌরোহিত্যে
প্রথা অনুযায়ী হিন্দুদের পূজা বা বিয়েতে নারীরা পুরোহিত হতে পারেন না৷ তবে এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির শিক্ষক নন্দিনী ভৌমিক পুরোহিত হিসেবে একাধিক বিয়ে পড়িয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন৷ মহারাষ্ট্রেও একটি পুরোহিত পাঠশালা নারীদের পৌরোহিত্যের দীক্ষা দিয়ে আসছে৷ দু'জন হিন্দু বিধবাকে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের একটা মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল ২০১৬ সালে৷
মিয়ানমারে এক নারী ভিক্ষুর লড়াই
মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-র্পূব এশিয়ার দেশগুলোতে নারী ভিক্ষুরা পুরুষের সমান মর্যাদা পান না৷ অনেক বৌদ্ধ স্থাপনায় তাদের প্রবেশ নিষেধ৷ এমনকি বসা যায় না পুরষ ভিক্ষুদের সামনেও৷ মিয়ানমারে এই পরিস্থিতি বদলাতে চান কেতুমালা৷ সমঅধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ফাউন্ডেশন৷ এই সংস্থাটির ৪,৮০০ টি বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে৷ নারী ভিক্ষুদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চালু করেন তিনি৷