1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দল পরিচিত: অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস

৭ এপ্রিল ২০০৯

প্রতিষ্ঠা ১৯৯৭

https://p.dw.com/p/HRmo
ছবি: AP

১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন সেই বছরেই কংগ্রেস ছেড়ে আসা আরও কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পত্তন করেন মমতা৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে দলের নাম নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছিল আগেই৷ মমতা নিজেই দলের প্রতীক এঁকেছিলেন৷ কংগ্রেসের তেরঙা পতাকার মাঝে জোড়া ঘাসফুল৷

১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যের ২৬% ভোট পায় তৃণমূল৷ দখল করে ৮টি আসন৷ কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিয়ে সরকারেও শরিক হয়৷ মন্ত্রী হন মমতা৷ কিন্তু তহেলকা ঘুষ কাণ্ডের জেরে মন্ত্রিসভা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা৷

২০০০ সালে কলকাতা পুরসভার কর্তৃত্ব যায় তৃণমূলের হাতে৷ মেয়র হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷

২০০১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল৷ কিন্তু সিপিএম-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্টই ক্ষমতায় বহাল থাকে৷ নতুন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ওপরেই আস্থা রাখেন ভোটাররা৷

২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে জোটসঙ্গী করেই লড়েছিল তৃণমূল৷ কিন্তু একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনটি বাদে কোনও আসনে জিততে পারেনি৷ ২০০৫ সালে কলকাতা পুরসভা ফের তৃণমূলের হাতছাড়া হয়৷

২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখে বামফ্রন্ট৷ কিন্তু পরের তিন বছরে, মূলত সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে নিজেদের রাজনৈতিক জমি বেশ কিছুটা ফিরে পেয়েছে তৃণমূল৷ পঞ্চায়েত ভোটে, বিভিন্ন উপনির্বাচনে এবং পুরভোটে তৃণমূলের সাফল্য ফের রাজ্যে বাম-বিরোধী রাজনীতিতে উৎসাহ জুগিয়েছে৷

২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে তৃণমূল৷ বিক্ষুব্ধদের নিরস্ত করে এই জোট যদি কার্যকর হয় তাহলে রাজ্যে বামেদের আসন কমার সম্ভাবনা রয়েছে৷ নির্বাচনী ইস্তাহারে যদিও জাতীয় ইস্যু নয়, আঞ্চলিক ইস্যুকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে তৃণমূল৷

নেতা পরিচিতি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ৫ জানুয়ারি, ১৯৫৫, কলকাতায়৷ কালীঘাটের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে৷

দক্ষিণ কলকাতার বাসন্তী দেবী কলেজ থেকে কর্মশিক্ষায় স্নাতক. তারপর যোগেশ চন্দ্র কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি৷

সত্তরের দশকে কংগ্রেস কর্মী হিসেবে রাজনীতির শুরু৷ যুক্ত ছিলেন কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সঙ্গে৷

১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর কেন্দ্রে হেভিওয়েট প্রতিপক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে সবার নজর কাড়েন মমতা৷ তিনি তখন জাতীয় সংসদের কনিষ্ঠতম সদস্য৷

১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দেশজোড়া কংগ্রেসবিরোধী হাওয়ায় হার হয় মমতার৷ আবার জিতে ফেরেন ১৯৯১ সালের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে, দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে. পরের চারটি নির্বাচনেই তিনি এই কেন্দ্র নিজের দখলে রেখেছেন৷

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও-এর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মানব সম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের দায়িত্ব পান মমতা৷ কিন্তু ক্রীড়াবিদদের প্রতি সরকারি অবহেলার প্রতিবাদে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা করেন মমতা৷ ১৯৯৩ সালে তাঁকে মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷

কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের প্রতি সরকারের অবহেলায় আদৌ খুশি ছিলেন না মমতা৷ পরবর্তী বছরগুলিতে সংসদে তাঁর আচরণে বারবার সেটাই প্রকাশ হয়ে পড়ে৷ বহুবার প্রতিবাদে সোচ্চার হন মমতা৷

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস কার্যত প্রধান শাসকদল সিপিএম-এর তাবেদারি করছে, এই অভিযোগ তুলে ১৯৯৭ সালে নতুন দল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন মমতা৷ অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসেন৷ জন্ম নেয় তৃণমূল কংগ্রেস৷

১৯৯৯ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারে যোগ দেয় মমতার তৃণমূল কংগ্রেস. মমতা রেলমন্ত্রী হন৷

২০০১ সালে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রেলমন্ত্রীর পদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন মমতা৷ বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যস্তরে জোট গড়েন কংগ্রেসের সঙ্গে৷ কিন্তু সেই জোট সফল হয়নি৷

২০০৪ সালে আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেন মমতা৷ এবার কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্বে৷ সেই বছরই লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র মমতা বাদে দ্বিতীয় কোনও তৃণমূল প্রার্থী জিততে পারেনি৷ এন ডি এ জোট ক্ষমতাচ্যুত হয়৷ সরকার গড়ে বাম সমর্থিত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ জোট৷

২০০৫ সালে কলকাতা পুরসভাও তৃণমূলের হাতছাড়া হয়৷ পরের বছর বিধানসভা নির্বাচনেও খারাপ ফল করে তৃণমূল৷ অর্ধেকেরও বেশি আসন তাদের হাতছাড়া হয়৷

পশ্চিমবঙ্গে জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফা শিল্পায়নের বিরুদ্ধে ২০০৫সাল থেকেই আন্দোলন গড়তে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস৷ প্রথমে নন্দীগ্রাম, তারপর সিঙ্গুরে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ধাক্কা খায়৷ একের পর এক সরকার বিরোধী আন্দোলনের সুবাদে নিজের হারানো জমি খুঁজে পায় তৃণমূল৷

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের সামনে নতুন করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়. জোট গড়েছেন কংগ্রেসের সঙ্গে৷ এই ভোটে বিরোধী জোট সাফল্য পেলে সময়ের আগেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দাবি তুলবেন তিনি৷