1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

ধুঁকছে বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনৈতিক মেরুকরণের শঙ্কা এখনও নেই

১৫ জুলাই ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা৷ দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ৷

https://p.dw.com/p/4EAKH
বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ
বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images

পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যয় সংকোচন নীতি নেয়া হচ্ছে৷ আমদানি পণ্যেও আরোপ হয়েছে নানা বিধি-নিষেধ৷ দেশের মানুষের কথা ভেবে রপ্তানি বন্ধেরও পদক্ষেপ নিয়েছে কিছু দেশ৷

এর বাইরে নয় বাংলাদেশও৷ ফলে চলমান সংকট নিরসনে ‘কৃচ্ছ্রসাধন’ বা ‘ব্যয় সংকোচন’ নীতিকেই বেছে নিতে হয়েছে সরকারকে৷

অর্থনীতিবিদ কিংবা কূটনীতিক, সবাই বলছেন এ যুদ্ধ সহসা থেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ দুই পরাশক্তির ‘ইগো’-এর বলি হতে হচ্ছে বিশ্বকে৷ তাই বিশ্ব অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা৷ তবে এই যুদ্ধের ফলে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা এখনও করছেন না কূটনীতিকেরা৷

গত এক যুগে বিদ্যুৎ খাতে নানা পদক্ষেপের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলেও বাধ্য হয়ে লোডশেডিংয়ের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ৷ সরকারের এমন ‘অজনপ্রিয়’ সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনেও রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন৷ নির্দেশ দিয়েছেন সূচি করে লোডশেডিং দিতে৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাসসহ দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের৷ সেই সঙ্গে পরিবহণব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়েছে, ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা৷

অনেক উন্নত দেশেও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানিয়ে দেশবাসীকে মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়মুখী হওয়ার আহ্বানও রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ দেশের এক ইঞ্চি আবাদি জমিও ফেলে না রেখে কিছু না কিছু পণ্য উৎপাদন করা হলে সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন তিনি৷

এদিকে খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ৷

কাজী খলীকুজ্জমান

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলনিয়সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে মোট গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়৷ আর ভুট্টা উৎপাদনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দুই দেশে৷ যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে এই দুই দেশ থেকে গম ও ভুট্টাসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের রপ্তানি৷ এই গ্রীষ্মে গম উৎপাদন করতে পারেনি ইউক্রেন৷

বিশ্ব নেতারা যখন সংকট সমাধানের উপায় খুঁজছেন তখন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের শঙ্কা দীর্ঘ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে এ যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হবে৷ হলে তার ইমপ্যাক্ট সব জায়গায়, সারা বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বে৷ আমরা যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতির অংশ আমাদের ওপরেও সেই প্রভাব পড়বে৷’’

সেই প্রভাবের মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে সবচেয়ে ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা, আগামী এক বছর বা আরও বেশি সময় হতে পারে, সেটা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি৷’’

বর্তমানের বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সাত দশমিক পাঁচ শতাংশের কিছু কম৷ মে মাসে ছিল সাত দশমিক চার-দুই শতাংশ৷

বিশ্ব মন্দাভাবের মধ্যেও অন্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থাকে এগিয়ে রাখলেন খলীকুজ্জমান আহমদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতে সাড়ে আট বা নয় শতাংশ৷ ইউরোপেও আট-নয় শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে বোধ হয় আট-এর উপরে ছিল এপ্রিল মাসে৷’’

চলমান এ সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে যৌক্তিক মানছেন এই অর্থনীতিবিদ৷ তার মতে, ‘‘আমাদের যে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বিলাসপণ্য আমদানি কমানো হচ্ছে, বিদেশ ভ্রমণ কমানো হয়েছে, অপচয় রোধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে-এজন্যই আমাদের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম আছে৷’’

এ পদক্ষেপগুলোকে চালিয়ে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘নতুন নতুন আর কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, সেগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে৷’’

Ukraine | Weizenernte
বিশ্বে মোট গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ায়ছবি: Lyashonok Nina/Ukrinform/ABACA/picture alliance

বর্তমানে দেশে খাদ্যের যে মজুদ রয়েছে, তার অবস্থাটা খারাপ নয় বলেও মন্তব্য খলীকুজ্জমানের৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থা অন্যান্য অনেক দেশ থেকে অনেক ভালো৷ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যে ১৪০টার মতো কর্মসূচি আছে, এগুলো চলতি বছর আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে৷’’

তবে যুদ্ধটা আরও কতদিন চলবে তার ওপর নির্ভর করবে আর কী করতে হবে বলেও জানান তিনি৷

এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা ভাবিয়ে তুললেও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে খুব একটা বিচলিত নন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আসলে অর্থনৈতিক যে সংকটটা হচ্ছে ওইটাই প্রধান৷ আর রাজনৈতিক যেটা হতে পারে সেটা হলো যে, খানিকটা আরও পোলারাইজড হয়ে যেতে পারে দুনিয়া৷’’

বিশ্বের যে দেশগুলো যুদ্ধকে সমর্থন করে না, রাশিয়ার বিপক্ষে সরাসরি ভোট না দেয়াকে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন৷ বিষয়টি বিশ্লেষণ করে এই কূটনীতিক বলেন, ‘‘৪০/৪২টি দেশ যে ভোট দেয়নি রাশিয়ার বিপক্ষে তার মানে এই নয় যে, তারা যুদ্ধটা পছন্দ করে৷ তারা জাস্ট দূরে থেকে পক্ষ না নেয়ার চেষ্টা করছে৷ আল্টিমেটলি কী দাঁড়াবে সেটা বলা খুব কঠিন৷ তবে একটা প্যাটার্ন হয়তো দাঁড়িয়ে যাবে৷

সেটা হলো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র দিচ্ছে, যেমন মিসাইল দিচ্ছে, সেই সঙ্গে শর্ত দিচ্ছে মিসাইল দিয়ে বিয়ন্ড বর্ডার রাশিয়াতে আক্রমণ করা যাবে না৷ তার মানে কী? সবাই চাচ্ছে বিষয়টা ইউক্রেনের এলাকার মধ্যেই থাকুক,তার বাইরে না ছড়াক৷ কারণ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, কিন্তু যুদ্ধ হচ্ছে পুরোপুরি ইউক্রেনে, রাশিয়াতে না৷ সাধারণত যখন দুই পক্ষের যুদ্ধ হয়, দুই দেশেই হয়৷ সেটা কিন্তু হচ্ছে না৷’’

ফলে যুদ্ধ বিস্তৃত না হলে রাজনৈতিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠবে না বলেও মন্তব্য তার৷ সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘‘যদি দেখা যায় যে যুদ্ধটা ছড়িয়ে পড়ছে, আমি মনে করি সম্ভাবনা খুব কম, ছড়িয়ে পড়লে তখন তো ওই ইদার ইউ আর উইথ আস অর অ্যাগেনস্ট আস থিওরির ভিত্তিতে তখন পক্ষ নেয়ার প্রশ্ন এসে যাবে৷ সবাই তো সুইজারল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না৷’’

রাশিয়া ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়তে পারে ইউরোপ৷ কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশ জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল৷ এদিকে শীত আসন্ন৷ অক্টোবর থেকে ইউরোপে হানা দিতে পারে শীতের ছোবল৷ বিকল্প জ্বালানির সংস্থান না হলে ইইউকে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে৷

আর তাই এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বুঝতে শীত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান তৌহিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় শীত পর্যন্ত দেখতে হবে৷ দু-একটা দেশ তো স্পষ্টত বিরোধিতা করছে৷ হাঙ্গেরিসহ কয়েকটা দেশ অয়েল এমবারগোর বিরোধিতা করেছে৷ কারণ তারা খুব বেশি নির্ভরশীল রাশিয়ার ওপর৷ সব দেশেই তো রাশিয়ান তেল, গ্যাস আসে৷ গত প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে৷’’

তৌহিদ হোসেন মনে করছেন, জ্বালানি ইস্যুতে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হলেও সেটা বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে না৷

তিনি বলেন, ‘‘কোনো কোনো দেশ একটু দ্বিমত পোষণ করতে পারে৷ তারপরেও যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়ন আছে বিতর্ক হতে পারে, তবে তারা একসঙ্গে থাকতে পারবে বলে আমার মনে হয়৷’’

২০ বছরে সর্বনিম্ন ইউরোর দর, পৌঁছালো ডলারের সমমানে

রাজনৈতিক সংকট তীব্র না হওয়ার অন্য আরেকটি কারণ তুলে ধরলেন কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন৷ তার দাবি, শক্তিধর দেশগুলো যখন রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছে, সেটা বাঁকা চোখে দেখলেও ঘাঁটাতে যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র৷

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আর ইউরোপের বাইরে যারা, তাদের কথা তো আলাদা৷ যারা খুব শক্তিমান দেশ তাদেরকে আমেরিকানরা তো খুব বেশি ঘাটাচ্ছে না৷ চীন রাশিয়া থেকে তেল গ্যাস আমদানি করছে৷ ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক, আগের তুলনায়৷ আমেরিকানরা এতে খুশি না, কিন্তু ভারতকে সরাসরি…ভারত তো ছোটোখাটো কোনো দেশ না যে ঝট করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে নেবে৷ ছোটো দেশ বা বাংলাদেশ এ কাজ করলে হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে নিত৷ কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে সেটা করতে পারছে না৷ কিন্তু এটা কোনো পলিটিক্যাল ক্রাইসিস সৃষ্টি করবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, মনে হয় না৷ ইউরোপ থেকেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গেছে রাশিয়াতে যুদ্ধের পর, এখনও যাচ্ছে৷’’

অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে সংকট তৈরি হয়ে গেলেও যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই মনে করছেন তৌহিদ হোসেন৷

তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ আরও লম্বা হবে৷ কোনো ধরনের কোনো লক্ষণ এখনও নেই থামার৷ থামার কোনো ইনিশিয়েটিভ দেখা গেলেও সেটা ইফেক্টিভ হতে সময় লাগবে৷ কারণ এখানে সিচুয়েশনটা এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষের জন্য এটা ইজ্জত কা সাওয়াল-এ পরিণত হয়েছে৷

‘‘কারণ রাশিয়াকে জয়ী হতে দিতে পারে না এখানে পশ্চিম৷ একেবারে ইউক্রেন দখল করে নিয়ে এখানে তাদের (রাশিয়ার) পছন্দের সরকার বসিয়ে দিল৷ তাহলে তো পশ্চিমের মান ইজ্জত থাকে না৷ আর রাশিয়ার জন্য বিষয়টা আরও ভয়াবহ৷ এখানে পরাজিত হওয়া মানে কী? রাশিয়া যে একটা বড় শক্তি সেটাই ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে৷’’

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গঠন করেছেন ‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’ (জিসিআরজি)৷ এই গ্রুপের মূল্য উদ্দেশ্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্বের দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়া৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই গ্রুপে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশও৷

তবে যুদ্ধ থামাতে জাতিসংঘের কোনো ভূমিকার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে, একবাক্যে তা উড়িয়ে দিলেন তৌহিদ৷

তিনি বলেন, ‘‘না, জাতিসংঘ অদ্যবধি কোনো যুদ্ধ থামাতে পারেনি৷ এটাও পারবে না৷ পরাশক্তিদের স্বার্থের প্রশ্ন এখানে৷ বলির পাঁঠা হলো ইউক্রেন৷’’

ব্যক্তিগতভাবে তৌহিদ মনে করেন, ইউক্রেন কিছু ক্ষেত্রে নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি যে, ইউক্রেনের উচিত ছিল বুদ্ধিমান হওয়া এবং দুইপক্ষকে খেলানো৷ যেকোনো বাফার কান্ট্রির সেটাই হলো অ্যাডভান্টেজ থাকে, যে আমি তোমার সঙ্গেও আছি, তোমার সঙ্গেও আছি৷ কিন্তু ইউক্রেন অনর্থক বেশিমাত্রায় পশ্চিমে ঘেঁষে গেছে৷ বরং ইউক্রেনের উচিত ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে নজর দেয়া৷'‘

এমনকি ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তাও ছিল বলে মনে করেন না তৌহিদ হোসেন৷ বরং দুই পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে পারত বলে অভিমত তার৷

শ্রীলঙ্কা-যুক্তরাজ্য সংকটে যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব নেই

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে তখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাজ্য৷ তবে দুই দেশের এমন অবস্থায় এই যুদ্ধ সরাসরি কোনো প্রভাবক নয় বলে মনে করেন দেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন৷

নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার পর শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ আশ্রয়ের খোঁজে এদেশ থেকে ওদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কার পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে

যুদ্ধ আরও লম্বা হবে: তৌহিদ হোসেন

আবার ব্রিটেন কম যায় না৷ লকডাউনের মধ্যে দল গঠনের চেষ্টার তীব্র বিরোধের মুখে পড়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ মন্ত্রিসভায় বিতর্কিত মন্ত্রীদের স্থান দেয়া, ব্রেক্সিটের প্রভাবে কপাল পুড়ছে তার৷ শেষ পর্যন্ত ৭ জুলাই পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ রাজনৈতিক টানাপড়েনে একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগ ও এমপিদের সমর্থন হারানোর পর, পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন জনসন৷

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘খুব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যদি দেখেন কিছু প্রভাব শ্রীলঙ্কাতে দেখা যাবে৷ আবার সেই অর্থনীতির প্রশ্নটা আসে৷ শ্রীলঙ্কার এখন যে সংকট চলছে এটার মূলে কী? মানুষের হাতে টাকা নেই, সরকারের হাতে টাকা নেই৷’’

করোনাকালে পর্যটনখাত ধসে পড়া শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মনে করেন তৌহিদ হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বড় বড় প্রকল্পে ঋণ নিয়েছে, কিন্তু পরিশোধের ক্ষমতা নেই৷ ক্ষমতা যখন খুব কেন্দ্রীভূত থাকে এক পরিবারের হাতে যেটা রাজপাকসে পরিবারের হাতে ছিল তখন তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে, ফলে কনসিকোয়েন্স অতোটা চিন্তা করেনি৷’’

যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শ্রীলঙ্কার সংকটকে আরও উসকে দিয়েছে বলে মনে করেন এই কূটনীতিক৷ তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধের প্রভাব খানিকটা, একেবারে ইনডিরেক্টলি৷ সরাসরি যুদ্ধের কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটা বলা যাবে না৷ সব মিলিয়ে হয়েছে৷’’

শ্রীলঙ্কার বেহাল অবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি ইস্যুকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন বাংলাদেশের এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব৷ এগুলোর মধ্যে আছে, ১. পরিবারের মধ্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, ২. কোভিডকালে ট্যুরিজম খাত ধসে পড়া, ৩. প্রস্তুত না নিয়ে অর্গানিক কৃষি বেছে নেয়া৷

তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধ হয়তো পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে৷ কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের জন্য এই যুদ্ধকে দায়ি করা যাবে না৷’’

ব্রিটেনের ব্যাপারেও একই অভিমত তার৷ তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধ না হলেই একেবারে সব ঠিক থাকতো এমন তো আমার মনে হয় না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান