1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাহজালালের সমাধান কোন পথে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ জানুয়ারি ২০২২

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন৷ রবিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে তাদের ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল ৫টা পর্যন্ত তা হয়নি৷

https://p.dw.com/p/45yew
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা ছবি: Mohammad Rafayat Haque Khan/DW

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা এখন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে' চলে গেছেন৷ তাই সরকারের উচিত হবে দ্রুত একটি সমাধানে যাওয়া৷ অন্যথায়, যেকোনো সময় পারিস্থতি আরো জটিল হতে পারে৷

আলোচনা সংসদে

দুইজন সংসদ সদস্যও রবিবার সংসদে শাহজালালের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারা হলেন, জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও পীর ফজলুর রহমান৷ 

‘উপাচার্যের পদত্যাগের বাইরে অন্য কিছু ভাবছিনা’

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘‘এটা কি আইয়ুব, মোনায়েম খানের আমল না কি যে কথায় কথায় পুলিশ আনবেন৷ লঠিপেটা করলো, কাঁদানে গ্যাস মারলো আমরা দেখলাম৷ কেন এটার উৎপত্তি হলো, কোনো ছাত্র আন্দোলনকে ছোট করে দেখা উচিত না৷

‘‘আমি মনে করি অবিলম্বে আর কোনো তদন্ত রিপোর্ট নয়, কারো সঙ্গে আলাপ, আলোচনা নয়, শিক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আছেন ভাইস চ্যান্সেলরকে আজকের মধ্যেই ওখান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসেন, ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যেতে সহায়তা করেন,'' বলেন তিনি৷

দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

এদিকে, শনিবার ভার্চুয়াল বৈঠকের পর রবিবার দুপুর ২টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি আবারও অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন৷ শাহজালালের শিক্ষার্থী মেহনাজ মৌমিতা বিকেল ৫টার দিকে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা দুপুর ২টা থেকেই প্রস্তুত আছি কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি৷''

তিনি বলেন, ‘‘আলোচনা যাই হোক না কেন আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া অন্যকিছু ভাবছিনা৷ তাই তিনি পদত্যাগ না করলে আমরা কী করব সেটা আমাদের ভাবনায় নেই৷

‘‘একটি ছাত্রী হলের প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম আমরা৷ আমাদের সেই দাবি যৌক্তিক ছিল৷ রাত ৮টায় হলে একজন হাউজ টিউটরকে আসার অনুরোধ করলে প্রভোস্ট জবাব দিয়েছিলেন, কেউ মরেছে কী না? কিন্তু তার সমাধান না করে পরে উপাচার্যের উপস্থিতিতে পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হল৷ ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়৷ এমন উপাচার্যকে আমরা আর চাইনা,'' বলেন মৌমিতা৷ 

বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান বলেন, ‘‘হামলার পর আবার উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে৷ উপাচার্য তার গায়ের জোরে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে চাইছেন৷ তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের উপাচার্য৷ আগের মেয়াদেও তিনি শিক্ষার্থীদের অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন৷ তাকে আমরা আর চাইনা৷''

শিক্ষার্থীরা গত ১১ দিন ধরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে আছেন৷ অবস্থান, অনশন, কাফনের কাপড় পরে অনশনের পর এখন তারা গণঅনশন শুরু করেছেন৷ শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হল খালি করার নির্দেশ দেয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলনে আছেন৷

তানভীর রহমান বলেন, ‘‘আমরা হল খোলা রেখেছি৷ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এখন ক্যাম্পাসে আছেন৷''

অনশনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এরইমধ্যে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে৷ তার মধ্যে দুই জনের অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল' বলে জানান তানভীর রহমান৷ আরো ১২ জন এখন সরাসরি অনশনে আছেন৷ তাদের কয়েকজনের শারীরিক অবস্থাও খারাপ বলে জানান তিনি৷

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় সমাধান মেলেনি

এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফা ভার্চুয়াল বৈঠকের পরও কোনো ফল আসেনি৷ মেহনাজ মৌমিতা বলেন, ‘‘তিনি আমাদের দাবির ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেননি৷ তিনি বিকল্প কোনো সমাধানের কথা বলেছেন৷ কিন্তু আমরা আমাদের দাবি উপাচার্যের পদত্যাগের বাইরে অন্য কিছু ভাবছিনা৷''

শিক্ষামন্ত্রী প্রথম দফার ভার্চুয়াল বৈঠকের পর আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকা আসার আমন্ত্রণ জনালে শিক্ষার্থীরা রাজী হলেও পরে তারা মত বদলান৷ তারা প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীকে সেখানে যেতে অনুরোধ করেন৷

জানা গেছে, দুইবার বৈঠক করে কোনো ফল না আসায় শিক্ষামন্ত্রী আপাতত আর ভার্চুয়াল বৈঠকে আগ্রহী নন৷

নিরব ইউজিসি, সরব বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ

এদিকে, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে ইউজিসি এখনো চুপচাপ রয়েছে৷ তাদের এই নিরবতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউজিসি বিষয়টা দেখতে পারত৷ তাদের একটা দায়িত্ব আছে৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘শুরুতেই বিষয়টি ঠিকমত হ্যান্ডেল না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ এখনতো ছাত্ররা পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছেন৷ তারা এখন গণঅনশন শুরু করেছেন৷ তারা শিক্ষামন্ত্রীর কথাও মানছেন না৷ সরকারের উচিত এটার খুব দ্রুত সমাধান করা৷ তা না হলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?'' 

‘পরিস্থিতি আর যেন খারাপ না হয়’

ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসব পরস্থিতির সঙ্গে শিক্ষকরাও যুক্ত থাকেন৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভিসি আসেন তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়৷ জাহাঙ্গীরনগরের এখনকার ভিসির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছিলো৷ তিনি সেটা ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করায় এখনো টিকে আছেন৷ শাহজালালেল ভিসি সেটা পারেননি৷ তাকেতো শেষ পর্যন্ত চলেই যেতে হবে৷ তাই পরিস্থিতি আর যেন খারাপ না হয়৷''

তিনি মনে করেন, ‘‘সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে এখন সতর্কতার সাথে এগোনো দরকার৷''

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘সরকার চেষ্টা করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে৷ তারা কী করেন তা দেখার অপেক্ষায় আছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া উচিত৷ কিন্তু একজন প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি তুলে সেটাকে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে পরিণত করা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়না৷''

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো কোনো রিপোর্ট দেয়নি৷ আর উপাচার্যকে বারবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷