নিজেরা মানসম্মত নাটক বানাতে পারলে, চ্যানেলগুলো বিদেশি ডাবিংকৃত নাটক দেখাতো না বলে মনে করেন পাঠক আবু জাবের৷ তাঁর ধারণা, সব টেলিভিশন চ্যানেলে একই ধরনের নীচু মানের নাটক আর টক-ঝাল-মিষ্টি শো প্রচার করে৷ আর সে কারণেই তিনি নাকি দেশের চ্যানেল দেখেন না৷
তবে পাঠক বকতিয়ার মানিক আরো ভালো ভালো বিদেশি সিরায়াল ডাবিং-এর পক্ষে মত দিয়েছেন৷ আবার অন্যদিকে ‘‘পরিবার ধ্বংসকারী'' স্টার-প্লাস ও স্টার-জলসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
মোকলেস মল্লিকেরও একই কথা৷ তাঁরও দাবি, ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করা হোক৷ তাঁর মতে, এ সব সিরিয়াল নাকি সংসার নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু করে না৷ পাঠক বকতিয়ার মানিক ও মোকলেস মল্লিকের সাথে একমত মো. আকতারুজ্জামান নিহালও৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
মানবিকতা না পেশাদারিত্ব?
সুদানে মৃতপ্রায় একটি শিশু মাঠে পড়ে রয়েছে আর তার ঠিক কয়েক হাত দূরেই একটি শকুন তাকিয়ে রয়েছে –১৯৯৩ সালে বিশ্ব তোলপাড় করা এই ছবিটি তুলেছিলেন বিখ্যাত ফোটো জার্নালিস্ট কেভিন কার্টার৷ পুলিত্জার পুরস্কারও পেয়েছিল ছবিটি৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল শিশুটির মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা না করে তিনি কি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারতেন না? আর এ কারণেই হয়ত আত্মহত্যা করেছিলেন কেভিন৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
ধর্ষিতার ছবি ও পরিচয় প্রকাশ নয়
সংবাদ নীতিমালা বলে, ধর্ষিতা বা যৌন নিপীড়নের শিকারের নাম প্রকাশ করা যাবে না৷ কিন্তু অনেকক্ষেত্রে গণমাধ্যম ধর্ষিতার এলাকার নাম বা তাঁর কোনো আত্মীয়ের পরিচয় প্রকাশ করে৷ এ যুগেও সাংবাদিকতার এমন ভুল সত্যিই মর্মান্তিক৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
অপরাধীর অপরাধ প্রমাণের আগে ছবি প্রকাশ নয়
সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী, অপরাধ করেছে সন্দেহে পুলিশ ধরার পরই তার ছবি সাংবাদিকরা প্রকাশ করতে পারেন না, কেননা, অপরাধ তো তখনো প্রমাণিত হয়নি৷ কিন্তু বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে অপরাধীর অপরাধ প্রমাণের আগেই ছবি প্রকাশ করার ঘটনা ঘটে৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের একটি প্রধান দৈনিক হিন্দু নারীদের ছবি প্রকাশ করে, যারা ভোট কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ ক্যাপশনে যে স্থানের উল্লেখ ছিল, ছবিটি সেই স্থানের ছিল না৷ ফটোশপের সহায়তায় কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছিল ছবিটিতে৷ ছবিটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল তখন৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
একতরফা বক্তব্য নয়
বড় বড় ইস্যুতে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো এক তরফা বক্তব্য প্রচার করে৷ কিন্তু সাংবাদিকতার প্রথম নীতিই হলো নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন৷ অর্থাৎ কোনো ঘটনায় উভয় পক্ষের বক্তব্য থাকতে হবে৷ না হলে জন্ম নেবে বিতর্কের৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
উদ্ধার কাজে সমস্যা বা আহতদের প্রশ্ন
দুর্ঘটনা স্থলে অতিরিক্ত সাংবাদিকের উপস্থিতি কাজে বাধার সৃষ্টি করে৷ একইভাবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষ বা নিহতদের স্বজনদের ঘটনা ঘটার মুহূর্তে প্রশ্ন করাটা একেবারেই অমানবিক৷ এতে নৈতিকতার চেয়েও মানবিকতার প্রশ্ন এসে যায়৷ বিশ্বের অনেক দেশের সাংবাদিকরা এমন পরিস্থিতিতে ঐ আহত বা নিহতদের স্বজনদের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করেন৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
ভুল ছবি, ভুল সংবাদ পরিবেশন
যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের দুটি দৈনিক পত্রিকা কাবা শরীফের ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা সংবাদ ছাপাতেও পিছপা হয়নি৷ ‘আলেমদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কাবার ইমামদের মানববন্ধন’ শিরোনামে তারা একটি সংবাদ পরিবেশন করে, যেটা কিনা ১৮ অক্টোবর ২০১২ তে প্রকাশিত কাবার গিলাফ পরানোর সময় তোলা৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়া
গত দুই বছরে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট আইএস বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে জবাই করে হত্যা করেছে এবং সেই হত্যাদৃশ্যের ভিডিও প্রচার করেছে৷ অনেক সংবাদ মাধ্যমও নিজেদের টিআরপি বাড়াতে সেই ভিডিও প্রচার করেছে৷ কিন্তু একদিকে এই ভয়াবহ দৃশ্য মানুষের মনে চাপ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে জঙ্গিবাদকে উসকে দেয় না কি!
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
শিশুদের ছবি প্রকাশ না করা
কোনো শিশুর বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে৷ মানবিক আবেদন সৃষ্টি করতে অনেক সংবাদমাধ্যম তখন শিশুটিকে নিয়ে নানা প্রতিবেদন তৈরি করে৷ এতে যে শিশুটির উপর মানসিক চাপ তৈরি হয়, এটা সাংবাদিকদের বোঝা উচিত এবং এটা নীতিবিরুদ্ধ৷
-
গণমাধ্যমের ভ্রান্তি ও উপস্থাপনের নীতিমালা
শিশু অপরাধী এবং শিশু নির্যাতনের শিকার
অনেক দেশেই শিশু অপরাধীদের ছবি প্রকাশ করা হয় না৷ পাশাপাশি কোনো শিশুর ছবি তুলতে হলে অভিভাবকদের অনুমতি লাগে৷ এছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থেও অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাদের ছবি প্রকাশ করা উচিত নয়৷ কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নীতি মেনে চলা হয় না৷ বাংলাদেশে নির্যাতিত শিশুর ছবিও হরহামেশাই প্রকাশ করা হয়৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
ওদিকে দেশের নাটক না দেখার কারণ হিসেবে লিখেছেন সুজন শফিুজ্জামান লিখেছেন, ‘‘দেশি চ্যানেল আর নাটক মার খাচ্ছে নিম্নমানের অনুষ্ঠান আর অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের জন্য...৷''
দেশীয় সিরিয়ালের মান নিয়ে সঞ্জয় সোহেলেরও একই মত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এ সব অনুষ্ঠান এত নিম্ন পর্যায়ের, যা দেখতে রুচিতে বাঁধে৷''
মামুন উর রশীদ দীপুর প্রশ্ন, ‘‘সুলতান সোলেমানের মতো সত্য কাহিনি নির্ভর ধারাবাহিক দেখালে সমস্যা কোথায়?'' আর নাটক নির্মাতাদের কাছে পাঠক হাসান আল দাউদের একটাই অনুরোধ, ‘‘ভালো নাটক তৈরি করুন৷''
বাংলাদেশের নির্মাতাদের উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন ডয়চে ভেলের পাঠক জুনায়েদ আহমেদ৷ লিখেছেন, ‘‘নিজেরা ভালো কিছু তৈরি করুন, তাহলে দর্শক আপনাদেরগুলোই দেখবেন৷ দর্শক ধরে রাখতে পারছেন না – এটা আপনাদের ব্যর্থতা৷ এখানে আন্দোলন করে ব্যর্থতা প্রকাশ করা বোকার কাজ ছাড়া কিছু না৷''
পাঠক মাহমুদ হোসেনও জুনায়েদ আহমেদের সাথে একমত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘নিজেদের অক্ষমতা স্বীকার করুন এবং স্বকীয়তা তৈরি করুন৷ বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই সিনেমা বা নাটক বা গান সবকিছুই নকল বা ডাবিং৷ সুতরাং আকাশ সংস্কৃতি থেকে আমাদের কেন দূরে রাখবেন? বস্তাপচা গল্প, নাচ কিংবা গান দেখানোর জন্য? নাকি আপনাদের কোনো নকল ধরা খাওয়ার ভয়ে?''
‘‘ম্যাকগাইভার, হারকিউলিস, সিন্দবাদ, এক্স ফাইলস যখন চলেছে তখন মানুষ বাঁকের ভাইয়ের জন্যে মিছিলও করেছে৷ সকাল থেকে রাত অবধি বিরতিহীন সংবাদের মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন আর তার মাঝে মাঝে নাটক দেখার চেয়ে ও সব সিরিয়াল দেখা ভালো৷'' মন্তব্য স্বাধীন শোয়েবের৷
পাঠক আবু জাবেরের ধারণা, সব টেলিভিশন চ্যানেলই নীচু মানের নাটক আর টক-ঝাল-মিষ্টি শো প্রচার করে৷ সে কারণেই তিনি দেশের চ্যানেল দেখেন না৷
আজকাল নাকি ভালো নাটক হয় না৷ হ্যাঁ, এমনটাই মনে করেন আবু জুবায়ের৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘পুরনো নাটক কত ভালো ছিল, মানুষকে তা কত কাছে টানতো৷ স্কুল-কলেজে যখন ছিলাম, তখন ঈদের নাটক দেখার জন্য সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসতাম৷ আসলে আগে যত নাটক হতো, মানুষ সেগুলোর সাথে মিশে একাকার হয়ে যেত৷ কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, অয়ময়, সংশপ্তক, বহুব্রীহি, রূপনগর, বারো রকম মানুষ আরও কত নাটক ছিল৷ আমি যেই সাতটা নাটকের নাম লিখলাম, এদের যে কোনো একটার ধারে কাছে আছে এমন আরো সাতটা নাটকের নাম বলুন তো, যেগুলা গত সাত বছরের প্রচারিত হয়েছে...৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ