1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণ অ্যামেরিকায় সীমানা বন্ধ, ভ্রমণে অরাজকতা

১৮ মার্চ ২০২০

কোভিড-১৯ এর কারণে এবার দক্ষিণ অ্যামেরিকা তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিচ্ছে৷ যে ক'টি ফ্লাইট ইউরোপে ফিরছে, তাতেই কোনরকমে ফিরতে চাইছেন আটকে পড়া জার্মানরা৷ 

https://p.dw.com/p/3ZdyO
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Kaufhold

রোববার সকালে ২৩ বছর বয়সী কারা যখন পেরুর লিমা থেকে ইকুয়েডরের কুইটোর ফ্লাইটটি নেন, তখনও তিনি জানেন না পরের কানেকটিং ফ্লাইটটি ধরতে পারবেন কি না৷ তিনি কোনভাবেই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না যে ইউরোপ ফিরতি কোন ফ্লাইট তার কপালে লেখা আছে কি না, না কি বিমানবন্দরে বসে থাকবে হবে অনির্দিষ্টকাল৷ 

পেরু ও বহির্বিশ্বের মধ্যকার বিমান চলাচল ৩০ দিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা কার্যকরের দিনটিও ছিল রোববার৷ লক্ষ্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো৷ জার্মানির হামবুর্গ থেকে আসা শিক্ষার্থী কারার জন্য তাই কুইটোর ফ্লাইটটি দেশে ফেরার শেষ সুযোগ৷ 

‘‘লিমায় বিমান কর্মকর্তারা ধারণা করছেন ইকুয়েডরেও এমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে,'' কারা বলেন৷ ‘‘লাটাম এয়ারলাইন্সের এক কর্মচারী আমাকে বলেন যে, কুইটোতে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নাও হতে পারে৷ সেখানে আমাকে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হবে পারে৷''

কিন্তু কারা সুযোগটি হাতছাড়া করতে চান না৷ তিনি কুইটো থেকে স্পেনের একটি কানেকটিং ফ্লাইট বুক করেছেন৷ এতে কাজ হয়েছে৷ পরে জানা গেল, কোয়ারান্টিনে তাদেরই দেয়া হচ্ছে, যারা বিমানবন্দরের বাইরে যাচ্ছেন৷ সেদিন সন্ধ্যায় তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে এবং তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে অবশেষে মাদ্রিদের উদ্দেশে তার ইবেরিয়া ফ্লাইটটি রওনা করল৷

সীমানা বন্ধ করল দক্ষিণ অ্যামেরিকা

দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এই মুহূর্তে বহু জার্মান কারার মত অবস্থায়৷ তিহুয়ানা থেকে তিয়েরা দেল ফুয়েগো পর্যন্ত ঘন্টায় ঘন্টায় যাতায়াতের ওপর কড়াকড়ি বাড়ানো হচ্ছে৷ এই কড়াকড়ি কমপক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিন থেকে পুরোপুরি বন্ধ করা পর্যন্ত৷ ইউরোপে বিমান ছেড়ে যাওয়ার ওপরও কড়া নিয়ম আরোপ করা হচ্ছে৷

আর্জেন্টিনা, পেরু, পানামা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে৷ হাইতি প্রতিবেশী ডমিনিকান রিপাবলিকের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করেছে৷ কলম্বিয়া বন্ধ করেছে প্রতিবেশী ভেনিজুয়েলার সঙ্গে৷ বুধবার চিলি ১৫ দিনের জন্য বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে৷ অন্যান্য দেশগুলো জরুরি অবস্থা জারি করেছে৷

ঘটনাগুলো এত জলদি ঘটেছে যে জার্মান ব্যবসায়ী, পর্যটক ও অন্য ভ্রমণকারীরা বিপাকে পড়েছেন৷ সীমান্ত বন্ধের বিষয়টি যখন গত সপ্তাহে আলোচনায় আসা শুরু করে তখন অনেক জার্মান ইউরোপের ফ্লাইটের টিকেট বুক করা শুরু করেন৷ কিন্তু চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত টিকেট না থাকায় এবং করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সারাক্ষণ হটলাইটগুলো ব্যস্ত থাকায়, একটা সংকট তৈরি হয়৷ এমনকি বাড়তি চাপের কারণে অনেক কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমই ক্র্যাশ করে৷ এতে করে টিকেট বুকিং কঠিন হয়ে পড়ে৷

সপ্তাহান্তে জট আরো বেড়ে যায়৷ এমনকি এয়ারলাইনগুলোতে যোগাযোগই কঠিন হয়ে পড়ছিল৷ বিশেষ করে এল সালভাদরকে অনুসরণ করে একে একে দেশগুলো যখন সীমান্ত বন্ধ করছিল তখন এয়ারলাইন্সগুলোর তালিকা থেকে বিমানবন্দরগুলো মুছে যাচ্ছিল৷ 

ল্যাটিন অ্যামেরিকায় শূন্য ফ্লাইট, ইউরোপমুখে ভর্তি

বৃহস্পতিবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস ঘোষণা দেন যে বিদেশে অবস্থানরত হাজারো জার্মানকে দেশে ফেরত আনতে পাঁচ কোটি ইউরো খরচ করা হবে৷ কিন্তু বিষয়টি এখনো ততটা গুছিয়ে ওঠেনি৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকায় অবস্থানরত জার্মানরা তাকিয়ে আছেন সেখানে আসা খালি ফ্লাইটগুলোর দিকে৷ যেমন, লুফথানসা সম্প্রতি ১৫ চার্টার জেটে করে প্রায় চার হাজার জার্মান নাগরিককে বারবাডোস ও ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে ফেরত এনেছে৷ কাজটির জন্য কয়েকটি ক্রুজ শিপ ও পর্যটন কোম্পানি লুফথানসার সঙ্গে চুক্তি করে

সর্বোপরি, এয়ারলাইন্সগুলোকে ঠিক করতে হবে এভাবে বিমান চলাচল চালু রাখা কতটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে৷ এই কাজের জন্য তাদের অল্প সময়ে বাড়তি লোকবলও নিয়োগ দিতে হচ্ছে৷

সোমবার রাতে কারা হামবুর্গে ফিরে আসেন৷ ‘‘শেষ তিনটি দিন খুবই উদ্বেগজনক ছিল,'' বলেন তিনি৷ ‘‘তবে আমি সৌভাগ্যবান যে ফিরতি ফ্লাইটের টিকেট কেনার সামর্থ্য আমার আছে৷''

তিনি বলেন, দক্ষিণ অ্যামেরিকা, ইউরোপ বা যেখানেই হোক করোনা ভাইরাসের কারণে হুট করে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় একটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘তবে যারা ভেনিজুয়েলা ছাড়তে চেয়েও পারেননি, তারা আসলেই খুব বিপদে পড়েছেন৷''

অলিভার পিপার/জেডএ