1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নদীতে ফেলে দেয়ার পরও বাঁচার চেষ্টা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ জুলাই ২০১৮

নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে নদীতে ফেলে দেয়ার সময়ও তিনি বেঁচে ছিলেন৷ তাঁর পেটে পানি প্রমাণ করে নদীতে ফেলে দেয়ার পরও তিনি বাঁচার অনেক চেষ্টা করেন৷ শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করায় মুখ দিয়ে পানি ঢোকে৷

https://p.dw.com/p/32F3f
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/Simicek

ফরেনসিক এক্সপার্ট এবং মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ এসব কথা জানান ডয়চে ভেলেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘কতটা অমানুষ হলে এই কাজ করতে পারে আমি তা ভেবে পাইনা৷''

পায়েলের পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামে থাকেন৷ তাদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপ৷ পায়েল নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ গত ২১ জুলাই রাতে পায়েল ও তাঁর দুই বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-৯৬৮৭) ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন৷ এরপর গত ২৩ জুলাই সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ 

‘‘যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্মচারীদের নির্মম আচরণ নতুন নয়''

২৪ জুলাই হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পরদিন ২৬ জুলাই সুপারভাইজার জনি ও হেলপার ফয়সাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়৷ আর তাদের জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের কথা৷

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপারভাইজার জনি হেলপার ফয়সাল জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে৷ বাসের ড্রাইভার জামালের রিমান্ডের আবেদন করেছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘ওই দু'জন জবানবন্দিতে জানিয়েছে, রবিবার (২১ জুলাই) দিনগত রাত ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর ব্রিজের কাছে যানজটে পড়ে বাস৷ এ সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাস থেকে নীচে নামেন পায়েল৷ এরমধ্যেই যানজট কিছুটা কমলে বাস এগোতে থাকে৷ পায়েল দৌড়ে এসে বাসে উঠতে গিয়ে বাসের দরজার সাথে ধাক্কা লেগে নাকেমুখে আঘাত পান৷ রাস্তায় পড়ে গিয়ে আবারো আঘাত পাণ৷ তাঁর নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হয়ে যায়৷ তখন সুপারভাইজার মনে করে তিনি মরে গেছেন৷

‘‘বাসের সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন৷ সুপারভাইজার ড্রাইভারকে একথা জানায়৷ বলে, ওস্তাদ মনে হয় মরে গেছে৷ নড়াচড়া করেনা৷ পরে মনে করে তাদের কোনো বিপদ হবে৷ তারপর ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার এই তিনজন মিলে মাত্র ৫০ গজ দূরে ভবেরচর ব্রিজের ওপর নিয়ে তাঁকে নদীতে ফেলে দেয়৷'' 

‘‘সুপারভাইজার মনে করে তিনি মরে গেছেন’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ছেলেটিকে হাসপাতালে নেয়া হলে বেঁচেও যেতে পারত৷ যখন তাঁকে নদীতে ফেলে দেয়া হয় তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন৷ কারণ মৃতদেহ উদ্ধারের পর তার পেটে পানি পাওয়া গেছে৷ মৃতব্যক্তির পেটে পানি যাবেনা৷ তাদের মোটিভ যে খারাপ ছিল তা স্পষ্ট৷ তারা ছেলেটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টাই করেনি৷ কেন করেনি তাও আমরা তদন্তে জানার চেষ্টা করছি৷ এটা একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পায়েলের দুই বন্ধু ঘটনার সময় বাসে ঘুমিয়ে ছিলেন৷ পরে জেগে উঠে তারা পায়েলে খবর জানতে চাইলে বাসের স্টাফরা জানায়, বাইরে গিয়ে আর উঠতে পারেনি৷ অন্য বাসে আসবে৷''

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি তাঁর পেটে পানি পাওয়া গিয়ে থাকে তাহলে এটা সত্য যে তাঁকে জীবিত অবস্থায় নদীতে ফেলা হয়েছে৷ নদীতে ফেলার পর তিনি বাঁচার চেষ্টা করেছেন৷ শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করেছেন৷ তখন মুখ দিয়ে তাঁর পাকস্থলিতে পানি ঢুকেছে৷'' 

‘‘মানুষ এতটা নির্মম আর অমানবিক হতে পারে আমি ভাবতেও পরিনা''

পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা কাতার প্রাবাসী৷ ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি দেশে ফিরে এসছেন৷ শোকার্ত এই বাবা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানুষ এতটা নির্মম আর অমানবিক হতে পারে আমি ভাবতেও পরিনা৷ আমি আমার ছেলের লাশ দেখতে পারিনি৷ শুনেছি তাঁর মুখমন্ডল এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ বাসের কর্মচারীরা জবাবনন্দি দিয়েছে৷ তারা বলেছে ঝামেলা এড়াতে লাশ তারা নদীতে ফেলে দেয়৷ আমার আশঙ্কা পায়েলের সাথে তাদের কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়৷ তার জেরে তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে বাসে উঠতে গিয়ে যদি আহত হয় তাহলে তো তাঁকে হাসপাতালে নেয়ার কথা ছিল৷ যদি অন্যকোনো কারণ না থাকে তাহলে মৃত ভেবে নদীতে ফেলার কী কারণ থাকতে পারে?''

গোলাম মাওলা বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল৷ তা এখন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে৷ আমি এক হতভাগ্য পিতা৷ আমার মত আরা কোনো বাবার সন্তান যেন এভাবে শেষ না হয়ে যায়৷ আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই৷''

নদীতে ফেলার পর তিনি বাঁচার চেষ্টা করেছেন

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্মচারীদের নির্মম আচরণ নতুন নয়৷ এর আগেও বাস থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে, কোনো বিচার হয়নি৷ যাত্রীদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হলে তারা যাত্রীদের মারধর করে৷ এর প্রতিবাদ জানিয়ে আমরাও হুমকির মুখে আছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ খাতে সুশাসন বলে কিছু নেই৷ এখানে যে যত বেশি বেশি বেপরোয়া, উগ্র তার তত বেশি ক্ষমতা৷ সরকার প্রশাসন এদের প্রশ্রয় দেয়৷ কোনো অপরাধের বিচার হয়না৷ তারা যা খুশি তাই করে৷ যদি বিচার হত, যদি তাদের কিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হত তাহলে পায়েলকে নির্মমভাবে হত্যার সাহস তারা পেতোনা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য