1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তেঁতুল যেন নৌকায় না চড়ে

১২ জানুয়ারি ২০১৯

মেয়েদের একেবারেই পড়াশোনা করতে দিতে চান না আল্লামা শফী হুজুর৷ খুব বেশি হলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো যেতে পারে৷ এ যুগে এসেও এমন কথা যে বলা যায়, এবং প্রতিউত্তরে ‘জ্বি জ্বি' শোনা যায়, এ ব্যর্থতা কার?

https://p.dw.com/p/3BS6I
ছবি: bdnews24.com

আমরা সবসময়ই সবকিছু বিবেচনা করি শহুরে মতের পরিপ্রেক্ষিতে৷ ফলে শফী হুজুরের বক্তব্যের যে তীব্র প্রতিবাদ ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে অনেককেই খুশি হতে দেখছি৷ কিন্তু বিশাল যে জনগোষ্ঠী মাওলানা শফীর বক্তব্যের টার্গেট গ্রুপ, তাঁরা কি আমরা? মোটেও না৷

শীতকাল এলেই শহর-গ্রামে চলতে থাকে একের পর এক ওয়াজ মাহফিল৷ কৌতুহল থেকে এর কয়েকটিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে৷ মূলত, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষই সেখানে যান৷ আর তাঁরাই জনসংখ্যার বড় অংশ৷

কী পরিমাণ বিশ্বাস নিয়ে তাঁরা সেখানে যান, সেটা তাঁদের চোখ ও মুখের অভিব্যক্তি দেখলেই বোঝা যায়৷ কী ধরনের কথা বেশিরভাগ ওয়াজে হয়ে থাকে, কেন সেগুলোই বিশেষ করে বলা হয়ে থাকে, তা-ও বোঝার চেষ্টা করেছি৷

কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম টার্গেট করে কথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়৷ কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, ফলে এখানে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মভিরু মুসলিমদেরই বিভ্রান্ত করার হার বেশি৷

ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক অনেক৷ সেটা আলাদা রাখতে পারলে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো বৈ মন্দ হতো না৷ কিন্তু এজন্য যে বিপুল সাহস ও শক্তি প্রয়োজন, তা না থাকায় অপেক্ষাকৃত সহজ পথ বেছে নিয়েছে বাংলাদেশের দলগুলো৷ ফলে আমরা দেখছি, সব দলই ধর্মীয় শক্তি থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা না রাখে বরং আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানোরই প্রক্রিয়া শুরুর করেছে

এখন সারাজীবন সমাজতন্ত্রের বুলি আওড়ে নেতাদের ঘটা করে হজ পালন আমরা করতে দেখেছি, তথাকথিত সেক্যুলার দলের ধর্ম কাজে লাগানো নানা শক্তির সাথে হাত মেলাতেও দেখেছি৷ এতে সমস্যা হতো না, যদি আদর্শগতভাবে এদের মোকাবেলার বদলে বারবার আপোশের পথ বেছে না নেয়া হতো৷

আমরা দেখেছি, মাদ্রাসা ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বিমানবন্দর মোড় থেকে বাউল ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে৷ সরকার নতি স্বীকার করেছে৷ সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে৷ সরকার নতি স্বীকার করেছে৷ চাপের মুখে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়েছে অমুসলিম লেখকদের নানা রচনা৷ সরকার নতি স্বীকার করেছে৷

একসময় নারী নেতৃত্ব হারাম ঘোষণা করেছিল নানা ধর্মভিত্তিক দল৷ কিন্তু দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতা নারী হওয়ায়, তা আর হালে পানি পায়নি৷ কিন্তু তাই বলে কি সে ভাবনাটা দূর হয়ে গেছে? একেবারেই না৷ বরং আগের মতো প্রকাশ্যে না বললেও সমাজে এর প্রচার ঘটেই চলেছে৷

HA Asien | Anupam Deb Kanunjna
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

আদর্শের লড়াই আদর্শ দিয়েই হওয়া উচিত৷ কিন্তু শফী হুজুরের মতো মানুষেরা সে আদর্শিক লড়াইয়ের মুখে পড়ছেন তো না-ই, বরং, তাদের ‘না চটানোর' নীতি ধীরে ধীরে গ্রামীণ সমাজে তাদের আরো শক্তিশালী করে তুলছে৷

একদিকে সরকার নারীদের এগিয়ে আসতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতেও৷ অন্যদিকে সেটাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছেন শফী হুজুররা, ‘মেয়েদের গার্মেন্টসে কাজ করা হারাম', ‘পড়াশোনা করা হারাম' থেকে শুরু করে নানা ফতোয়া দিয়ে৷

প্রতিদিন আমরা নানা মন্ত্রী, রাজনীতিবিদের মুখে প্রতিপক্ষ নিয়ে অনেক কড়া কড়া বুলি শুনি, অথচ এই নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ যেন দায়সারা৷

আমরা নারী নির্যাতন, নারীর সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত৷ কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য কি এসবকেই উসকে দিচ্ছে না? ‘নারীর কাজ স্বামীর টাকার হিসেব রাখা', ‘বেশি পড়াশোনা করলে অন্য পুরুষ তাঁকে নিয়ে যাবে' - এই বক্তব্যগুলো মাহফিলে উপস্থিত পুরুষদের কী বার্তা দেয়? বাড়ি ফিরে তাঁরা পরিবারে কী প্র্যাক্টিস করেন?

তারপর যখন আমরা দেখি, এরা সরকারের পক্ষ থেকেও ক্রমাগত আসকারা পাচ্ছে, সেটাই বা কী বার্তা দেয়?

ক্ষমতা রক্ষায় আপোশের নীতি একদিন বুমেরাং হলে, তখন সেটা প্রতিহত করার শক্তি থাকবে তো?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান