‘থানায় যাওয়ার পথে’ নিখোঁজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী
৩১ অক্টোবর ২০২০পরিবার জানায়, ২৪ অক্টোবর রাতে পল্লবী থানার একজন সাব ইন্সপেক্টর তিথিকে পরদিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর সকালে থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করতে বলেন৷ পল্লবীর বাসা থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় থানার উদ্দেশ্যে বের হন তিথি৷ এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ পুলিশ এখনও তার কোন সন্ধান জানাতে পারেনি৷
তার আগে একটি ফেসবুক পোস্টে ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে তিথিকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে কিছু শিক্ষার্থী৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিথির ফেসবুক স্ট্যাটাসের কিছু স্ক্রিন শট ভাইরাল করে তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলা হয়৷
তবে তিথি আগেই তার ফেসবুক আইডি হ্যাকের অভিযোগ করে পল্লবী থানায় জিডি করেছিলেন৷ জিডিতে নিজের ক্ষতিরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি৷
নিখোঁজ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হসিবে দায়িত্বরত তিথিকে এ অভিযোগে সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়৷
তিথির বড় বোন স্মৃতি সরকার জানান, ‘‘২৪ অক্টোবর রাতে থানা থেকে একজন সাব ইন্সপেক্টর এসে বলেন ২৫ অক্টোবর সকালে তিথি সরকার যেন পল্লবী থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করেন৷ ওসির সাথে দেখা করার জন্য পল্লবীর বাসা থেকে ২৫ তারিখ সকাল ৯টায় বের হন তিনি৷ এর কিছুক্ষণ পর থেকেই তিথির মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়৷'' পরদিন সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে তাকে না পেয়ে ২৭ অক্টোবর থানায় জিডি করেন তারা৷ এই প্রতিবেদকও ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় তিথির মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পান৷
স্মৃতি সরকার জানান, তিথি ২৩ অক্টোবর তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার কথা জানতে পারেন৷ তবে কবে হ্যাক হয়েছে তা জানতে পারেননি৷ এরপর তিনি থানায় একটি জিডি করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘আমারা চার ভাই বোন৷ মা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে৷ অসুস্থ বাবা তিথির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আরও ভেঙে পড়েছেন৷ এখন অপেক্ষা করছি কখন তিথিকে পাওয়া যাবে৷ থানা থেকে আমাদের বলা হয়েছে তারা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন৷''
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল জানান, ‘‘তার বোন আমাকে কয়েক দিন আগে ফোন করে তিথি নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন৷ আমরা তাকে থানায় অভিযোগ করে পুলিশের সহায়তা নিতে বলেছি৷ আমাদের কোনো সহায়তার দরকার হলেও জানাতে বলেছি৷ আমরা তার পরিবারকে সাধ্যমত সহায়তা করব৷ এরপর তাদের কেউ আর যোগাযোগ করেনি৷''
তিথিকে সাময়িক বহিস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ তবে সে কী ধরনের কটূক্তি করেছে আমি তা বলতে পারব না৷ এটা আইটি বিশেষজ্ঞরা দেখছেন৷ এ ব্যাপারে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, তারা এটা দেখছেন৷ তাদের রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে৷ রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করবে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তার অস্থায়ী বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে৷''
তিথির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা নিয়ে কোথাও কোনো মামলা হওয়ার খবর জানা যায়নি৷ প্রক্টর বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি৷ তবে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে করেছেন কিনা তা আমাদের জানা নাই৷''
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমজাদ আলীকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷
তবে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবু সাঈদ আল মামুন জানান, ‘‘তার (তিথির) নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আমাদের থানায় একটি জিডি করা হয়েছে৷ আমরা এখনো তার কোনো খোঁজ পাইনি৷ আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি৷ এ ব্যাপারে আমরা কোনো ক্লু এখনো পাইনি৷''
তিনি বলেন, জিডিতে থানার ওসি সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার কথা বলা হলেও তিথি ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে থানায় আসেননি৷ ‘ধর্ম অবমাননার' ব্যাপারে পল্লবী থানায় তিথিরি বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই বলে জানান তিনি৷