দুনিয়া বদলানো এক মুঠোফোনের গল্প
১৬ আগস্ট ২০২১জার্মানিরহানোফারের কম্পিউটার মেলায় ১৯৯৬ সালে নোকিয়া উন্মোচন করে তাদের নতুন পণ্য ‘৯০০০ কমিউনিকেটর' ফোন৷ সেই বছরের ১৫ আগস্ট বাজারে আসে সেটি৷ ‘হাতের মুঠোয় অফিস' এনে দেওয়া সেই ফোন স্মার্টফোন শব্দটি আবিষ্কারের বহু আগেই স্মার্টফোনের ভূমিকা পালন করা শুরু করে৷
কমিউনিকেটর বাজারে আসার পর, দৈনন্দিন কাজে মানুষকে সাহায্য করার দায়ভার তুলে নেয় ‘ব্র্যাকবেরি'৷ এর আরো বেশ কিছু বছর পর, ২০০৭ সালে অ্যাপল আইফোন নিয়ে আসে বিশ্বের প্রথম মাল্টি টাচ স্ক্রিনযুক্ত স্মার্টফোন৷
খুদে ল্যাপটপের মতো গড়ন, কিবোর্ড ও সাদাকালো পর্দাযুক্ত কমিউনিকেটর যখন বাজারে আসে, তখন তার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে এগারো সেন্টিমিটার৷ বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো ফোনের মধ্যেই একসাথে পাওয়া যায় ইমেল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ওয়ার্ড প্রসেসিংসহ লেখালেখির নানা ধরনের সুবিধা৷
বেখাপ্পা, অথচ যুগান্তকারী
বর্তমান বিশ্বে অবিশ্বাস্যমনে হলেও মাত্র ৩৩ মেগাহার্টজের প্রসেসোরযুক্ত কমিউনিকেটরের মেমোরি ছিল মাত্র ৮ মেগাবাইট৷ কোনো ইমেল খুলে পড়তে হলেও ইন্টারনেটের সাথে ফোনকে যুক্ত করতে অপেক্ষা করতে হতো ৩০ সেকেণ্ড৷ এরপর, প্রতি সেকেণ্ডে ৯.৬ কিলোবাইট গতিতে আস্তে আস্তে রিড হতো ইমেলের বার্তা৷ এই গতি আজকের যুগে অকল্পনীয় ও হাস্যকর মনে হবে অনেকের কাছে৷
শুধু তাই নয়, কমিউনিকেটরের ওজন ছিল ৩৯৭গ্রাম৷ এই কমিউনিকেটর কিনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হতো ৮০০ ডলার, যা আজকের ৬৮ হাজার বাংলাদেশি টাকার সমান৷
কিন্তু ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে এই কমিউনিকেটরের বেশ কয়েক বছর লেগে যায়৷ ২০০০ সালে বাজারে আসে নোকিয়া ৯২১০ কমিউনিকেটর, যা প্রথম মডেলের তুলনায় হালকা, ছোট, সস্তা ও সহজবোধ্য ছিল৷ কিন্তু ২০১০ সালে যখন অন্যান্য মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থারা স্মার্টফোন তৈরি করতে শুরু করেন, খেই হারিয়ে ফেলে নোকিয়া৷ সেভাবে সাফল্য পায়না তাদের কমিউনিকেটর, যা কি না এই দৌড়ের প্রথম খেলোয়াড় ছিল৷
তবুও আজকের বাজারে নেহাত ফেলনা হয়ে যায়নি কমিউনিকেটর৷ ইবে-র মতো অনলাইন বাজারে ৬০০ মার্কিন ডলার দামে বা তারো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন নোকিয়া কমিউনিকেটর ৯০০০৷
জো হারপার/এসএস