ধর্ষিতার পর এবার প্রেমিকের মরদেহ উদ্ধার
১৮ জানুয়ারি ২০১৮দিল্লির অনতিদূরে হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্র চলছেই৷ গত ১৩ জানুয়ারি কুরুক্ষেত্রের ঝাঁসা গ্রামের এক দলিত কিশোরীর দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ৷ অভিযোগ, পাশবিকভাবে তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়৷ অভিযোগের তির ছিল কিশোরীর প্রেমিক, ওই গ্রামেরই দলিত পরিবারের সন্তান গুলশনের দিকে৷ কিন্তু বুধবার ঝাঁসা গ্রাম থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে একটি খালের ধার থেকে উদ্ধার হয় গুলশনের দেহ৷ একই খাল থেকে ওই কিশোরীর দেহও উদ্ধার হয়েছিল৷
তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে পুলিশ এবং গ্রামের মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন যে, গুলশন এবং তার বন্ধুরা ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করেছে৷ কিশোরীর বাবা গুলশনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগও দায়ের করেন৷ সেই মোতাবেক গুলশনের বাবা ও দুই ভাইকে আটক করে পুলিশ৷ পুরো গ্রাম গুলশনের পরিবারকে একঘরে করে দেয়৷ বুধবার গুলশনের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তার মা দাবি করেন, এবার তার বাকি দুই ছেলেকে ছেড়ে দিক পুলিশ৷ গুলশনের বাবাকে অবশ্য ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷
গুলশনের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর গোটা ঘটনাটিই অন্যদিকে মোড় নিয়েছে৷ বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এই মুহূর্তে তদন্ত তিনটি দিক থেকে হতে পারে৷ এক, গুলশন এবং তার বন্ধুরা কিশোরীকে খালের ধারে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে এবং পরে খুন করে৷ কিন্তু গ্রামে গিয়ে মুখ দেখাতে পারবে না বলে গুলশনও শেষ পর্যন্ত খালের জলে আত্মহত্যা করে৷ এই সূত্রে একটিই মাত্র তথ্য পুলিশ প্রামাণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারে৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে গুলশনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি৷ মনে করা হচ্ছে, জলে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ অন্যদিকে তরুণীর দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ এমনকি, তার যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে৷
দ্বিতীয় সম্ভাবনা, ওই কিশোর ও কিশোরী একইসঙ্গে হয়ত খালের ধারে গিয়েছিল৷ তখনই অন্য লোকেরা হয়ত তাদের উপর হামলা করে৷ প্রাণ বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেয় গুলশন৷ তরুণীকে এরপর ধর্ষণ করে খুন করা হয়৷
তৃতীয় সন্দেহ আরও গভীর৷ হরিয়ানা অঞ্চলে ‘অনার কিলিং’ বা তথাকথিত সম্মানরক্ষার্থে খুনের ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ সম্প্রতি এ বিষয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই কিশোরীর সঙ্গে গুলশনের বহুদিনের সম্পর্ক৷ এর আগেও তাদের একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে৷ হতেই পারে, বিষয়টিকে কিশোরীর পরিবার অথবা নিহত গুলশনের পরিবার ভালো চোখে দেখেনি৷ সে কারণেই তাদের দুজনকে একসঙ্গে খুন করার ছক তৈরি করা হয়েছিল৷ ঘটনার দিন ওই কিশোর এবং কিশোরী টিউশন ক্লাস শেষ করে খালের ধারে গিয়েছিল৷ হতেই পারে, তখন দুই পরিবারের কোনো এক পরিবার তথাকথিত সম্মানরক্ষার্থে খুন করে কিশোরীকে৷ প্রাণ বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেয় তার প্রেমিক৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডুবে যায়৷
কোনো সম্ভাবনাই আপাতত নস্যাৎ করছে না পুলিশ৷ সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দুই পরিবারের বেশ কিছু সদস্যের খোঁজও করছে পুলিশ৷
গুলশনের মায়ের অভিযোগ, গুলশনের দেহ উদ্ধারের পরেও তার বাকি দুই ছেলেকে ছাড়া হয়নি৷ যদিও পুলিশের দাবি, গুলশনের পরিবারের সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে হরিয়ানা এবং দিল্লিতে৷ নাগরিক সমাজ ইতিমধ্যে বিষয়টির দ্রুত তদন্তের আর্জি জানিয়েছে৷ অনেকেই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাটির সঙ্গে দিল্লি গণধর্ষণ মামলার মিল খুঁজে পাচ্ছেন৷ অন্যদিকে নিহত দু'জনই দলিত হওয়ায় বিষয়টি অন্য রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে৷
এসজি/ এসিবি (রয়টার্স, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)