1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পথ ধরে চলেছে জার্মানি

আব্দুল্লাহ আল-ফারুক২৮ নভেম্বর ২০০৮

বন-এ ডয়চে ভেলের সম্প্রচার ভবনে ধর্ম ও উদারপন্থা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল৷ উদ্যোক্তা জার্মান উদারপন্থী দল এফডিপি-র ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ফ্রিডরিশ নাউমান ফাউন্ডেশন৷

https://p.dw.com/p/G5cD
ধর্ম চর্চায় বাধা নেই জার্মানিতেছবি: AP

জার্মানিতে রাষ্ট্র ও সমাজের সঙ্গে এখানে বসবাসরত মুসলানদের সম্পর্কের বিষয়টিও আলোচিত হয় ব্যাপকভাবে৷

২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের গোড়াতেই জার্মানির কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদের সভাপতি আইউব আক্সেল ক্যোয়েলার অত্যন্ত ইতিবাচক সুরে বললেন, জার্মানি দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পথ ধরে চলেছে৷ রাষ্ট্র ও ধর্ম সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সহযোগিতার নীতির পূর্বশর্ত মেনে জার্মানির ধর্মনিরপেক্ষতার যে মডেল, তা সফল এক মডেল৷ অন্যান্য দেশেও তা মডেল হিসেবে কাজ করছে, সমর্থন পাচ্ছে৷ এমন কি ফ্রান্সেও তা ভাবনাচিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে৷ আমরা নিজেরাও এর সমর্থক৷

ডয়চে ভেলে ভবনে আয়োজিত এই সম্মেলনের পোশাকী শিরোনাম ছিল: উদারপন্থা ও ধর্ম - সেকুলারিজম ও ধার্মিকতার নবজাগরণের মাঝে সমাজ৷ তবে বিশেষ করে জার্মানি আর ইউরোপে ইসলাম আর খ্রিস্টান সমাজের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টিই আলোচনায় প্রাধান্য পায়৷ জার্মানির প্রটেস্ট্যান্ট গির্জা পরিষদের ফলকার ফাইগলে বলেন, খ্রিস্টিয় পশ্চিমী দুনিয়া - এই কথাটা নিয়ে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন তোলা যায়৷ অবশ্যই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে রয়েছে এক খ্রিস্টিয় পশ্চিমী দুনিয়া৷ তবে এই কথাটাতে আমার কিন্তু আপত্তি আছে৷ কেননা আমরা যদি আজকের দিনে খ্রিস্টিয় পশ্চিম কথাটা বলি তাহলে তা থেকে অন্যদের বাইরে রাখা হচ্ছে৷ ফলে কথাটা সঙ্গত হচ্ছে না৷

জার্মানিতে এখন ৩০ লাখেরও বেশি মুসলমানের বাস৷ তারা হল এদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়৷ এমন এক দেশে তারা সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করছে যেখানে ইসলামী দুনিয়ার দেশগুলোর চেয়ে বহু দিক থেকেই ভিন্নতা রয়েছে৷ তবে শুধু এটাই কোন বাধা হয়ে ওঠা উচিত নয় বলে মনে করেন আইউব ক্যোয়েলার৷ তিনি বলেন, একটি অমুসলিম আইনী ব্যবস্থায় মুসলমানদের সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই৷ ফলে আমাদের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে৷ মুসলিমরা সংবিধান নির্দেশিত ক্ষমতার বিভাজননির্ভর আইনী ও গণতান্ত্রিক মৌলনীতির সমর্থক৷ সেখানে কোন কিন্তু নেই৷

মৌলিক আইন নামে পরিচিত জার্মানির সংবিধান প্রণীত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর৷ তখন ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ছাড়া জার্মানিতে কোন এক দিন আর কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় দেখা দেবে, এমনটা ভাবনাতেও আসে নি৷ কিন্তু অবস্থাটা বহ কাল হল পাল্টে গেছে৷ জার্মানিতে আবার ইহুদী সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করছে৷ বিশেষ করে বাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়৷

এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ধর্মের মুখোমুখি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা জরুরি, মনে করেন জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে উদারপন্থী দলের তরুণ সভাপতি ফিলিপ রোয়েসলার৷ তিনি বলেন, বিভিন্ন ধর্ম ও বৈশ্বিক ধ্যানধারণা যত বেশি পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হবে ততই নিরপেক্ষতার ওপর রাষ্ট্রের জোর দেয়ার ব্যাপারটা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে৷ আর এই নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কোন একটি ধর্ম সম্প্রদায়কে - এমন কি নতুন কোন সম্প্রদায়কে - বিশেষ অগ্রাধিকার দেবে না বা তার প্রতি বৈষম্য করবে না৷

আইউব ক্যোয়েলার মনে করেন, মুসলমানরা এই মূল্যবোধগুলো সম্পর্কে সচেতন৷ তবে তার সক্রিয় প্রয়োগের দায়িত্বও জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমানদের ওপর বর্তায়৷ তিনি বলেন, জার্মান মৌলিক আইনের প্রতি আমাদের দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে এই সংবিধান সুরক্ষার ব্যাপারেও আমরা দায়বদ্ধ৷ এই বিশ্বে - বিশেষ করে ইসলামী দুনিয়ায় - স্বাধীনতাহীনতার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে৷ স্বাধীনভাবে থাকার জন্যেই এখানে অনেকে এসেছে৷ সেটাকে আমরাও রক্ষা করছি৷ ধর্মীয় রাষ্ট্র গড়ে তোলার কোন লক্ষ্য আমাদের নেই৷

আইউব ক্যোয়েলার বলেছেন, এই স্বাধীনতা আমাদের সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদেরই একটি৷ আর তাই এই সমাজে মুসলমানদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন একটি আধুনিক, হয়ত বা ইউরোপীয় এক ইসলামের পথে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ বৈকি৷