1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুরস্কে নিয়ন্ত্রণহীন শিশু গর্ভধারণ

২২ নভেম্বর ২০১৮

নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত দেড় বছরে ২২ হাজার অন্তঃসত্ত্বা শিশু ভর্তি হয়েছে তুরস্কের বিভিন্ন হাসপাতালে৷ তবে এ সংখ্যাও বাস্তবের চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/38hK9
Türkei Demo gegen Gesetzvorschlag zum Kindesmißbrauch
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul

২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা শিশুর সংখ্যা ২১,৯৫৭৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্সি ডিরেক্টরেট অফ কমিউনিকেশন এ তথ্য জানিয়েছে৷

দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির আইনপ্রণেতা ও চিকিৎসক আলী সেকের ডিরেক্টরেটের কাছে এ বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই তথ্যে এটাই প্রমাণিত হয়, প্রতিদিন তুরস্কে ৪০ জনেরও বেশি শিশুকে গর্ভধারণে বাধ্য করা হচ্ছে৷ তাঁরা নিজেরাই শিশু, এবং তাঁদের এখন স্কুলে যাওয়ার বয়স৷''

তুরস্কে শিশু গর্ভধারণের সঠিক অবস্থা জানতে এটিই সেকেরের প্রথম প্রচেষ্টা নয়৷ এ বছরের শুরুতে পার্লামেন্টেও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি৷ দু'টি হাসপাতালে নিবন্ধন ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বা শিশুদের ভর্তি করার সংবাদ তখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়৷ ১১৫ অন্তঃসত্ত্বা শিশুর মধ্যে ৩৮ জনের বয়স ছিল ১৫ বছরের কম৷

সে সংবাদের ভিত্তিতে সেকের এক লিখিত প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা কেনো এ বিষয়ে পুলিশকে জানায়নি৷ তবে তথ্য জানতে চেয়ে করা তাঁর এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি পার্লামেন্ট৷

আসল পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ

আঙ্কারা বার অ্যাসোসিয়েশনের সেন্টার ফর চিলড্রেনস রাইটস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এমরাহ সাহিন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এই ২১,৯৫৭টি ঘটনা কি পুলিশকে জানানো হয়েছে?'' তুরস্কের পেনাল কোডের বরাত দিয়ে সাহিন জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক গর্ভধারণের তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বাধ্য৷

পুলিশকে সব ঘটনা না জানানোয় এ ধরনের ঘটনা আসলে কী পরিমাণ ঘটেছে, তা জানাও কষ্টসাধ্য বলে মনে করেন সাহিন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সংখ্যা কেবল নিবন্ধিতদের৷ অনিবন্ধিত গর্ভধারণের তো কোনো হিসেবই নেই৷'' আসল সংখ্যা ৪০ থেকে ৪৫ হাজারের মধ্যে হবে বলেও আশংকা তাঁর৷

তুরস্কের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে এই ১৮ মাসে শিশু গর্ভধারণ ও শিশু যৌন নির্যাতনে দায়ের মামলার হিসেবে কিছুটা গরমিল দেখা দিয়েছে৷

আট কোটি মানুষের দেশটিতে ২০১৭ সালে শিশু যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৩৫,৮৯৬টি৷ ফলে শিশু গর্ভধারণের ঘটনাগুলোর কয়টি আসলেই পুলিশকে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই৷

তুরস্কে যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়স ১৮৷ ১৭ বছর বা তার কম বয়সের কেউ সম্মতি দিলেও আইন অনুযায়ী তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে৷

দেশটিতে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ হলেও ১৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করতে পারেন৷

তুরস্কে, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায়, এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে৷ এ ধরনের ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা অবশ্য খুব কঠিন৷ সম্মতি থাক বা না থাক, কেবল গর্ভধারণের পর হাসপাতালে ভর্তি হলেই এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের খবর জানা যায়৷

জাতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১৫ বছরের কম বয়সি মেয়ের সন্তান জন্মদানের ঘটনা ঘটেছে ২৩৪টি৷ ১৫ থেকে ১৭ বছরের মেয়ের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১৬,৩৯৬টি৷

সামাজিক সমস্যা

যৌন অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স৷ সংস্থার সদস্য হিলাল এসমার বলছেন, ‘‘শুধু সংখ্যা নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গী থেকেও এইসব ঘটনার বিশ্লেষণ দরকার৷''

তাঁর মতে, শুধু সংখ্যা নিয়ে পড়ে থাকলে শিশু অধিকার, জোর করে বিয়ে দেয়া, যৌন সম্পর্কে সম্মতি এবং বাল্যবিবাহের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা পড়বে

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি শিশু গর্ভধারণের সংখ্যা কমাতে চাই, তাহলে আমাদের আগে শিশুদের তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে৷ সবাইকে বুঝতে হবে, শিশুরা তাঁদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি নয়৷''

চাগো ও্যজদেমির, ডেফনে আলটিওক/এডিকে