দলে বিদ্রোহ, অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত
২৪ আগস্ট ২০১৮অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ব্যয় ও রাজস্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয় ট্রেজারি৷ তবে ট্রেজারার মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই পালন করেন৷ মন্ত্রিসভায় আলাদা করে অর্থ মন্ত্রণালয় থাকলেও অর্থমন্ত্রী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেজারারের ডেপুটি হিসেবেই কাজ করেন৷
লিবারেল পার্টির অধিকাংশ পার্লামেন্টারিয়ান শুক্রবার ম্যালকমের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দেন৷ একই সাথে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনও করেছে দেশটি৷
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডুটনকে ৪৫-৪০ ভোটে হারিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ট্রেজারার স্কট মরিসন৷ গত ১১ বছরে মরিসন হবেন অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী৷
টার্নবুলকে উৎখাতের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিভক্ত লিবারেল পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন মরিসন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্থিতিশীলতা, ঐক্য এবং জনগণের আশা-ভরসা ফিরিয়ে আনবো৷ আমরা আপনাদের পাশে আছি, এটা মূল কথা৷''
কে এই মরিসন?
১৯৬৮ সালে সিডনির এক শহরতলীতে জন্ম মরিসনের৷ ২০০৭ সালে পার্লামেন্টে আসার আগে পর্যটনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি৷ লিবারেল সরকারের বেশকিছু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ ২০১৩-১৪ সালে অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত অভিবাসন নীতির বাস্তবায়ন করেছেন তিনি৷
সিডনির ম্যাকোয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি গবেষক গ্লেন কেফোর্ডের মতে, মরিসনের অধীনে আরো বেশি রক্ষণশীল নীতির দিকে ধাবিত হবে অস্ট্রেলিয়া৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মরিসন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খুবই রক্ষণশীল এবং ধর্ম নিয়েও তাঁর চিন্তাভাবনা কঠোর৷ গত বছরের সমকামী বিয়ের প্রস্তাবে তিনি ‘না' ভোট দিয়েছিলেন৷''
অবশ্য ২০১৯ সালের মে মাসে জাতীয় নির্বাচনে নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে হলে তাঁকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরোতে হবে বলেও মনে করেন কেফোর্ড৷ তাঁর মতে, ‘‘মেয়াদের মাঝামাঝি এসে নেতৃত্বের বদলকে স্বাভাবিকভাবে নেননি অস্ট্রেলিয়ার ভোটাররা৷ তাঁরা এই পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন না৷''
কেফোর্ড বলছেন, ‘‘ইতিহাস বলে, পরবর্তী নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, সরকারে ফিরে আসা তাঁদের জন্য বেশ কঠিনই হবে৷''
অবসরে টার্নবুল
ভোটের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডুটন সাংবাদিকদের জানান, ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি মরিসনকে পূর্ণ সমর্থন দেবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘স্কট মরিসনের প্রতি আমার সম্পূর্ণ আনুগত্য থাকবে৷ পরবর্তী নির্বাচনে বিল শর্টেনকে (লেবার পার্টির নেতা) হারানো এবং আমাদের জয় নিশ্চিত করতে হবে৷''
টার্নবুলকে সরিয়ে দলের নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ডুটনের প্রয়োজন ছিল ৪৩টি স্বাক্ষর৷ ডুটন সেটি করতে সমর্থ হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ায় টানা চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৩ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই নিজের দলের সদস্যদের কাছেই ক্ষমতা হারালেন টার্নবুল৷
ডুটনের ওপর ক্ষুব্ধ টার্নবুল বলছেন, ‘‘অনেক অস্ট্রেলিয়ানই যা হচ্ছে তা দেখে অবিশ্বাষে মাথা নাড়ছেন৷'' ডুটনের এমন কর্মকাণ্ডকে ‘পাগলামি' এবং ‘প্রতিহিংসামূলক' বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
এর আগে মঙ্গলবারও টার্নবুলকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তবে সে দফা রুদ্ধদ্বার ভোটে ৪৮-৩৫ ভোটে রক্ষা পান তিনি৷ তবে এর পরের কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী টার্নবুলের অপেক্ষাকৃত উদারপন্থি নীতির বিরোধিতা করে তাঁর পক্ষ ত্যাগ করেছেন৷
অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরমানসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যও টার্নবুলের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে পদত্যাগও করেছেন৷
প্রধানমন্ত্রীত্ব যে সংকটে বৃহস্পতিবারই তা বুঝতে পেরেছিলেন টার্নবুল৷ সেদিনই তিনি ঘোষণা দেন, নেতৃত্বের লড়াইয়ে তিনি আর অংশ নেবেন না, এমনকি পার্লামেন্টেও আর থাকবেন না৷
পরে শুক্রবার বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুতই রাজনীতি থেকেও অবসরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী৷
এডিকে/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)