দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর নীতি
দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শান্তি ও আপোষের ‘‘সূর্যালোক নীতি’’-তে বিশ্বাসী৷ অপরদিকে রয়েছে সৌলের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট সত্ত্বেও গোটা এলাকায় চীনের প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা৷
মুন জে-ইন ও তাঁর স্ত্রী কিম ইয়ুং-সুক
৬৪-বছর-বয়সি মুন-এর সাবেক পেশা ছিল মানবাধিকার আইনজীবীর৷ ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি পার্ক গুন-শে-র কাছে স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হন৷ উদারপন্থি হিসেবে তিনি ২০০০-এর দশকের ‘‘সানশাইন পলিসি’’-তে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ও ২০০৭ সালে দ্বিতীয় কোরীয় শীর্ষবৈঠক আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা নেন৷
দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত পার্ক গুন-শে
দক্ষিণ কোরিয়ার একাদশতম এবং প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন-শে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালে অবধি ক্ষমতায় ছিলেন৷ তাঁর ‘ইম্পিচমেন্টের’ ফলে গত ৯ই মে মধ্যকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমা ও রকেট কর্মসূচি
পার্কের আমলে দুই কোরিয়ার সম্পর্কের নাটকীয় অবনতি ঘটে – অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার আণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা ও সেই সঙ্গে বোমা নিক্ষেপের উপযোগী রকেট তৈরির উদ্যোগ চলতে থাকে৷
যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন
দুই কোরিয়ার উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে সবার আগে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের উপর: তাদের শঙ্কা, দুই কোরিয়ার যুদ্ধে এবার আণবিক বোমা ব্যবহার করা হতে পারে৷ বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার যুবসমাজ মুন জে-ইন-এর আপোশমূলক মনোভাবের সমর্থক৷
যৌথ মহড়া
‘কি রিজল্ভ’ ও ‘ফোল ইগল’ নাম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাৎসরিক যৌথ সামরিক মহড়া এ-বছর (২০১৭) শুরু হয় পয়লা মার্চ তারিখে৷ পিয়ংইয়াং-এর আশঙ্কা, এর মাধ্যমে তাদের নেতা কিম জং-উন ও তাঁর পারিষদদের অপসারণ করার মহড়া চলেছে৷
আন্তঃ-কোরীয় সীমান্তে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
মাইক পেন্স পানমুনজম গ্রামের কাছে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’-এর একটি অবজারভেশন পোস্টে যান তাঁর দক্ষিণ কোরিয়া সফরের অংশ হিসেবে: তারিখটা ছিল ২০১৭ সালের ১৭ই এপ্রিল৷ পেন্স ইতিপূর্বে ঘোষণা করেন যে, উত্তর কোরিয়ার কার্যকলাপের ফলে ‘‘রণকৌশলগত ধৈর্যের দিন শেষ হয়েছে’’৷
‘থাড’ রকেট বিধ্বংসী প্রণালী
‘থাড’ মানে ‘টার্মিনাল হাই-অল্টিচুড এরিয়া ডিফেন্স’৷ এই সর্বাধুনিক মার্কিন রকেট প্রতিরক্ষা প্রণালী ৯ই মে-র মধ্যকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তাড়াহুড়ো করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হয়, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ তার কারণ সম্ভবত এই রকেট প্রতিরক্ষা নিয়োগের ব্যাপারে মুন জে-ইন-এর মনোভাব – দেশের জনগণের একাংশ দৃশ্যত যে মনোভাবের সমর্থক৷ ‘থাড’-এর মালমশলা নিয়ে আসার সময়েই প্রতিবাদের অবতারণা ঘটে৷
চীনের কূটনীতিক জয়?
কোরীয় উপদ্বীপ তো বটেই, সেই সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগর এলাকা জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে নৌ-আধিপত্যের প্রতিযোগিতা চলেছে, তা’তে চীনের সর্বাধুনিক সংযোজন তার প্রথম স্বদেশে নির্মিত বিমানবাহী পোত ‘লিয়াওনিং’৷ কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় মুন জে-ইন-এর জয় ও উত্তর কেরিয়ার প্রতি তাঁর নরম পন্থা চীনের প্রভাব বৃদ্ধি করবে৷