1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে ভিডিও গেমস

২০ সেপ্টেম্বর ২০১০

ভিডিও গেমস৷ ছোটদের অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয়৷ অনেককে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও গেমসের নেশায় মত্ত হয়ে থাকতে৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষকে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রশিক্ষণ দেয় ভিডিও গেমস৷

https://p.dw.com/p/PHRJ
ভিডিও গেমে মত্ত দুই তরুণীছবি: AP

নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ভিডিও গেমস মানুষকে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রশিক্ষণ দেয়৷ ভিডিও গেমের ভক্তরা তাদের চারপাশে যা ঘটছে, সেখান থেকে সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং এই অর্জনের মাধ্যমে তারা শুধু ভিডিও গেমসই ভালো খেলছে, তা নয়, বরং সাথে সাথে তাদের সাধারণ দক্ষতাও বাড়ছে৷ যেমন এর ফলে তাদের গাড়ি চালানো, ছোট ছাপার অক্ষর পড়া, ভিড়ের মধ্যে থেকেও বন্ধুকে খুঁজে বের করা এবং শহরময় নেভিগেটিং প্রক্রিয়া অর্থাৎ, পরিচালনা শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করছে ভিডিও গেমস৷

সর্বশেষ বায়োলজি জার্নালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভিডিও গেমস মানুষকে এমন ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে বাস্তব জীবনের যেকোন পরিস্থিতিতে মানুষ খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷ প্রশ্ন হলো - ভিডিও গেমস কী শুধু ছোটরাই খেলে? না, তা নয়৷ তবে মূলত অল্প বয়সিরাই ভিডিও গেমসের ভক্ত হলেও, অনেক সময় বড়রাও ভিডিও গেমস থেকে মজা পান৷ যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু ভিডিও গেমসের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ আর এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ছোট-বড় সবার মধ্যে৷ এন্টারটেইনমেন্ট সফ্টওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের ২০০৯ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শতকরা ৬৮ ভাগ অ্যামেরিকানের বাড়ির সকল সদস্যরাই ভিডিও গেম খেলেন৷

Computerspiel-Konzern Activsion stellt Spider-Man 3 vor
ভিডিও গেমছবি: AP

সাধারণ ভিডিও গেমসের ভক্ত নয় এইরকম ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের বেশ কয়েকজনের ওপর গবেষকরা পরীক্ষা চালান৷ তাঁরা, এই ধরণের খেলোয়াড়দেরকে দু'টি দলে ভাগ করেন৷ একটি দলকে ভিডিও গেমসের প্রথম ৫০ ঘন্টার খেলা খেলতে দেন, যার মধ্যে উত্তেজনা এবং গতি বেশি ছিল৷ এঁদেরকে অ্যাকশন গেম খেলোয়াড় বলা হচ্ছে৷ আর এই খেলার নাম দেয়া হয়, ‘‘কল অব ডিউটি টু'' ও ‘‘আনরিয়াল টুর্ণামেন্ট''৷ এতো গেলো প্রথম দলটির কথা, আর দ্বিতীয় দলটিকে গবেষকরা আরো ৫০ ঘন্টার ধীর গতির খেলাটি খেলতে দেন৷ এই কৌশলের নাম দেয়া হয়, ‘‘দ্য সিমস টু''৷

খেলোয়াড়দের ওপরে গবেষকদের এই প্রশিক্ষণ শেষ হবার পর, গবেষকরা এমন কিছু বিষয় তৈরি করেন, যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ বিষয়গুলো স্ক্রিনে দেখানো হয়, প্রতিযোগীরা নজর বুলিয়ে দ্রুত বুঝে নেন, কী ঘটছে, এবং যত দ্রুত সম্ভব সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন৷ তবে এই ক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয়ও ছিল, যা শুধু স্ক্রিনে দেখেই বোঝা যাবে না, গবেষকরা সেইসব বিষয়ে প্রতিযোগীদের বিস্তারিতভাবে বুঝিয়েছেন সঠিক উত্তরটি পাবার জন্যে৷

ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের ব্রেন অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্সের অধ্যাপক ডাফনে বেভেলিয়েরের নেতৃত্বে এই গবেষণায় অংশ নেন তাঁর সহকর্মীরা৷ গবেষকদের এই পরীক্ষা শেষ হবার পরে দেখা গেছে, গবেষণায় অংশ নেয়া খেলোয়াড়দের শতকরা ২৫ ভাগেরও বেশি খুব দ্রুতই গবেষণার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন এবং গবেষকদের কৌশল অনুযায়ী বহু প্রশ্নের উত্তরই তাঁরা সঠিকভাবে দিয়েছেন৷ বেভেলিয়ের বলেন, ‘‘আনরিয়াল টুর্ণামেন্ট''-এর শতকরা ২৫ ভাগের বেশি সঠিক উত্তর দিয়েছেন, মানে তাঁরা কিন্তু খারাপ করেননি৷ এই খেলোয়াড়রা একেবারে সঠিক উত্তর দিয়েছেন এবং খুব দ্রুত উত্তর দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, অ্যাকশন গেম খেলোয়াড়রা প্রতি ইউনিট সময়ে আরো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ বেভেলিয়ের বলেন, কেউ সার্জন হলে অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝখানে থাকলেই, কেবল পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন৷ এই গবেষক বলেন, সিদ্ধান্ত কখনও কালো বা সাদা হয় না৷ তিনি বলেন, আমাদের ব্রেন সবসময় সম্ভবনা খুঁজে দেখে৷ যেমন ধরা যাক, আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন এবং আপনার ডানদিকে একটা কিছু নড়াচরা দেখলেন, দ্রুত আপনার ব্রেন হিসেব করে নিল সংঘর্ষ হবে কিনা অথবা হলে কখন হবে৷ আর এর ওপর ভিত্তি করেই আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন ব্রেক করবেন কী করবেন না৷

গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাকশন ভিডিও গেম খেলোয়াড়দের দৃষ্টি শক্তি এবং স্নায়ু শক্তি অনেক বেশি কার্যকর৷ তাঁদের ব্রেন জরুরি কোন তথ্য পাবার পরে, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রেও অনেক বেশি দ্রুত কাজ করে৷ আর যাঁরা খেলোয়াড় নন, তাঁদের চেয়ে এই খেলোয়াড়দের ব্রেনের গতি অনেক বেশি দ্রুত৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ