1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দাম বাড়ছে চালের, দায়ী কি মধ্যস্বত্বভোগীরাই?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ জানুয়ারি ২০২২

পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে চালের দাম৷ বছর চারেক পর এই দাম বৃদ্ধি৷ রাইস মিল মালিকদের দাবি, বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হওয়ায় দাম বৃদ্ধি৷ যদিও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্যই এই দাম বেড়েছে৷

https://p.dw.com/p/469nZ
ছবি: Payel Samanta/DW

চলতি মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হয়েছে এই রাজ্যে৷ বর্ষার পরও প্রতি ঋতুতে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে৷ এর ফলে একটা আশঙ্কা ছিলই যে শাকসবজির দাম বাড়বে৷ এর সঙ্গে বজ্রপাতের মতো হু হু করে বেড়েছে চালের দাম৷ এর ফলে ডাল-ভাতে বেঁচে থাকা বাঙালির পকেটে টান পড়েছে৷ এক ধাক্কায় বিভিন্ন চালের দাম বেড়েছে কেজি পিছু পাঁচ থেকে ১০ টাকা৷ কেন এই দাম বৃদ্ধি, দোষ কি শুধু আবহাওয়ার? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর পিছনে রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে৷ দায় রয়েছে দালালচক্রেরও৷  

পশ্চিমবঙ্গে বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন চালের পাশাপাশি মিনিকেট এবং বাঁশকাঠি অগ্নিমূল্য৷ দুই মেদিনীপুর এবং বর্ধমানের পাশাপাশি সমস্ত মধ্যবিত্ত মহলেই এই চাল পছন্দ করা হয়৷ বিশেষজ্ঞরা বলেন, আসলে এই নামের কোনো ধান নেই৷ দেশি চালকেই ক্রমাগত ছেঁটে এই সরু চালগুলি তৈরি হয়৷ উপ কৃষি অধিকর্তা অনুপম পাল বলেন, ‘‘যে চালগুলির চাহিদা আছে, সেগুলিরই দাম বাড়ানো হয়৷ যে দেশি চালগুলো আছে, সেগুলোর এত উৎপাদন হয় না যে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে৷ মিনিকেট, জিরাকাঠি, লক্ষ্মীভোগ, বাঁশকাঠির মতো চালগুলি মিলমালিকদের দেওয়া নাম৷ দেশি চালকে পালিশ করে এই সব চাহিদাসম্পন্ন চাল জোগান দেওয়া হয়৷’’        

ভারতে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যস্বত্বভোগীরাই৷ পশ্চিমবঙ্গ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পাঞ্জাবের মতো মান্ডি থেকে এত বেশি ধান কেনাবেচা হয় না৷ বেশিরভাগই বেসরকারি চ্যানেল থেকে কেনাবেচা হয়৷ সরকারের পক্ষে কৃষকের সমস্ত ধান কেনাটাও সম্ভব হয় না৷ এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ চাল উদ্বৃত্ত৷ তাহলে কেন চালের দাম বাড়ছে? উঃ দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ফোরাম ফর ইনডিজেনাস এগ্রিকালচারাল মুভমেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক চিন্ময় দাস বলেন, ‘‘চাল উদ্বৃত্ত বলে চালের দাম বাড়বে না এমন সরলীকরণ করা যাবে না৷ এটা নিয়ন্ত্রণ করে একটা চক্র৷ আর সরু চাল মোটেই উদ্বৃত্ত নয়৷ দেশি চালকে পালিশ করে সরু চাল বানানো হয়৷ তাই সরু চালের দাম বাড়ছে, আরও বাড়বে, কিন্তু দেশি চালের দাম বাড়বে না৷’’

খারাপ আবহাওয়ার জন্য সারা রাজ্যের ৪০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে: মৃন্ময় কোলে

চালের দাম বাড়ার ফলে মধ্যবিত্তরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন, তেমনি ব্যবসায় ভাটা পড়ছে রাইস মিল মালিকদের৷ তাঁদের বক্তব্য, রেশনের চালের কোয়ালিটি এখন ভাল বলে মানুষ রেশনের উপর নির্ভর করছে৷ ফলে ব্যবসায় মন্দা দেখা যাচ্ছে৷ যদিও চালের দাম বাড়ার ব্যাপারে মিলমালিকরা দোষ দেখছেন আবহাওয়ার৷ কলকাতার পি পি রাইস মিলের ম্যানেজার মৃন্ময় কোলে বলেন, ‘‘খারাপ আবহাওয়ার জন্য সারা রাজ্যের ৪০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে৷ যে ধান আমরা প্রতি কুইন্টাল হাজার টাকায় কিনতাম, সেটার জন্য এখন ১৪০০-১৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে৷ মিনিকেট চালের দাম প্রথমদিকে কেজি প্রতি ৩০ টাকা হলেও এখন ৪০ টাকা দাঁড়িয়েছে৷ এতে মানুষ প্রথমে কিনতে না চাইলেও পরে কিনতে বাধ্য হচ্ছে৷ বিক্রি নেই৷ আর আমরা বেশি দামি চাল রাখতে ভরসা পাচ্ছি না৷’’

কিন্তু কৃষকরা বলছেন অন্য কথা৷ চালের দাম বৃদ্ধির জন্য আবহাওয়া দায়ী নয়৷ আবহাওয়ার জন্য ধানের উৎপাদন কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তবে? বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের কৃষক ভৈরব সাইনি বলেন, ‘‘আবহাওয়ার জন্য ধান কম উৎপাদন হয়েছে৷ খারাপ আবহাওয়ার জন্য গোবিন্দভোগ, দুধেশ্বরের মতো ধান কাটার সুযোগ পায়নি কৃষক৷ তবে তার জন্য কোনো অভাব হয়নি৷ জোগানে ঘাটতি নেই, তাই চাহিদা নতুন করে বেড়েছে বলা যায় না৷ ফড়েদের জন্যই এই দাম বেড়েছে৷’’

আবহাওয়ার জন্য ধান কম উৎপাদন হয়েছে: কৃষক ভৈরব সাইনি

বেশিরভাগ চাষিই নভেম্বর ডিসেম্বর মাস নাগাদ ধান দিয়ে দিয়েছেন, ফলে আগেই ধান নেওয়া হয়ে গেছে৷ গতবার যে দামে তাঁরা ধান বেচেছেন, এ বারেও একই দামেই ধান বিক্রি করেছেন৷ তাহলে চালের দাম বাড়ল কেন? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে৷ পূর্ব বর্ধমানের ট্রাডিশনাল ধান সংরক্ষক ও বিক্রেতা সৌরীন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আনুপাতিক হারে ধানের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে চালের দাম বাড়লে সেটা স্বাভাবিক হত৷ ধানের দাম সেভাবে বাড়েনি, তাহলে চালের দাম বাড়ল কেন? এ জন্য ব্যবসাদারেররা দায়ী৷’’ ভৈরব সাইনি বলেন, ‘‘এতে চাষির কোনো ভূমিকা নেই৷ লাভটা পুরোটাই মিল মালিকদের, ব্যবসাদারদের৷ কেজি প্রতি চালের দাম পাঁচ টাকা বাড়লে ধানের দাম কমপক্ষে তিন টাকা বাড়া উচিত৷ কারণ, দেড় কুইন্টাল ধানে এক কুইন্টাল চাল হয়৷ চালের দাম বাড়ায় কৃষকের কোনো বাড়তি প্রাপ্তি হচ্ছে না৷’’