1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দৈনন্দিন জীবনে বিপ্লব আনতে চলেছে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি

১৩ মার্চ ২০২৩

কোয়ান্টাম মেকানিক্স এতকাল পদার্থবিদ্যার তাত্ত্বিক শাখা হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অভাবনীয় উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন গবেষকরা৷ সেই আশায় বিপুল সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগও দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4OaOJ
Abstrakte Illustration Quantentheorie
ছবি: Science Photo Library/IMAGO

কোভেস্ট্রো বিশাল প্লাস্টিক উৎপাদন কোম্পানি৷ কোম্পানির গবেষণা বিভাগে এমন অনেকে কাজ করেন, রসায়নের সঙ্গে যাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ যেমন পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করা কোয়ান্টাম ফিজিসিস্ট হিসেবে ক্রিস্টিয়ান গোগোলিন সেখানে কী করছেন? তিনি নিজেই সেই সংশয় দূর করে বলেন, ‘‘কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কৌশল ও কম্পিউটার রসায়নের অ্যাডভান্সড কৌশল প্রয়োগ করাই  আমার কাজের লক্ষ্য৷ আমাদের সিমুলেসন বিশেষজ্ঞরা তার ভিত্তিতে কোম্পানির জন্য নতুন প্রক্রিয়া ও উপাদান সৃষ্টি করতে পারেন৷''

ল্যাবে পাঠানোর আগেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার উপাদানের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ফলে শুধু অনেক অর্থেরই সাশ্রয় হবে না, নতুন উপাদান সন্ধানের কাজও সহজ হয়ে উঠবে৷ যেমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান শনাক্ত করা যাবে৷

কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, গবেষক – সবাই আজকাল কোয়ান্টাম প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলছে৷ গবেষণার জন্য অর্থেরও অভাব দেখা যাচ্ছে না৷ ২০২৫ সাল পর্যন্ত শুধু জার্মান সরকারই ২০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে৷ ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কতদূর অগ্রসর হবে? এমন সম্ভাবনার দিকে একে একে নজর দেওয়া যাক৷

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মের কল্যাণে আড়ি পাতার আশঙ্কা দূর করে গোটা বিশ্বে নিরাপদে তথ্য প্রেরণ করা সম্ভব৷ ইন্সব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো. রাইনার ব্লাট এর ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনসের ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া রয়েছে৷ আজই বড় আকারে এর প্রয়োগ সম্ভব, অর্থ দিয়ে কেনা যায়৷ যেমন ব্যাংকগুলির মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ঘটছে৷ ভেবে দেখুন, আজকাল আপনি কতবার ক্রেডিট কার্ড বা এমন লেনদেন করেন এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন, যাতে আড়ি পাতা অসম্ভব হওয়া উচিত৷ ভবিষ্যতে এই সব কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে ঘটবে৷''

কোয়ান্টাম প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ

ক্রিপ্টো কারেন্সির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি অবশ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি এমন মুদ্রার এনক্রিপশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? এর আরও একটি প্রয়োগ রয়েছে৷ প্রো. রাইনার ব্লাট বলেন, ‘‘এখন প্রশ্ন হলো, আমার কোয়ান্টাম মেট্রোলজির কী প্রয়োজন? কোয়ান্টাম মেট্রোলজি পরিমাপের প্রচলিত প্রযুক্তিকে আরও সূক্ষ্ম করে তুলতে পারে৷ আমরা আরো দ্রুত ও আরও নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারবো৷ এমনকি এমন সব বস্তুর পরিমাপ করতে পারি, যে কাজ সহজে সম্ভব হতো না৷ আমার মতে, এখনো এই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না৷ ভবিষ্যতে এর বিশাল বাজার গড়ে উঠবে৷ শিল্পখাতের অনেক শাখায় এর অনেক প্রয়োগ হবে৷''

যেমন ন্যাভিগেশন ব্যবস্থার উন্নতি করা যাবে৷ স্যাটেলাইট আরও নিখুঁতভাবে প্রস্তুত করা যাবে৷ চৌম্বক ক্ষেত্র আরও সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে৷ হয়ত কোনো এক সময়ে মস্তিস্কের তরঙ্গও মাপা যাবে৷

অনেক বড় আশা থাকলেও এখনো এমন প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত হার্ডওয়্যার নেই৷ সাফল্যের পথে এখনো বিশাল বাধা রয়েছে৷ ভুলত্রুটির অবকাশও থেকে গেছে৷ অনেক প্রোটোটাইপ শুধু মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাজ করে৷ সে সব যন্ত্রের কম্পিউটিং শক্তিও অত্যন্ত কম৷ কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে অনেক আইডিয়া রয়েছে৷ আইবিএম, জার্মানির গবেষণা বিভাগের প্রধান হাইকে রিল বলেন, ‘‘আমরা মডিউলার সমাধানসূত্রের নতুন এক শাখা চালু করেছি৷ কারণ আমরা বিভিন্ন কোয়ান্টাম প্রসেসর পরস্পরের মধ্যে যুক্ত করতে পারলে সেই সম্মিলিত শক্তি একটি বড় প্রসেসরের মতো হয়ে উঠবে৷ তখন হাজার বা দশ হাজার কিউবিটের চেয়ে আরও দ্রুত কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে৷''

এমন প্রচেষ্টা কি সফল হবে? শিল্পক্ষেত্রেও কি এর প্রয়োগ সম্ভব হবে? হলে কতদিন সময় লাগবে? তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হিসেবে ইয়েন্স আইসার্ট মনে করেন, ‘‘কোয়ান্টাম বিপ্লব সম্পর্কে উদাসীন থাকা উচিত নয়, সেটা হবে বড় বোকামি৷ এর অভাবনীয় সম্ভাবনা রয়েছে৷ তবে এটাও মনে রাখতে হবে, যে বিষয়টি এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে৷ অর্থাৎ, কোম্পানিগুলি এখনো এর প্রয়োগ বা নির্মাণ শুরু করে নি৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই বিষয়টি চর্চা করছে৷ কোনটা সম্ভব, কোনটা নয়, সে বিষয়ে এখনো তর্কবিতর্ক চলছে৷ সবাই বিশাল অংকের বিনিয়োগ করছে৷ সেই সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷

এখনো বড় কিছু সম্ভব না হলেও ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল৷ আগামী দশ, তিরিশ বা হয়তো ৫০ বছরে কোন স্বপ্ন বাস্তব হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে বিতর্ক চলছে৷

মারিয়ন হ্যুটার/এসবি