1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৃণমূলের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজাতে পারবে বিজেপি?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ নভেম্বর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিয়েছেন অমিত শাহ৷ বিজেপি শীর্ষ নেতার হুঙ্কার, তৃণমূলের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে৷ কিন্তু বিজেপি কি সত্যিই এতটা শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে?

https://p.dw.com/p/3kzEy
West Bengal Amit Shah Indien Wahlen
ছবি: Payel Samanta/DW

গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে বিজেপি৷ তার পর থেকেই এই রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের উৎসাহ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷ পদ্ম শিবিরের এক নম্বর ভোট সেনাপতি অমিত শাহ নির্বাচনি প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ সফর করলেন৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেমন হুঁশিয়ারি দিলেন, তেমনই চেষ্টা করলেন সাংগঠনিক স্তরে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বার্তা দিতে৷ আতিথ্য গ্রহণের মাধ্যমেও রাজনৈতিক বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি৷

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া ছিল শাহের গন্তব্য৷ সেখানে আদিবাসী বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি৷ শুক্রবার তিনি আহার গ্রহণের জন্য বেছে নেন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নবীন বিশ্বাসের বাড়িকে৷

নরেন্দ্র মোদীর আমলে আদিবাসী, দলিত ও সমাজের পশ্চাদপদ শ্রেণির মানুষের অধিকার খর্ব হয়েছে বলে যে অভিযোগ বিরোধীরা তুলছে, তার জবাব দিতে চেয়েছেন শাহ৷ এই শ্রেণির মানুষের সিংহভাগ ভোট গত লোকসভা নির্বাচনে গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে৷ আবার মতুয়া সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিজেপি কাছে টানলেও তা এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি৷ আইন পাস হলেও তা কার্যকর হয়নি৷ দলীয় সাংসদ শান্তনু ঠাকুরই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মতুয়াদের বার্তা দিতে ঠাণ্ডা মাথায় এই সম্প্রদায়ের মানুষের আতিথ্য নিয়েছেন তিনি৷

যদিও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এভাবে জাতপাতের প্রশ্নে নির্ধারিত হয় না৷ এ জন্য শাহকে আক্রমণ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ তাঁর অভিযোগ, জাতপাত আমদানি করা হচ্ছে এখানে৷ তার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া হচ্ছে৷ এটা পশ্চিমবঙ্গে অতীতে ছিল না৷ এ জন্য তৃণমূল ও বিজেপি উভয় পক্ষকেই দায়ী করেন তিনি৷

‘মধ্যাহ্নভোজনের মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছেন’

আদিবাসীর বাড়ির মেঝেয় বসে শাহের ভোজনকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল ও সিপিএম৷ তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী একসুরে প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপি কী করেছে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য৷ সমালোচনার শিকার হয়ে বিজেপি এখন এই সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ এই পদক্ষেপ কতটা কাজে আসবে, তা আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের ফলে বোঝা যাবে৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে যে ভোট বিজেপি পেয়েছে, তা ধরে রাখতেই হবে৷ তার উপর বাড়তি ভোট কাড়তে হবে৷ আদিবাসীদের উপর নির্যাতন নিয়ে দেশজুড়ে হইচই চলায় শাহ মধ্যাহ্নভোজনের মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছেন৷ মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নটি ঝুলতে থাকায় তিনি ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ তাতে কতটা কাজ হয়েছে, ভবিষ্যৎ বলবে৷’’

মঙ্গলবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফল৷ প্রতিবেশী রাজ্যের ভোটে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ যে ভালো জায়গায় নেই, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে৷ এই ভোটে ক্ষমতা এনডিএ-র হাতছাড়া হলে তার প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গে৷ এমনিতেই বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে৷ সংগঠনকে সংহত করার লক্ষ্যে আগেভাগে বাংলা সফরে এসেছেন তিনি, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের৷ কর্মীদের মনোবল বাড়াতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করতে চায়৷ তাদের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে৷ এখানে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে৷’’ সঙ্গে এর জবাব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উৎখাত করে দেওয়ার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷

অতীতে ব্রিগেড ময়দানে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে হঠানোর ডাক দিয়ে মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিলেন সেই সময়ের বিরোধী নেত্রী মমতা৷ যদিও বামেরা আরো অনেক বছর ক্ষমতায় ছিল৷ আগামী বছর কি বিজেপি সত্যি পারবে? অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসুর মন্তব্য, ‘‘এটা বলার সময় এখনো আসেনি৷ লোকসভা ভোটে মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে দেখে ভোট দিয়েছে৷ কিন্তু এখানে সেই অর্থে বিজেপির জনপ্রিয় নেতৃত্ব নেই৷ সংগঠনকে একজোট রেখে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মোকাবিলা করা অমিত শাহের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জের৷’’