গণহত্যাকারীর বাবার অনুতাপ
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪২০১১ সালে ব্রাইভিক নিজেকে বলত ‘‘জঙ্গি জাতীয়তাবাদী''৷ সে নাকি ইউরোপ থেকে সব মুসলিমকে বিতাড়ন করবে৷ নরওয়ের সরকারি নীতি ও সমাজের প্রতি নিজের প্রতিবাদ ব্যক্ত করার এক ভয়াবহ পন্থা বেছে নেয় ব্রাইভিক: প্রথমে রাজধানী অসলোর মন্ত্রণালয় এলাকায় একটি শক্তিশালী গাড়ি বোমা ফাটায় – যে বিস্ফোরণে আটজন মানুষ প্রাণ হারায়; তারপর সে উটোইয়া দ্বীপে গিয়ে একটি সামার ক্যাম্পের জন্য আগত কিশোর-কিশোরীদের দিকে গুলি চালিয়ে তাদের ৬৯ জনকে হত্যা করে৷ সামার ক্যাম্পের উদ্যোক্তা ছিল একটি বাম-ঘেঁষা যুব সংগঠন৷
তারপর ব্রাইভিকের বিচার হয়েছে এবং তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, যে দণ্ড শেষ হলেও তার মুক্তি পাবার সম্ভাবনা কম৷ ব্রাইভিক কিন্তু গত মাসে মিডিয়ার কাছে একাধিক চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, সে তার সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করেছে এবং গণতন্ত্রে তার আস্থা ফিরে পেয়েছে৷ এর কারণ: গ্রিসে নাৎসি-অনুপ্রাণিত গোল্ডেন ডন দলটির নির্বাচনি সাফল্য৷ ব্রাইভিক নিজেও নাকি কারাগার থেকেই তার নিজের ফ্যাসিস্ট দল গঠন করতে চায়৷ এপি সংবাদ সংস্থাকে পাঠানো ১৮ই আগস্টের একটি চিঠিতে ব্রাইভিক তার নিজের ‘‘বর্বরতার'' জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে – অপরদিকে বলেছে যে, তার প্রধান দুঃখ এ জন্য যে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামেও বর্বরতা কাজে লাগে৷
খুনি ছেলে
আন্ডার্স ব্রাইভিকের বাবা ইয়েন্স ব্রাইভিক একজন নরওয়েজীয় কূটনীতিক৷ তিনি পরে অপর একটি বিবাহ করে ফ্রান্সে অভিবাসী হন৷ ব্রাইভিক অসলোয় মা-র কাছে মানুষ হয়৷ বাবার সঙ্গে বছরে বার দুই-তিন দেখা হতো বটে, কিন্তু তার ১৬ বছর বয়স হবার পর থেকে সেই সংযোগসূত্রটুকুও বিচ্ছিন্ন হয়৷ তবে ইয়েন্স ব্রাইভিকের পক্ষে এটুকু বলা চলতে পারে যে, বিবাহবিচ্ছেদের সময় তিনি ব্রাইভিকের দেখাশোনার ভার পেতে চেয়েছিলেন এবং আদালতেও গেছিলেন৷ আজও তাঁর মনে হয়, তাঁর যদি ব্রাইভিকের সঙ্গে আরো যোগাযোগ থাকত, তিনি যদি ‘‘আরো ভালো বাবা হতেন'', তাহলে ব্রাইভিক হয়ত একটা অন্য মানুষ হতো৷
এমনকি ইয়েন্স সম্প্রতি অসলোর কারাগারে ছেলের সঙ্গে দেখা করার কথাও ভেবেছেন, কিন্তু ছেলে তাঁকে চিঠি মারফত জানিয়েছে যে, প্রথমে ইয়েন্সকে ফ্যাসিস্ট মতবাদে বিশ্বাসী হতে হবে৷ চিঠির ধরণ দেখে নাকি ইয়েন্সের ভয় লেগেছে৷ ব্রাইভিক জেলে আরো উগ্রপন্থি, আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে: তাঁর নিজের সন্তান যে কী করে গণহত্যাকারী হয়ে উঠতে পারে, সেটা ইয়েন্সের কাছে আজও অবোধ্য৷
এসি/ডিজি (এপি)