1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌নতুন শত্রু, ‘‌আরবান নক্সাল’

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ নভেম্বর ২০১৮

সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম আওয়াজ তুললেই দেগে দেওয়া হচ্ছে ‘‌আরবান নক্সাল’ বলে৷ দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী থেকে মানবাধিকার কর্মী, কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই অপবাদ থেকে৷

https://p.dw.com/p/37xi1
ছবি: Reuters/A. Abidi

ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে ‘‌আরবান নকশাল’দের সংখ্যা৷

সদ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে সতর্ক করা হয়েছে বেশ কিছু রাজ্যকে৷ সামনের বছরই সাধারণ নির্বাচন৷ দ্বিতীয়বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদী৷ কিন্তু বিরোধীরা মনে করে গত সাড়ে চার বছরে তিনি এমন কোনো কৃতিত্বের নজির গড়তে পারেননি, যার কারণে ভোট পাওয়া যায়৷ নোট বাতিল থেকে জিএসটি চালু, তাঁর সরকারের কোনো বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তই জাতীয় অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারেনি৷ উল্টে বর্ধিত শুল্কের কারণে জ্বালানি এবং রান্নার গ্যাসের চড়া দাম, তার জেরে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধগতি এবং রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তির মতো বৃহত্তর দূ্র্নীতি মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতাকে দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ করছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয় মন্দির রাজনীতি, নানা ভাবে ধর্মীয় বিভেদকে উস্‌কে দেওয়া, সাম্প্রদায়িক হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া৷ গত নির্বাচনে দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি, যেমন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, দুর্নীতি এবং ভ্রষ্টাচারের বিনাশ, দেশের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া কালো টাকা ফিরিয়ে আনা— ইত্যাদি ফাঁকা আওয়াজকে ঢাকা দিতে এখন এই অশান্তির আবহ তৈরি করাটা নেহাতই জরুরি হয়ে পড়েছে৷

এর পাশাপাশি আরো একটা কাজ খুব নীরবে করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ দেশের প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদকে বড় শিল্পসংস্থার হাতে তুলে দেওয়া৷ তার জন্য নির্বিচারে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ভারতের বিরাট সংখ্যক আদিবাসী ও মূলবাসী মানুষের জীবন ও জীবিকার অধিকার হরণ করা হচ্ছে৷ সে নদীবাঁধই হোক, অথবা ধাতুর খনি, বড় বাণিজ্যিক সংস্থার ব্যবসা করার অধিকারই যে প্রথম, প্রধান এবং একমাত্র অগ্রাধিকার, সেটা নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ মজার কথা হচ্ছে, প্রায় কোনো বড় রাজনৈতিক দলই এই জবরদখল এবং লুণ্ঠনের প্রতিবাদ করছে না৷ যেটুকু প্রতিবাদ হচ্ছে, তা বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এবং নির্দিষ্ট কিছু পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীর দিক থেকে৷ এঁদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে ওই প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলির, যাঁদের বসতবাড়ি, চাষের খেত হারিয়ে বিপন্ন হচ্ছেন৷ ওঁদের সঙ্গে দেশের শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে এই সংযোগটা সরকারের না-পসন্দ৷ তাই ঠিক যে কারণে ‘‌গ্রিনপিস’–এর মতো পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠনের ওপর খড়গহস্ত মোদী সরকার, ঠিক ততটাই বিরূপ ওই বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের ওপর, যাঁদের দেগে দেওয়া হচ্ছে ‘‌আরবান নক্সাল’ বলে৷ নক্সাল শব্দটি এখানে হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র-বিরোধিতার রূপক৷

‘নির্বাচনের আগে বিরোধী কণ্ঠগুলোকে সরকার খাঁচাবন্দি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে’

‘‌‘‌আমরা যেটাকে বলি জল–জমি–জঙ্গল’, সেখান থেকে উৎখাত করা হচ্ছে মানুষকে, জমি দখল হচ্ছে৷ খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য এলাকার পর এলাকা, মাইলের পর মাইল ফাঁকা করে দিচ্ছে, বিশেষ করে আদিবাসীদের উৎখাত করে দিচ্ছে৷ এবং সেটার জন্য যে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন হচ্ছে— যারা এই কথাগুলো সামনে নিয়ে আসছে, মানে শহরের মানুষের কাছে নিয়ে আসছে, বা যাঁরা এসব নিয়ে সরব, নির্বাক জনগোষ্ঠীর কথা যাঁরা সেই সবাক মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে, তাঁদেরকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ সেটা যে কোনো নাম দিয়ে৷ কখনো আরবান নক্সাল, কখনো মাওবাদী নাম দিয়ে!‌’’ ডয়চে ভেলেকে বললেন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রাইটস্‌, বা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠন এপিডিআর-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান রঞ্জিত শূর৷ তিনি পরিষ্কারই বলছেন যে, নির্বাচনের আগে এই বিরোধী কণ্ঠগুলোকে সরকার খাঁচাবন্দি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷

তা হলে কি সরকারের এই পরিকল্পিত বারণ-শাসনের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের কিছু করার নেই?‌ রঞ্জিত শূর বলছেন, ‌নাগরিক সমাজকেই করতে হবে, কারণ, একজন গ্রামের চাষী বা একজন আদিবাসী মানুষ, তাঁদের কাছে এই সচেতনতা সহজে পৌঁছবে না৷ তাই করতে হবে নাগরিক সমাজকেই৷ সেটা করতেই হবে৷ তাতে সময় লাগতে পারে, কঠিন হতে পারে, কিন্তু তাদেরই করতে হবে৷ দু'‌দিক থেকেই করতে হবে৷ একটা হচ্ছে আদালতের মাধ্যমে মামলাগুলো ঠিকঠাক লড়ে যাওয়া, আর অন্যটা হচ্ছে রাস্তায় নেমে৷ নাগরিক সমাজকেই সেটা সংগঠিত করতে হবে৷ এ কাজে যেমন সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্ব আছে, কবি-লেখকদের দায়িত্ব আছে, তেমনি নাগরিকদেরও সমান দায়িত্ব৷ প্রতিবাদ জারি রাখার৷