নতুন দিল্লির ডিস্কোয় নারী দ্বাররক্ষী
ভারতের এক মুসলিম পরিবারের মেয়ে নাইট ক্লাবের গেটে ‘বাউন্সার’-এর কাজ করছেন, এ ভাবাই যায় না৷ কিন্তু মেহরুন্নিসা শওকত আলির পেশাই হলো তাই৷
দ্য নাইট ইজ ইয়ং
‘সোশ্যাল’ রেস্টুরেন্টটি যখন সন্ধ্যায় ভোল পালটে একটি নাইট ক্লাবে পরিণত হয়, তখন মেহরুন্নিসার কাজ শুরু হয়৷ হ্যান্ডব্যাগ চেক করা, মাদক বাজেয়াপ্ত করা, কে ঢুকবে বা না ঢুকবে, তা নির্দেশ করা৷ ৩০ বছর বয়সি মেহরুন্নিসা নতুন দিল্লির একটি নামকরা নাইট ক্লাবের বাউন্সার৷
ড্যান্স থ্রু দ্য নাইট
হাউস খাস ভিলেজে যারা খানাপিনা, নাচগান করতে আসেন, তারা তরুণ, প্রাণোচ্ছ্ল ও – সবচেয়ে বড় কথা – স্বচ্ছল৷ কাজেই ‘সোশ্যাল’ নাইটক্লাবে গান ও নাচ চলে সারা রাত ধরে – গেটে নজর রাখেন মেহরুন্নিসা৷
বক মধ্যে হংস যথা
পুরুষ অধ্যুষিত পেশাটিতে মেহরুন্নিসা নিজের জায়গা করে নিয়েছেন একটি বিশেষ কারণে৷ ‘‘আমরা মহিলা বাউন্সার নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে আমাদের মহিলা অতিথিরা স্বস্তি বোধ করেন,’’ বলেন ‘সোশ্যাল’-এর মালিক রিয়াজ আমলানি: ‘‘মেহরুন্নিসা এ কাজের জন্য দারুণ৷’’
দুই বোন
রাত শেষ হলে মেহরুন্নিসা (ডানে) তাঁর ছোটবোন তরন্নুমকে নিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে যান৷ তরন্নুমও হাউসখাসের একটি নাইট ক্লাবে কাজ করেন৷ দু’জনে মিলে মাসে ৩০,০০০ রুপি রোজগার করেন৷
রঙবাহার
দিনে দুই বোনকে দেখলে চিনতে পারা যাবে না, কেন এখন তাদের পরণে কাজের কালো পোশাক নেই, আছে রঙিন সালওয়ার-কামিজ৷ ঈদ-উল-ফিতরের বাজার করতে বেরিয়েছেন দু’জনে৷
সংসার চালান এই দু’জন
আব্বার চাকরি যাবার পর থেকে মেহরুন্নিসা আর তরন্নুমের রোজগারে সংসার চলে: বাবা-মা, দুই বোন আর তাদের তিন ছেলেমেয়ে৷ ছোট্ট একটি এক কামরার বাসায় সকলের বাস৷
বাবা-মায়ের দোয়া শুধু নয়, বিশ্বাস
পরিবারের সকলে যে গোড়ায় মেহরুন্নিসার নতুন পেশা ও চাকরিতে সুখি ছিলেন, এমন নয় – জানালেন মেহরুন্নিসা৷ তাঁর ভাই আজও মাঝেমধ্যে জিগ্যেস করেন, মেহরুন্নিসার কাজের ধরনটা ঠিক কী৷ তবে মেহরুন্নিসা আর তাতে গা করেন না, ‘‘কেননা আমার আব্বা আর আম্মা আমাকে বিশ্বাস করেন, আমার ওপর আস্থা রাখেন৷’’
আম্মা
মেহপুন্নিসার মায়ের জেদেই একসময় দুই বোন ইস্কুলে যেতে পেরেছিল – যদিও আব্বা তার বিশেষ প্রয়োজন দেখেননি৷
অনেক বাধা পার হয়ে
মেহরুন্নিসা যেমন অনেক পুরনো আচার-আচরণ ও প্রথা ভঙ্গ করেছেন, তেমনই তিনি তাঁর ধর্মকে ধরে রেখেছেন৷
শক্ত থাকো, ফিট থাকো
জিমে ওয়ার্কআউট করার সময় প্রায়শই দেখা যায় যে, মেহরুন্নিসা ও তার বোন এখানে একমাত্র মহিলা৷ তবুও তারা প্রায় প্রতিদিন জিমে আসেন – নাইটক্লাবের যে সব অতিথি একটু বেশি পান করে ফেলেছেন, তাদের বার করে দেবার মতো শক্তি থাকা চাই৷ এছাড়া মহিলা অতিথিদের সুরক্ষার জন্যও বলপ্রয়োগের প্রয়োজন পড়তে পারে৷
কিছুটা গর্বিত বৈকি
অতিথিরা মেহরুন্নিসাকে পছন্দ করেন৷ বিশেষ করে কমবয়সি মেয়েরা তার ভক্ত, কেননা মেহরুন্নিসা কাছাকাছি থাকলে তারা নিজেদের নিরাপদ বোধ করে৷ বাউন্সারের কাজ খুব সহজ নয়, মেহরুন্নিসা সেটা জানেন: ‘‘তবুও আমি যা করি, সে ব্যাপারে আমি গর্বিত৷’’