দূষণের গ্রাসে দিল্লি, অর্ধেক সরকারি কর্মীর 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম'
ভয়াবহ বায়ুদূষণ। দিল্লির স্কুল, কলেজ বন্ধ।আপাতত বন্ধ নির্মাণকাজ। রাজ্য সরকারের অর্ধেক কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ।
দিল্লির অবস্থা
বুধবারও দিল্লিতে বায়ুদূষণের পরিস্থিতি ছিল খুব খারাপ। সকাল সাতটায় রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৩৭৯, যা স্বস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। চারশ-র বেশি হলে তা হয়ে যায় চরম অসুবিধাজনক।
ধোঁয়াশার চাদর
এখন প্রতিদিন দিল্লি থাকে ধোঁয়াশার চাদরে মোড়া। বায়ুদূষণের ফল। কিছুটা দূরের জিনিস দেখা যায় না। উপরের ছবিটি রাজপথের। যার একদিকে রাষ্ট্রপতি ভবন, অন্যদিকে ইন্ডিয়া গেট। কিন্তু ধোঁযাশার জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
দূষণকে মানিয়ে নিয়ে
দূষণ চরমে। দিল্লিবাসীরা সেই ক্ষতিকর দূষণের মধ্যেই প্রতিদিনের কাজ, শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম বজায় রেখেছেন। লোদি গার্ডেনের এই ছবিই তার সাক্ষী।
প্রতিবছর দেওয়ালির পর
দিল্লির এই দূষণের কাহিনি প্রতিবছরের। দেওয়ালির পরই ধোঁয়াশার বলয়ে ঢুকে যায় দিল্লি। কারণ, এই সময় প্রতিবেশী রাজ্যে খড় পোড়ান কৃষকরা। পরিবেশের তোয়াক্কা না করে দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় দেওয়ালিতে প্রচুর বাজি ফাটে। জোরলো হাওয়া থাকে না। দিল্লিতে সবমিলিয়ে ১ কোটি ২০ লাখের মতো বিভিন্ন ধরনের যান আছে। তার মধ্যে ৭০ লাখ দ্বিচক্রযান। এসবই দূষণ ছড়ায়।
ধুলোর দাপট
এর সঙ্গে যুক্ত হয় ধুলো। দিল্লির আবহাওয়া যেহেতু খুবই শুকনো, মাটি রুক্ষ, তাই বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ খুবই বেশি থাকে। যা এই বাতাসকে দূষিত করে। ধোঁয়াশার মধ্যেও সাফাইকর্মীরা রাস্তার ধুলো পরিষ্কার করেন।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কোনোমতে পরিস্থিতির সামাল দিতে ব্যস্ত। চেতনাহীন মানুষ বাজি ফাটাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সমানে গাছ কাটা হচ্ছে, আর দূষণ বাড়ছে দিল্লির। এই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে। স্বল্প ও দীর্ঘকালীন ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
কেজরিওয়াল সরকারের সিদ্ধান্ত
সুপ্রিম কোর্টের কঠোর সমালোচনায় নড়েচড়ে বসেছে কেজরিওয়াল সরকার। স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে, সরকারি কর্মীদের বলা হয়েছে ৫০ শতাংশ অফিসে আসবেন। বাকিরা ঘরে বসে কাজ করবেন। দিল্লিতে নির্মাণকাজ ২১ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। ১১টা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি চালু রাখা হচ্ছে। অত্যাবশ্যক নয়, এমন জিনিস নিয়ে ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাড়ি থেকে কাজে রাজি নয় মোদী সরকার
মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, তারা চায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা অফিসে এসে কাজ করুন। এমনিতেই করোনার সময়ে কাজের ক্ষতি হয়েছে। ঘরে বসে সরকারি কাজ ঠিকভাবে হয় না বলে তাদের অভিমত। তারা কর্মীদের গাড়ি শেয়ার করার পরামর্শ দিয়েছে।
অ্যান্টি স্মগ গান
দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় এই যন্ত্রটি দেখা যাচ্ছে। অ্যান্টি স্মগ গান। ধোঁয়াশা কাটানোর জন্য এই গান ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষকদের শাস্তি নয়
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, খড় পোড়াবার জন্য কৃষকদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তারা এমনিতেই চাপের মধ্যে আছেন। দিল্লি ও তার আশপাশের রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন আগামী এক সপ্তাহ খড় না পোড়ানোর জন্য কৃষকদের অনুরোধ করেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, খড় পোড়ানোর জন্য দিল্লিতে ১০ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়। বাকিটা অন্য কারণে। তার প্রতিবাদ করেছেন পরিবেশবিদরা। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ হলো, তারা সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ কমাতে চাইছে। সেইমতো এগোতে হবে। আর কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, পরিবেশবিদদের মত হলো, দিন চারেকের মধ্যে হাওয়া বইবে। দিল্লির বায়ুদূষণ কমবে। সেই হাওয়ার অপেক্ষায় সরকার।
যমুনার কালো জল
দূষণের কারণে যমুনার নীল জল এখন নিকষ কালো। মাছ পর্যন্ত বাঁচে না এই জলে। দিল্লির কারখানা থেকে ফেলা বর্জ্য, অপরিশ্রুত ময়লা সব মেশে যমুনার জলে। তাই যমুনার জল মানে বিষ। এই জলদূষণ বন্ধ করা নিয়েও প্রচুর কথা হয়, ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করে সরকার। তারপরেও যমুনার জল কালোই থাকে।
ধোঁয়াশার মধ্যে ট্রেন
এই ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে ট্রেন, বাস চলছে। দূরপাল্লার ট্রেন দেরিতে চলে। অনেকসময় বিমান ওঠানামায় অসুবিধা হয়। সব চেয়ে বড় কথা, দিল্লির মানুষের জীবনের আয়ু কেড়ে নিচ্ছে এই বায়ুদূষণ। চিকিৎসার খরচ বাড়ছে। বেঁচে থাকার দিন কমে যাচ্ছে দিল্লিবাসীর।
সুখের সময় নয়
দিল্লিবাসীর কাছে এ বড় সুখের সময় নয়, এ বড় আনন্দের সময় নয়। প্রতিবছর শীত এলেই আতঙ্কে থকেন দিল্লিবাসী। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তারা ভয়ংকর কষ্ট পান। চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় বাড়ে। সরকার অপেক্ষা করে, কবে হাওয়া বইবে, কবে দূষণ সরে যাবে রাজধানী থেকে অন্যত্র।