বাংলাদেশের চার বছর বয়সি একটি শিশু রহস্যময় জটিল রোগের কারণে দেখতে বুড়োদের মতো হয়ে গেছে৷ এ তথ্যটি অনেক পাঠকের মনকেই প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে, যা তাঁরা জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায়৷
ফেসবুকবন্ধু জেরিন সুলতানা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রাণভরে দোয়া করছেন বায়েজিদকে সুস্থ করে দেওয়ার জন্য৷ ফেসবুকে বন্ধু আবুল কালামও সেই কামনাই করেছেন৷
তবে ডয়চে ভেলে থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটিতে শিশু বায়েজিদকে ‘বৃদ্ধ শিশু' লেখায় দুঃখ পেয়েছেন পাঠক জুয়েল৷ নিজের সে অনুভূতি তিনি প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘শিশু আবার বৃদ্ধ হয় কী করে? মাতৃগর্ভাবস্থায় এই শিশু হরমোনজনিত কারণে এ রূপ মুখাকৃতি ধারণ করেছে৷ তাই শিশুটি বুড়ো নয় বরং দেখতে বুড়ো৷ তাই বলা উচিত বৃদ্ধমুখো বা বুড়োমুখো শিশু৷''
বায়েজিদকে নিয়ে পাঠক আতিক আবদুল্লারও মত অনেকটা জুয়েল ইব্রাহিমের মতোই৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
শিশুর টিকা
শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে হুপিং কাশি, দিপথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হাম, মাম্স এবং জলবসন্তের টিকা ইত্যাদি অবশ্যই দিতে হবে৷ তাছাড়া আরো কিছু টিকা রয়েছে যেগুলো পরে কিশোর বয়সে আবারও নতুন করে দিতে হয়৷ শিশুর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি টিকাই নির্দিষ্ট সময়ে দেয়া প্রয়োজন৷ তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু শিশুরোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক৷ যেমন হাম৷ জার্মানির শিশু-কিশোর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডা. এসারের ভাষায়, ‘‘অনেকের ধারণা হাম ক্ষতি করে না৷ অথচ এটি একটি সংক্রমণ রোগ, যা নার্ভ বা স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে৷ হামের পর শতকরা ১০ জন শিশুর মস্তিষ্কের তরঙ্গে পরিবর্তন হয় আর অন্তত একজনের মাথায় থেকে যায় মানসিক ব্যাধির লক্ষণ৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
শিশুর জ্বর
প্রায়ই দেখা যায় কোনো অসুখ হওয়ার আগে শিশুদের জ্বর হয়৷ তাই জ্বরকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া বা নিজে থেকে জ্বরের ওষুধ দেয়া কখনোই উচিত নয়৷ তবে এক শিশুর জ্বর হওয়ার আগে যদি তার বড় বা ছোট ভাই-বোনের ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে দু-একদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
পান করতে না চাইলে
শিশুদের শরীরে তরল মজুদ রাখার সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তাই শিশু জল বা অন্য কোনো পানীয় পান করতে না চাইলে, খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের শরীরের ভেতরটা শুকিয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ তাই শিশু পান করতে না চাইলে বা অনেকটা সময় কোনো তরল পদার্থ পান না করে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
কথা না বলা, না হাঁটা, খেলা না করা বা কানে কম শুনছে মনে হলে খুব বেশি চিন্তা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷ কারণ সব শিশু একই বয়সে একই কাজ করে না৷ কেউ হয়ত ১০ মাস বয়সেই হাঁটতে শুরু করে আবার কেউ ১৪ মাসেও হাঁটে না৷ তাছাড়া অনেক শিশু হামগুড়ি না দিয়েই হাঁটতে শুরু করে৷ এ বিষয়গুলো অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
অযথা অসুখ খুঁজবেন না!
‘‘অকারণে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না৷ তবে কোনো কিছু অন্যরকম মনে হলে বা কোনো দ্বিধা থাকলে প্রয়োজনে নিজের মা বা মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন৷ সারাক্ষণ শিশুকে অসুস্থ মনে করলে বা সে কথা তাকে বললে, তা শিশুমনে প্রভাব ফেলে৷ এবং পরবর্তীতে শিশুকে তা সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে৷’’ বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসার৷
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
নিজের মতো চলতে দিন
নিজের ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডা. এসার বলেন, ‘‘ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুকে বিরক্ত না করে, তাকে তার মতো চলতে এবং অন্য শিশুদের সাথে খেলতে দিন৷ খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, ওরা হয় ওঠে আত্মবিশ্বাসী৷ লক্ষ্য রাখুন শিশুর আগ্রহ কোন দিকে৷ কারণ বেশি জোড় করলে শিশু মনে তার প্রভাব পড়ে এবং মনোজগতে ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়৷’’
-
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে রাখুন
একটা শিশু কিন্তু বুঝতে পারে না, কী কারণে তার মা অন্যের সাথে টেলিফোনে বা সরাসরি বাবার বদনাম বা সমালোচনা করছেন৷ শিশুরা এ সব নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা আলোচনা করতে পারে না ঠিকই, তবে শিশুমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক দ্বন্দ্ব৷ তাই দাম্পত্য কলহ কখনই শিশুদের সামনে নয়! মা-বাবার ঝগড়া সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার
‘‘শিশু বায়েজিদের চিকিৎসা সফল হোক'' – এই কামনা পাঠক রেইনের৷ তিনি বায়েজিদকে লক্ষ্য করে লিখেছেন, ‘‘তুমিও একটি মিষ্টি বচ্চা, অন্যান্য শিশুদের মতোই৷ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো৷''
তবে সারা বিশ্বের বর্তমান অবস্থা নিয়ে পুরনো বন্ধু সোহেল রানার মনটা মনে হয় খুবই অস্থির৷ তাই হয়ত তিনি শিশু বায়েজিদের অসুখের ব্যাপারেও ভীত৷ তাঁর ধারণা, এগুলো নাকি ‘কেয়ামতের আলামত'৷
অন্যদিকে পাঠক সবুজ মিয়া, আলমগীর হোসেন, জামাল উদ্দিন, রিয়াদ, সানজিদা পারভিন মিতাসহ অনেকেই বায়েজিদ সিকদারের পরিবারের মতো আশা করছেন এবং দোয়া করছেন যাতে চিকিৎসকরা শিশুটিকে অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারেন৷
আর বন্ধু নুপুর সাঈদ শিশু বায়েজিদের চিকিৎসার আপডেট জানানোর অনুরোধ করেছেন ডয়চে ভেলেকে৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ