1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নকল পা যখন প্রায় আসলের মতো

২৫ অক্টোবর ২০১৭

দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিতে পারে৷ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে নকল পাকে প্রায় শরীরের অংশ হয়ে উঠতে পারে৷ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্থেসিস প্রায় নিখুঁত হয়ে উঠছে৷

https://p.dw.com/p/2mRnV
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/V. Heinz

দিনটা ছিল ২০১৬ সালের ১৬ই জুন৷ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর ডিটার ক্লাউস-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ডাক্তাররা তাঁর বাঁ পায়ের আঘাত সারাতে পারেননি৷ ফলে তাঁর জীবন আমূল বদলে গেলো৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডিটার বলেন, ‘‘জ্ঞান ফিরলে কী হবে, তা আমি আগে থেকেই জানতাম৷ প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ খুবই কঠিন ছিল৷ তবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব পাশেই ছিল৷ তারা আমাকে খুবই সাহায্য করেছে৷ তারপর কৃত্রিম পা পেয়ে অবস্থা মেনে নিলাম৷ এখন সবকিছু ভালো চলছে৷’’

অ্যাম্পুটেশন বা অঙ্গচ্ছেদের চার সপ্তাহ পর নকল পা বসানো হয়েছে৷ তারপর লুডভিগসহাফেন শহরের হাসপাতালের ল্যাবে অনুশীলন চলছে৷ ডিটার-এর সারা শরীরে স্টিকার দিয়ে নানা চিহ্ন লাগানো হয়েছে৷ ‘অপটিকাল ট্রেনিং'-এর জন্য এগুলি খুব জরুরি৷ দু'টি সাধারণ ভিডিও ক্যামেরা ও আটটি ইনফ্রারেড ক্যামেরার এক সিস্টেম সেই মার্কারগুলির অবস্থান নিখুঁতভাবে শনাক্ত করে চলে৷

ফলে ডাক্তাররা ১৫ মিটার দীর্ঘ ট্র্যাকে রোগীর শরীরের নড়াচড়ার উপর নজর রাখতে পারেন৷ এ ভাবে ডিটার-এর এক ত্রিমাত্রিক লাইভ মডেল সৃষ্টি হয়৷ শল্য চিকিৎসক আড্রিয়ান হোগান বলেন, ‘‘আমরা ৩টি স্তরে জয়েন্ট অ্যাঙ্গেল ফুটিয়ে তুলতে পারছি৷ জয়েন্টের উপর শক্তি পরিমাপ করতে পারি৷ অবতার এবং লর্ড অফ দ্য রিংস-এর মতো চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের কাজে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, এটাও প্রায় একইরকম৷’’

তবে চলচ্চিত্রের মতো এ ক্ষেত্রে কোনো কৃত্রিম প্রাণী সৃষ্টি করা হয় না৷ নকল পা নিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটা যায়, সেটাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য৷

ডাক্তাররা বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে দেখেন, যেমন হিপ মুভমেন্ট, হাঁটার সময় অক্ষত পায়ের ছন্দ, আসল ও নকল পায়ের হাঁটুর অ্যাঙ্গেলে তফাত আছে কিনা ইত্যাদি৷ আড্রিয়ান হোগান বলেন, ‘‘এই সব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নির্দিষ্ট থেরাপির পরামর্শ দিতে পারি৷ কোন ধরনের নকল পা কোন রোগীর জন্য উপযুক্ত, তা বলতে পারি৷ শুধু দৈনন্দিন জীবন নয়, পেশাগত জীবনেও সেই নকল পা চালু থাকতে হবে৷ তাছাড়া সেই কৃত্রিম অঙ্গ আর্থ্রাইটিস, বাড়তি চাপ বা শরীরের অন্য কোনো অংশের ক্ষতির কারণ হলে চলবে না৷ রোগীর জীবনে দুঃখ এড়াতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এটা যতটা সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে৷ মোটকথা এই সব বিষয় বিবেচনা করতে হবে৷ একটি অংশ সামলাতে শরীরের অন্য অংশে চাপ সৃষ্টি করলে চলবে না৷’’

ডিটার ক্লাউস ল্যাবে একাধিক নকল পা পরখ করে দেখছেন – কখনো ক্রাচ নিয়ে, কখনো ক্রাচ ছাড়াই৷ একাধিক মডেলের মধ্যে পার্থক্য কী?

‘হলিউডি' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর নিজস্ব উপলব্ধির সঙ্গে তাঁর মুভমেন্টের নিখুঁত বিশ্লেষণ তুলনার সুযোগ থাকে৷ কাটা যাওয়া পায়ের হাঁটুর জয়েন্টের বিকল্প হিসেবে এমন এক নকল পায়ের প্রয়োজন রয়েছে, যা পাটিকে সঠিক অ্যাঙ্গেলে ভাঁজ করতে পারে, সামনে চলা সম্ভব করতে পারে এবং শক্তি প্রয়োগ করে পা তুলতে পারে৷ এই প্রযুক্তি ছাড়া সে সব বিষয় পরীক্ষা করা কার্যত অসম্ভব৷

এমন মডেলের মূল্য প্রায় ৫০,০০০ ইউরো অথবা তারও বেশি হতে পারে৷ যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় হাঁটুর জয়েন্টের কাজ করতে পারে এই নকল পা৷ রোগীর হাঁটা বিশ্লেষণ করে সেই তথ্য ব্লুটুথ পদ্ধতির মাধ্যমে তাতে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব৷ ডিটার ক্লাউস বলেন, ‘‘প্রত্যেক নকল পায়ের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ প্রত্যেকটি নিয়ে আলাদা করে হাঁটতে শিখতে হয়৷ তবে এইটি পেয়ে আমি থেমে গেলাম৷ কারণ এটির মধ্যে সব সম্ভাব্য গুণাগুণ রয়েছে৷ এই নকল পা নিয়ে আমি আবার সমাজের অংশ হতে পারি৷’’

স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটা, ধীরে বা দ্রুত হাঁটা, নিরাপদে হাঁটা – ডিটার চ্যালেঞ্জ সামলে সবকিছু ভালোভাবে রপ্ত করেছেন৷ ল্যাবে ‘মোশন ক্যাপচার'-এর মাধ্যমে নকল পা আরও প্রস্তুত করে তোলার পর ডিটার নিরাপদে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন৷

দুর্ঘটনার প্রায় এক বছর পর নকল পা কার্যত তাঁর শরীরের অংশ হয়ে উঠেছে৷ অথচ শুরুতে তাঁর প্রত্যাশা ছিল খুবই সীমিত৷ আজ তিনি এর সাহায্যে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন৷

টোমাস হিলেব্রান্ট/এসবি