1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দারিদ্র দূর করতে সকল দল মতকে এক হতে হবে ড. ইউনুস

১৬ অক্টোবর ২০০৯

বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একই সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখার ঘোষিত বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস৷

https://p.dw.com/p/K7tE
ছবি: AP

তিনি একে সাধুবাদও জানিয়েছিলেন৷

জার্মান আন্তর্জাতিক বেতার ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনুস তার প্রতিক্রিয়ায় সাধুবাদের কথা বলেন৷ দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় দারিদ্র্যবিরোধী জাতীয় সমাবেশে এক মঞ্চে বসতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ৷ এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস জানান, দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে হলে একক কোন প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়৷ সকল দল সকল মতকে একত্র হতে হবে, সকল মানুষকে একত্র হতে হবে৷ যত একত্র হওয়া যাবে, ততো তাড়াতাড়ি দরিদ্রদশাকে যাদুঘরে পাঠানো যাবে৷ তাই দুই নেত্রীর একই মঞ্চে আসলে তা হবে খুবই ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ৷

কিন্তু আজই বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া জানিয়েছেন তিনি ঐ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না৷ তিনি ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, আমরা একতরফাভাবে সরকারকে সহযোগিতা করে অপরাধ, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সমর্থন করতে পারি না৷ সম্মেলনের বিষয়ে স্পিকার আবদুল হামিদ যে আন্তরিক চেষ্টা করেন সে জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি৷

ডমিনো ষ্টোন স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে এই সাক্ষাৎকার দেন৷ আগামী ৯ নভেম্বর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্র বার্লিন প্রচীর পতনের ২০ম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে৷ এ উপলক্ষে জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান৷ এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাজধানি বার্লিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা বানাবেন বিশেষ প্রস্তর খন্ডের দেয়াল৷ যার নাম দেয়া হয়েছে ডমিনো ষ্টোনস৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামি দামি মানুষেরা ঐ সব প্রস্তর খন্ডে সই করছেন৷ বাংলাদেশের ইউনুস সেন্টার ঢাকার পার্শ্ববর্তী কালিয়াতে আজ শুক্রবার ঐ প্রস্তর খন্ডে সই করার বিশেষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷

এ অনুষ্ঠানের বিষয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানান, গ্রামীন ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা এবং তাদের ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে আমরা ঐ প্রস্তর খন্ডের উপরে নানা রকমের ছবি আঁকলাম, বাংলাদেশের অনেক প্রতীক আঁকলাম, তাতে আমরা বিশেষ ভাবে বললাম যে আমরা দারিদ্র্যকে যাদুঘরে পাঠাতে চাই৷ সেখানে আমরা এগুলো লিখেছি৷ আমরা এই প্রস্তর খন্ড জার্মানিতে পাঠিয়ে দেবো৷ সেটা বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে যাওয়ার ২০ বছরপূর্তি উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান হবে সে অনুষ্ঠানের সময় একটা ডমিনো এফেক্ট করার জন্য এ রকম প্রায় এক হাজার এ রকম প্রস্তর খন্ড সাজানো হবে, যেগুলো থাকবে একটির পর একটি৷ তারপর সেগুলো ধ্বসে পড়েবে৷ তার অর্থ হবে এই যে বার্লিন প্রাচীর যেভাবে ভাঙ্গা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই দারিদ্রের প্রাচীরকেও আমরা ভাঙ্গতে পারবো৷

ঠিক এই মূহুর্তে কোন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন আপনি.. তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে জানান, সব সময় আমি যে স্বপ্ন দেখি, সবাই আমার মতো যেমন স্বপ্ন দেখেন, যে এটা একটি দারিদ্র মুক্ত দেশ হবে৷ আমাদের দেশে কোন ব্যক্তিকে দরিদ্র বলে পরিচয় দিতে হবে না বা পরিচিত হবে না৷ তার জীবনের সমস্ত চাহিদা সে নিজে পূরণ করতে পারবে এবং একজন স্বাস্থ্যবান, স্বাস্থ্যবতী পূরুষ এবং মহিলা হিসাবে তারা গড়ে উঠবে, স্বাস্থ্যের যত সমস্যা আছে, সেগুলো আমরা মেটাতে পারবো এবং খুব সহজভাবে স্বাস্থ্যসেবা সকলের কাছে সহজলভ্য হবে, এটা আমরা নিশ্চিত করতে পারবো৷ আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মধ্যে যে সমস্ত শক্তি নিহিত আছে, যে সৃজন শক্তি তাদের মধ্যে আছে, তা প্রকাশ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তারা পাবে৷ সেই আয়োজন আমরা সমাজের পক্ষ থেকে করতে পারবো৷ এটাই আমার স্বপ্ন৷

বাংলাদেশ কী সেই পথে হাঁটছে? এ প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানালেন, হাঁটছে তো বটেই, ধীরে ধীরে হলেও হাঁটছে৷ তবে এটা ত্বরান্বিত করা যায় আরও অনেক৷ এটা বলা যায় যে নিশ্চয়ই আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি৷

দুই জার্মানির একত্রিকরণ বিষযক এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনুস জানান, বিশ্ব শান্তিতে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ এটা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট৷ দুই পরাশক্তির মাঝে শীতল যুদ্ধের সময় বার্লিন প্রাচীর এবং জামার্নির বিভক্তিকরণ একটা বড় রকমের প্রতীক হয়ে ছিল৷এরপর প্রাচীরের অবসান এবং জার্মানির একত্রিকরণের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হলো৷ এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন করে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক করার সুযোগ হলো৷ আগে পৃথিবী যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল সেটার অবসান হলো, যার যার মত করে শান্তির পথে হেঁটে যাবার সুযোগ হলো৷ আমি বলবো যে এটা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে৷ এক কথায় দুই জার্মানির একত্রিকরণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷

প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক