1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসামে বাঙালিদের আলাদাভাবে চিহ্নিতকরণ?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৭ জুন ২০১৮

ভারতীয় নাগরিকত্ব যাচাই করে তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় রেজিস্টার অফ সিটিজন৷ চূড়ান্ত হবে ৩০শে জুন৷ প্রক্রিয়া চলেছে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে৷ এতে আসামে হিন্দু-মুসলিম বাঙালি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/30MPA
Indien Bangladesch Fahne Flagge
ছবি: Getty Images/G. Crouch

সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আসাম বা অসমে ভারতীয় নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে গত বছর দুই ধরে৷ লক্ষ্য, প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা, বিশেষ করে যাঁরা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পর এসেছে৷ ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজন (এনআরসি) দিন দুয়েক আগে এর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এই তালিকা থেকে বাদ গেছে প্রায় ৭০ লাখ বাংলাভাষী অধিবাসী৷ এই ৭০ লাখের মধ্যে ২৫ লাখ বাঙালি হিন্দু এবং বাকিটা বাঙালি মুসলিম৷ এই তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী ৩০শে জুন৷ এই প্রক্রিয়ার নিয়মবিধি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে আসামের সংখ্যালঘু বাঙ্গালি সম্প্রদায়৷ তাদের অভিযোগ এনআরসি দরকার মতো তাদের নিয়মবিধি পরিবর্তন করেছে৷ এর ফলে মুসকিলে পড়বে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়, বলেছেন সর্ব ভারতীয় সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম৷

‘আসাম সরকার নানাভাবে এর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে’

ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তরে উনি বললেন, আমরা একটা জিনিস দেখছি, এনআরসি-এর জন্য যেসব জিনিস লাগে তার একটা হলো ২০০৩ সালের সিটিজেনশিপ রুল৷ আসামের সংশ্লষ্ট সব রাজনৈতিক, অ-রাজনৈতিক, সাহিত্য ও সাংস্কতিক তিক সংগঠনগুলি মিলিতভাবে একটা মডেল রুল তৈরি করে, যেটা পাশ হয় রাজ্য বিধানসভায়৷ অনুমোদন করে এনআরসি এবং সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু এখন দেখছি আসাম সরকার নানাভাবে এর ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে৷ যেমন ধরুন ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল থেকে ৩০শে জুনের আগে সেইসব নিয়মে ক্রমাগত পরিবর্তন করা হচ্ছে৷ নতুন করে জারি করা হয়েছে অনেক বিজ্ঞপ্তি৷ অন্যদিকে দেখুন, সুপ্রিম বলেছেন, এনআরসি-এর তালিকায় ডি-ভোটার আসবে না৷ ডি-ভোটার মানে যাঁদের নাগরিকত্ব সন্দেহজনক এক কথায় বিদেশি৷ অথচ এনআরসি-এর ডি-ভোটার তালিকায় তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ কথা হচ্ছে, বিদেশি বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটা প্রমাণিত হয়নি৷ তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে কেন? আসামে তথাকথিত সন্দেহভাজন বিদেশির সংখ্যা প্রায় ৯২ হাজার৷ এদের মধ্যে ৫৩ হাজারকে তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগও দেওয়া হয়নি, মানে কোনো নোটিফিকেশন দেওয়া হয়নি৷ কাজেই তাঁরা যে বিদেশি সেটা প্রমাণিত হয়নি, ডয়চে ভেলেকে তাঁর নিজস্ব অভিমত জানালেন, নিখিল ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম৷

একই আশঙ্কা কথা জানালেন শিলচর-ভিত্তিক হিন্দু লিগ্যাল সেলের ধর্মানন্দ দেব৷ ১৯৭৯ সালে আমরাই হয়েছিলাম প্রধান নিশানা, যখন আমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে আঙুল তোলা হয়৷ তকমা দেওয়া হয় ডি-ভোটার, অর্থাৎ ডাউটফুল ভোটার৷ প্রায় ৯০ শতাংশ ডি-ভোটা বাঙালি হিন্দু৷ আসামে ২৮ শতাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষাভাষি৷ বেশির ভাগটা থাকে বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায়৷ মূল যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তাহলে কেন এই বিভাজন? কেন আলাদাভাবে বাংলাভাষীদের চিহ্নিতকরণ? এর উদ্দেশ্যটাই বা কী?

এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে গঠন করা হয়েছে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি (সিআরপিসিসিএ)৷ এনআরসি-এর গূঢ় অভিসন্ধি তুলে ধরাই এই সংগঠনের লক্ষ্য৷ কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে আসামের ২৮ শতাংশ বাঙালি পড়বে বিপাকে৷ এটা ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সর্ব আসাম ছাত্র ইউনিয়নের উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য৷ রাজ্যের কংগ্রেস নেতা অরুনাভ ঘোষ মনে করেন, এতে আসামের বাঙালিদের উদ্বেগ বাড়বে৷ বাঙালি প্রেশার গ্রুপের সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, আসামকে একটা গবেষণাগার করে তাতে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে এনআরসি৷ এরপর সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে তা প্রয়োগ করা হবে৷ ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজনকে থামানো দরকার৷ তবে যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটা চলছে দেশের শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে৷ তাই কেউ নাক গলাতে সাহস পাবে না৷

এর বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আসামের সবথেকে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন আসু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠাতে আন্দোলন শুরু করে৷ একটা ভীতির মানসিকতায় মনে করা হয়, এই অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশে আসামের নিজস্ব স্বতন্দ্র পরিচয় বিঘ্নিত হবে৷ আন্দোলন শেষ হয় আসাম চুক্তিতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য