দ্রুত শেষ হওয়ার পথে পদ্মা সেতু
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর জাজিরাপ্রান্তে এক কিলোমিটারের বেশি অংশ দৃশ্যমান হয়েছে৷ ষষ্ঠ স্প্যানটিও হওয়ায় এই অংশ দৃশ্যমান হলো৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য৷
মোট স্প্যান ৪১টি
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর আববাহিকায় ৪১টি স্প্যানে মোট ৬,১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ পদ্মা সেতু নির্মানাধীন রয়েছে৷ প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর৷ প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার৷
৪২ টি পিলার
পুরো সেতুতে মোট পিলার বসতে যাচ্ছে ৪২টি৷ প্রতিটি পিলারে রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল৷ একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার৷ এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে৷ এর মধ্যে ৬টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে৷ স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে আনা হচ্ছে৷
৯ কিলোমিটার সেতু!
পদ্মা সেতুর পানির অংশ বা মূল সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার৷ কিন্তু সড়ক পথে সেতুর স্থাপনা রয়েছে ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার৷ এছাড়া রেলপথ যুক্ত হবে ৫৩৭মিটার৷
ব্যয় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা
পদ্মা মাল্টি পারপাস ব্রিজ প্রজেক্ট ও বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির দেওয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হতে যাচ্ছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা৷ শুধুমাত্র নদীর ওপর ভাসমান ৬ কিলোমিটার সেতুর পেছনে খরচ হচ্ছে ১২ হাজার ১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা৷
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান
মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি৷ আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন৷ দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল মোনেম লিমিটেড৷ ব্যবস্থাপনা সেবা দিচ্ছে রেন্ডেল লিমিটেড অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ৷ সার্বিক পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী৷
সংযোগসড়ক সম্পন্ন
জাজিরা প্রান্ত ও মাওয়া প্রান্তে সেতুর কাজ চলমান হলেও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে৷ সেতু কর্তৃ্পক্ষের দেওয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জাজিরা প্রান্তে ৯৯ দশমিক ৮০ শতাংশ সংযোগ সড়ক সম্পন্ন৷ তবে মাওয়া প্রান্তে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷
৩ লাখ গাছ কাটা!
পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭২টি৷ এর মধ্যে বাঁশ ও কলাগাছও অন্তর্ভূক্ত৷ এছাড়া বছরে ২৪ হাজার ৬৮৪ টন ফসল উৎপাদন হয় এমন জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেতুর কাজে৷ তবে ইকোলজিক্যাল ক্ষতি ঠেকাতে সম পরিমাণ গাছ লাগানোর প্রকল্পও সংযুক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার গাছ লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে৷
মৎস প্রজনন ক্ষেত্রে প্রভাব
পদ্মা সেতুর মোট ৭৬৭ একর মৎস প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হবে এই সেতু নির্মান প্রকল্পে৷ এছাড়া সংযোগ সড়ক তৈরিতে ১২ হেক্টর মাছের পুকুর ভরাট করতে হয়েছে৷ প্রাণি-বৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে এক চুক্তি করা হয়েছে৷ ক্ষতি ঠেকাতে ২০২০ পর্যন্ত কাজ চলবে৷
জাদুঘর!
পদ্মা সেতুর নির্মান, আশেপাশের ভূমি ও প্রাণি বৈচিত্র্যের ও প্রাকৃ্তিক পরিবেশের ইতিহাস নিয়ে তৈরি হতে যাচ্ছে জাদুঘর৷ এর মধ্যে ভূমি ও প্রাণিবৈচিত্র্যের ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ইতিহাস নিয়ে কাজ শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ৷ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮২০টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে৷
৭২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন
এখন পর্যন্ত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ৭২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এর মধ্যে মূল সেতুর ৭৬ শতাংশ ও সংযোগ সড়কের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷ সেতুর পূর্ণাঙ্গ কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে৷
তথ্যসূত্র: পদ্মা মাল্টি পারপাজ ব্রিজ প্রজেক্ট ও বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি