1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
প্যানোরামাসাউথ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় হাঙর সংরক্ষণের অভিনব উদ্যোগ

২৩ মে ২০২৩

দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে নানা সামুদ্রিক জীবের সমাগম দেখা যায়৷ বিভিন্ন প্রজাতির হাঙর সংরক্ষণের লক্ষ্যে সেখানে এক উদ্যোগ চলছে৷ এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর সুফল হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4Rhzl
দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে সমাগম হওয়া নানা সামুদ্রিক জীবের মধ্যে অন্যতম হাঙর।
দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে সমাগম হওয়া নানা সামুদ্রিক জীবের মধ্যে অন্যতম হাঙর।ছবি: Michele Spatari/AFP

পরিযায়ী নীল হাঙর দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে প্রায়ই ঢুঁ মারে৷ ‘পাফাডার' জাতের লাজুক হাঙর এবং ‘গালি শার্ক' সমুদ্রের নীচে বাদামী অ্যালজির বনেই থাকতে ভালোবাসে৷ প্রায়২০০ প্রজাতির হাঙর এমন জলজ উদ্ভিদের মাঝে বাস করে৷ হাঙর বিশেষজ্ঞ রায়ান ডালি নিয়মিত এই প্রাণীার কার্যকলাপের উপর নজর রাখেন৷ তাঁর মতে, ‘‘হাঙর সংরক্ষণ করতে হলে তাদের গতিবিধি, তারা কোথায় সময় কাটায়, সেসব আমাদের জানতে হবে৷ আমরা এই সব হাঙরের পিছু নিয়ে তাদের ‘ক্রিটিকাল হ্যাবিট্যাট' চিহ্নিত করতে পারি৷ তারপর সেই এলাকায় সুরক্ষার উন্নতি করতে পারি৷''

তিনি ও তাঁর টিম হাঙরের গায়ে অ্যাকুস্টিক ট্রান্সমিটার লাগিয়ে প্রাণীগুলির গতিবিধির উপর নজর রাখেন৷ হাঙর সেই প্রক্রিয়া প্রায় টেরই পায় না৷ একবার ‘ট্যাগ' করা হলে ট্রান্সমিটার ছয় বছর পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে পারে৷ রায়ান ডালি জানালেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমরা দশ থেকে বারো প্রজাতির একশোরও বেশি হাঙরের শরীরে ট্রান্সমিটার বসিয়েছি৷ সেগুলির মধ্যে কয়েকটি লুপ্তপ্রায় প্রজাতি৷ কয়েক বছর ধরে সেই প্রাণীর গতিবিধির উপর নজর রেখে তাদের জন্য ‘ক্রিটিকাল এরিয়া' শনাক্ত করার আশা করছি৷''

ট্যাগ করা হাঙরের সংকেত গ্রহণ করতে সমুদ্রের তলদেশে দেড়শোরও বেশি রিসিভার বসানো হয়েছে৷ হাঙর সেগুলির মধ্যে কোনো একটির কাছ দিয়ে গেলেই রিসিভার সেটির আইডি নম্বর নথিভুক্ত করে৷ সিগন্যালের পরিধি এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত৷ সেই অ্যাকুস্টিক রিসিভারগুলি নিয়মিত ডাঙায় তুলে এনে সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়৷ হাঙর বিশেষজ্ঞ হিসেবে রায়ান ডালি বলেন, ‘‘এই রিসিভারে তথ্য পেতে আমাদের সহযোগীদের বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করতে হয়৷ ফলে আমাদের সংগৃহিত সব তথ্য এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়৷ আমরা দেখতে পাই, হাঙর কোথায় গেছে, কোথায় সময় কাটিয়েছে৷ এভাবে আমরা এই প্রাণীর সংরক্ষণের জায়গাকে অগ্রাধিকার দিতে পারি৷''

যতকাল হাঙর সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতি জনসমর্থন থাকবে, এই কর্মসূচি ততদিন চালানো সম্ভব হবে৷ বয়স কম থাকতেই মানুষ সমুদ্রের এই শিকারি প্রাণীকে ভয় করে আসছে৷ হাঙরের প্রতি সার্বিক মনোভাবে পরিবর্তন এলে তবেই এই প্রাণীর সংরক্ষণ কাজ করবে৷ তার জন্য সচেতনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷ শার্ক এডুকেশন সেন্টারের জাস্টিন সোয়ার্ৎস বলেন, ‘‘মানসিকতা বদলে আমি পৃথিবীও এক ধাপ বদলে দিচ্ছি বলে বিশ্বাস করি৷ ৪০ জন শিক্ষার্থীর এক গ্রুপ পেয়ে একটি মাত্র শিশুর মানসিকতা বদলাতে পারলে, অথবা তারা বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হাঙরের গুরুত্ব তুলে ধরলে আমরা ইতোমধ্যেই পরিবর্তন আনছি বলে মনে করি৷''

হাঙর সংরক্ষণে ট্রান্সমিটার

সংরক্ষণবাদীরা টোপের মধ্যেও পানির নীচের ক্যামেরা বসিয়ে আরো ছোট ও লাজুক হাঙর পর্যবেক্ষণ করছেন৷ উপকূল থেকে কিছুটা দূরে বাদামী অ্যালজির জঙ্গলে সেগুলি বিচরণ করে৷ টোপের লোভে সেই প্রাণী আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে৷ তখন গবেষকরা মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে মূল্যবান চিত্র পেতে পারেন৷

টিমের তৈরি একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা ফলাফল বিশ্লেষণ করতে পারেন৷ কেপ আরএডিডি সংগঠনের ডায়লান ইরিয়ন বলেন, ‘‘আমরা একটি ওপেন সোর্স মেশিন লার্নিং সফ্টওয়্যার নিয়ে সেটিকে ফল্স বে এলাকার হাঙর ও অন্যান্য প্রজাতির মাছের কয়েকশো ছবি দেখিয়েছি৷ ভবিষ্যতে ভিডিও থেকে সেই সব প্রজাতি শনাক্ত করতে সেই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে চাই৷''

তাঁদের গবেষণা ইতোমধ্যেই অত্যন্ত গঠনমূলক প্রমাণিত হয়েছে৷ হাঙর সংরক্ষণের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মহাসাগর এলাকায় সংরক্ষিত অংশের অনুপাত পাঁচ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সুরক্ষার লক্ষ্যে সংরক্ষণবাদীরা সেই অনুপাত আরো বাড়াতে চান৷

জেসন বসওয়েল/এসবি