দুই মার্কিন ফ্রি-ক্লাইম্বার পর্বতারোহণের ইতিহাস গড়লেন
টমি ক্যাল্ডওয়েল এবং কেভিন ইয়র্গসন বিশ্বের বৃহত্তম একশিলা, উত্তর ক্যালিফর্নিয়ার জোসেমিটি ন্যাশনাল পার্কের এল কাপিতান মোনোলিথটি জয় করেছেন৷ খালি হাত-পায়ে প্রায় হাজার মিটার উচ্চতার এই খাড়া পাথরটিতে চড়েছেন তারা৷
বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন পাহাড়ে চড়া
অনেকেই ভেবেছিলেন এটা করা সম্ভব নয়: টমি ক্যাল্ডওয়েল এবং কেভিন ইয়র্গসন হলেন প্রথম পর্বতারোহী, যারা জোসেমিটি পার্কের এল কাপিতান পাহাড়গুলির ‘ডন ওয়াল’ বা ‘প্রত্যুষের প্রাচীর’ নামধারী খাড়া পাথরের দেয়ালটিতে চড়েছেন৷ এই ‘রক ক্লাইম্ব’-টি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন বলে খ্যাত৷
অসাধ্যসাধন
ওরা দু’জন ২৭শে ডিসেম্বর ‘ডন ওয়াল’-এ চড়তে শুরু করেন৷ ফাঁকে কি ফাটলে হাতের আর পায়ের আঙুল ঢুকিয়ে ইঞ্চি-ইঞ্চি করে মসৃণ পাথরটার ত্বক বেয়ে ওঠেন তারা৷ দড়ি আর হার্নেস দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল বটে, তবে সে শুধু পা পিছলে গেলে৷
উনিশ দিন ধরে পাহাড়ের বুকে
একশিলাটিতে চড়তে ১৯ দিন সময় নিয়েছেন তারা৷ গোটা সময়টা পাহাড়ের গায়েই ছিলেন; পাথরের গায়ে লাগানো তাঁবুতে থেকেছেন, খেয়েছেন, ঘুমিয়েছেন৷ ক্যাল্ডওয়েল আর ইয়র্গসন খেয়েছেন টিনে রাখা ফলমূল, মাঝে-মধ্যে এক চুমুক হুইস্কি৷ রিপোর্টাররা এই আশ্চর্য পর্বতারোহণের ভিডিও ছবি তুলেছেন৷
অন্ধকারের ভয় থাকলে চলবে না
দিনের বেলা গরমে হাত ঘামে, তাই পিছলে যাওয়ার ভয় থাকে৷ সেই কারণে ক্যাল্ডওয়েল আর ইয়র্গসন প্রায়ই রাত থাকতে পাহাড়ে চড়া শুরু করতেন৷
পর্বতারোহীর স্বপ্ন
এল কাপিতান একশিলাটিতে চড়ার শতাধিক রুট আছে৷ ১৯৫৮ সালে প্রথম এই একশিলার মাথায় চড়া হয়৷ অতীব কঠিন ‘ডন ওয়াল’-ও প্রথম চড়া হয় ১৯৭০ সালে৷ কিন্তু ক্যাল্ডওয়েল আর ইয়র্গসন-এর আগে আর কেউ একটানা ফ্রি-ক্লাইম্বিং করে এর মাথায় পৌঁছতে পারেননি৷
বহু বছরের ট্রেনিং এবং একাধিকবার প্রচেষ্টা
২০১০ সালে ঠিক এই প্রচেষ্টা করতে গিয়ে ওদের দু’জনকে একটি ঝড়ের কারণে রণে ভঙ্গ দিতে হয়৷ ২০১১ সালে পরের বারের প্রচেষ্টা৷ সেবার ইয়র্গসন পাহাড় থেকে পড়ে পায়ের গাঁট ভেঙে ফেলেন৷
আত্মীয়স্বজন গর্বিত
দুই যোগ্য পুত্র ‘ডন ওয়াল’ জয় করার পর গেইলেনা ইয়র্গসন (মাঝে) এবং টেরি ক্যাল্ডওয়েল হর্ষধ্বনি করে তাদের অভিনন্দন জানান৷ টেরি ক্যাল্ডওয়েল বলেন, তাঁর ছেলে বেশ কয়েকদিন আগেই ওপরে পৌঁছতে পারত, কিন্তু বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করেছে৷ ‘‘ওদের বন্ধুত্ব গভীর এবং স্থায়ী, ছ’বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রাচীরের যন্ত্রণা সহ্য করে তৈরি,’’ বলেন টেরি৷
‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’
আরোহণের পর দুই অসমসাহসী পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউস থেকে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখেন, এই দু’টি মানুষ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘অসম্ভব বলে কিছু নেই’৷