1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতে বেঙ্গলি মার্কেট সিল, উদ্ধার ৩৫ শ্রমিক

৯ এপ্রিল ২০২০

করোনার প্রসার রোধ করতে সিল করে দেওয়া হল দিল্লির বেঙ্গলি মার্কেট। সেখানেই বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপের বাড়ির ছাদ থেকে উদ্ধার করা হলো গাদাগাদি করে থাকা ৩৫ জন শ্রমিককে।

https://p.dw.com/p/3agyd
ছবি: Reuters/A. Dave

দিল্লির মান্ডি হাউসের কাছে বেঙ্গলি মার্কেট। এই এলাকায় তিনজন করোনায় আক্রান্ত। তাই পুরো এলাকাটা বুধবার রাতে সিল করে দেওয়া হয়েছে। আর তখনই সামনে এসেছে আরেক কাহিনি। মার্কেটে পাশাপাশি দুইটি দোকান হলো বেঙ্গলি সুইট শপ এবং বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপ। তার মধ্যে বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপের ওপরের ছাদে গাদাগাদি করে ছিলেন ৩৫ জন শ্রমিক। তাঁরা বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপের বিভিন্ন দোকানে কাজ করতেন। পুলিশ বাড়ি বাড়ি  গিয়ে খোঁজ করার সময় বিষয়টি জানতে পারে। তারপরই পুলিশ দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। অভিযোগ, করোনা সংকটের সময় সামাজিক দূরত্বের নির্দেশ না মেনে এতজন শ্রমিককে একটা ছোট জায়গায় রেখে তাঁদের জীবন বিপন্ন করে তোলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বেঙ্গলি মার্কেট এলাকায় পুরসভা ও স্থানীয় থানার পুলিশ মিলে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিল। সেই সময় দেখা যায়, সেখানে তিনজনের করোনা হয়েছে। বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপে খোঁজ করার সময় ৩৫ জন শ্রমিকের কথা তাঁরা জানতে পারেন।  খুব ছোট জায়গায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে গাদাগাদি করে শ্রমিকরা ছিলেন। জায়গাটা অস্বাস্থ্য়করও। তারই মধ্যে দুই জন শ্রমিকের জ্বর হয়েছে বলে জানা যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের সরিয়ে নিয়ে দিল্লি সরকারের আশ্রয়শালাতে রাখা হয়েছে। বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপের মালিক অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা মানবিক কাজ করেছিলেন। হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণা হওয়ায় তাঁদের তিনটি দোকানের শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে পারেননি। আটকে পড়েছিলেন। তাই তাঁদের থাকার জায়গা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তাঁদের দোষ কোথায়? এই প্রশ্নটাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, লকডাউন ঘোষণার পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার কাহিনি এখন সকলের জানা। অভুক্ত অবস্থায় হেঁটে অনেকে ফিরেছেন। অনেকে লম্বা লাইন দিয়ে আনন্দ বিহার বাস টার্মিনাস থেকে উত্তর প্রদেশ সরকারের দেওয়া বাসে করে লকডাউনের মধ্যে বাড়ি ফিরেছেন। পায়ে হেঁটে ফেরার পথে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। তখন অবশ্য সামাজিক দূরত্ব দেখা হয়নি। দিল্লি সরকারের আশ্রয়শালা ও খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা তো পরে চালু হয়েছে। লকডাউনের পর মালিক যদি তাঁদের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা না করতেন, তা হলে তো শ্রমিকদের না খেয়ে, বাইরে থাকতে হতো বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ফিরতে হতো! তবে এটাও ঘটনা, দিল্লি সরকার আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করার পর মালিকের উচিত ছিল, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেওয়া।

বুধবার রাত থেকেই পুরো বেঙ্গলি মার্কেট এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে লকডাউন তো চলছেই, তার ওপর ২০টি এলাকা সিল করা হয়েছে। লকডাউন মানে কার্ফু পাস ছাড়া কেউ দূরে যেতে পারবেন না। তবে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের কাছের দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বা ওষুধ আনতে পারবেন। বাড়ির বাইরে বেরনো একেবারে বন্ধ নয়। কিন্তু এলাকা সিল হওয়া মানে বাড়ির বাইরে কেউ পা দিতে পারবেন না। ওই এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হবে। বাইরের কোনও লোক ঢুকতে পারবেন না, কেউ বেরোতেও পারবেন না। কেবল সরকারি কর্মীরা বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেবেন। পুরো এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলবে।

করোনা যাতে আর না ছড়ায়, তার জন্য মরিয়া দিল্লি সরকার কুড়িটি এলাকা সিল করে দিয়েছে। আসলে লকডাউন সত্ত্বেও দিল্লি সহ পুরো দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।  সরকার বুঝতে পারছে লকডাউন বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। চললে, মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাবেন। তাই দিল্লি সহ প্রতিটি সরকার চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা কমাতে। সে জন্যই ২০টি এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে কি না, সেটাই দেখার।

এই বেঙ্গলি মার্কেট নামের সঙ্গে অবশ্য বাঙালিদের সরাসরি কোনও যোগ নেই। এটা দিল্লির অন্যতম পুরনো বাজারগুলির মধ্যে একটি। আগে নাম ছিল বেঙ্গল মাল মার্কেট। কালক্রমে তা বেঙ্গলি মার্কেট নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। তবে স্বাধীনতার আগে থেকেই এখানে কিছু বাঙালি থাকেন। এখনও আছেন। 

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)