1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দহনকালে অন্য লড়াইয়ে নাঈমুর-মাশরাফী

নোমান মোহাম্মদ
২৩ এপ্রিল ২০২০

ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক, বর্তমানের সংসদ সদস্য। নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও মাশরাফি বিন মর্তুজার পরিচয়টা এখন এমনই। মাঠের ক্রিকেটে তাঁরা লড়েছেন বীরের বিক্রমে। করেনাভাইরাসের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও পিছু হটছেন না কিছুতেই।

https://p.dw.com/p/3bJAh
Bangladesch MP Naimur Rahman Durjoy verteilt Hilfsgüter
ছবি: Privat

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সপ্তাহে দু-তিনদিন যান এলাকায়। এরপর ঢাকার বাড়িতে ফেরার পর পড়তে হয় আবেগপূর্ণ এক পরিবেশে, "ছেলেরা আমাকে ডাকে ডিজে বাবা। আগে ঘরে ফেরার পর ছোট ছেলে নামীর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলতো, ‘ডিজে বাবা এসেছে।' এখন আমাকে দেখলে, ‘সোশাল ডিসট্যান্স' বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। বড় ছেলে ফারহান বলে, ‘এলাকায় না গেলে হয় না?' আমার স্ত্রীর কথা, ‘বাঁচলে তো অনেক করতে পারবে। এখন যে অবস্থা, আগে বাঁচো। তোমার কিছু হলে বাচ্চাদের দেখবে কে?' তবু এ দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার জন্য যেতে তো হবেই।”

মাশরাফিও ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর নড়াইল ২ আসনের জনগণের পাশে। সেখানে সব কিছু তদারকি শেষে ঢাকা ফিরে আছেন বিচ্ছিন্নতায়। কষ্টটা তাঁরও কম না, ‘‘আমার দুটো সন্তান৷ কিন্তু ওদের সঙ্গে থাকতে পারছি না। ছাদে আলাদা ঘরে আছি। ১৪ দিনে কোনো সমস্যা না হলে পরিবারের সঙ্গে আবার থাকতে পারবো। এছাড়া আমার নিজেরও মারাত্মক অ্যাজমা। এটি চিন্তার বিষয়। তবে আমি শক্ত আছি।''

করোনাভাইরাসের বিপক্ষে যুদ্ধে মোটেও সুরক্ষিত নন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক কিংবা সফলতম অধিনায়ক। কিন্তু সংসদ সদস্যের দায়িত্বটা এড়িয়ে যাচ্ছেন না। এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্য সহায়তা তো করছেনই। এবার প্রথম আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হওয়া মাশরাফি নিয়েছেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় অভিনব বেশ কিছু পদক্ষেপ। ভ্রাম্যমান হাসপাতালের মতো তৈরি করে রোগীদের কাছে চিকিৎসকদের নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে জীবাণুনাশক কক্ষ, সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য কাঁচবন্ধ ঘরে থেকে ডাক্তারদের রোগী দেখার ব্যবস্থার ধারণাগুলোই তো চমকপ্রদ।

ফটোসেশন করার জন্য হলেও কাজ করুন: দুর্জয়

সময়ের দাবি আর জীবনের শিক্ষাতেই এসব করেছেন মাশরাফি, ‘‘বাইরের দেশে দেখেছি জীবাণুনাশক স্প্রে করা। তখন ভেবেছি, এটি হাসপাতালে করে দেখি। আবার দেখলাম, রোগীর সংস্পর্শে থেকে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁরা নিরাপদ না থাকলে তো রোগীদের বাঁচাতেই পারবো না। কাঁচের বাক্স করাটাও বিদেশে দেখেছি। মনে হয়েছে, এটিও চেষ্টা করে দেখি। ব্যাপারটি নড়াইলের ডাক্তারদের পছন্দ হয়েছে।''

আর দুস্থদের খাদ্য সহায়তাকে ‘ত্রাণ' হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি, ‘‘এটিকে এ মুহূর্তে ত্রাণ হিসেবে দেখছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি কিংবা বিনামূল্যে যা দেবার কথা, এগুলো সমন্বয় করা খুব জরুরি। আরেকটি ব্যাপার। পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ কিন্তু খাদ্য না থাকার জন্য আসেনি; এসেছে সুষম বন্টন না থাকার জন্য। আমার উদ্বেগের জায়গা, আমার এলাকায় ৪-৫ লক্ষ মানুষের সবাই খাবার পাচ্ছেন কিনা।''

মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুরও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, ‘‘আমরা শুরু করি সচেতনতা দিয়ে। মাইকিং, লিফলেট বিতরণের কাজগুলো এখনো করছি। এলাকায় অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে; নদীর মধ্যে চরাঞ্চল আছে। সেখানকার মানুষ মনে করেন, অসুস্থ হবো, ওষুধ আছে, চিকিৎসা আছে, হাসপাতাল আছে, ডাক্তার আছে৷ এসব জায়গায় গেলে অসুখ সেরে যাবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে তাঁদের বোঝানোই কঠিন।'' সচেতনতার বাড়ানোর পাশাপাশি খাবারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টাও করছেন তিনি, ‘‘মানুষের খাদ্য সরবরাহের তদারকি করছি। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করছি। আবার মানুষের চাহিদা বুঝতে হয়। সবার তো আর চালের দরকার নেই। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা করছি তাঁদের। যেটুকুন পারি, চালিয়ে যাচ্ছি।''

তবে সব চেষ্টার পরও তাঁদের মন খারাপ হয় যখন দেখেন মানুষ যথেষ্ট সচেতন নয়। কিংবা এ নিয়ে কেউ কেউ অহেতুক সমালোচনা করেন। সামাজিক দূরত্ব না মানায় মাশরাফির কষ্টটা বেশি, ‘‘পুরো বিশ্ব মূল যে জায়গায় মনোযোগ দিয়েছে, সেখানে আমাদের অনেক ঘাটতি। আমি সামাজিক দূরত্বের কথা বলছি। আমার ভালো আমাকে বুঝতে পারে। মানুষ যদি বুঝতে পারতো, ঘরে থাকাটাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন, তাহলে ভালো হতো। অবশ্যই বাজার করতে যাবো। কিন্তু মানুষ তো অযথা ঘর থেকে বের হচ্ছে। আমার নড়াইলেই দেখছি, লোকজন বাইরে ক্যারামবোর্ড খেলছে, চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। এসব দেখে কষ্ট পাচ্ছি যে, সবার চেষ্টাগুলো না বৃথা হয়ে যায়!''

ক্রিকেট পয়েন্ট জিরো জিরো ওয়ান পার্সেন্টও না: মাশরাফী

নাঈমুরের আক্ষেপের জায়গা মানুষের সমালোচনা, ‘‘সবাই শুধু সংসদ সদস্যদের পেছনে লেগে থাকে। বলেন, আমরা শুধু ফটোসেশন করি। আমরা মাস্ক পরলেও অনেকের চোখে জ্বালা হয়। যাঁরা বলেন, আমরা ফটোসেশন করার জন্য এগুলো করি, আপনারা সেই ফটোসেশন করার জন্য হলেও এ কাজ করুন। তাহলে দুটো মানুষ অন্তত দুটো প্যাকেট পাবে।''

এসব সমালোচনা গায়ে না মেখে নিজের কাজ করে যাবার প্রত্যয় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমানের। করোনাভাইরাসের বিপক্ষে লড়াইয়ে তিনি মেনে চলছেন দুই ‘কোচ'-এর নির্দেশনা, ‘‘যেহেতু এ লড়াইয়ে সম্পর্কে আমরা কেউই কিছু জানি না, সে কারণে কোচের কথা শুনতে হবে। এখানে কোচ ধরতে হবে ডাব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)-কে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। এ দুই জায়গা থেকে যে নির্দেশনা পাবো, সেটি মানুষের কাছে পৌঁছনোই আমার মূল কাজ। সঙ্গে এলাকার মানুষের চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটানো।''

আর মাশরাফী এই করোনাভাইরাসের ক্রান্তিকালে পুরনো এক সত্য জানছেন নতুন করে, ‘‘আপনাদের আমি একটা কথা প্রায়ই বলি। ক্রিকেট আমার জীবনের অনেক বড় অংশ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নড়াইলে আমাকে সবাই কৌশিক নামেই জানে। মাশরাফী নামটির জন্মই হয়েছে ক্রিকেটের কারণে। কিন্তু জীবনের সঙ্গে মেলালে ক্রিকেট খুব ছোট একটা অংশ। আজ দেখুন, মাশরাফী ক্রিকেটার ছিল, সাকিব ক্রিকেটার ছিল, তামিম ক্রিকেটার ছিল, মুশফিক, রিয়াদ, লিটন- এদের কোনো মূল্যই নেই। আজ আমরা সবাই বিলীন। এখন সবার জীবন বাঁচানোটাই ফরজ হয়ে গেছে। জীবনের সঙ্গে তুলনায় ক্রিকেট পয়েন্ট জিরো জিরো ওয়ান পার্সেন্টও না। এটি সবসময় বিশ্বাস করতাম। করোনাভাইরাসের সময়ে হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম।''

এই দহনকাল পেরোনোর জন্য হাতে হাত রেখে লড়াইটাই তাই প্রত্যাশিত নাঈমুর-মাশরাফিদের। ঠিক ওই ক্রিকেট মাঠের মতোই।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য