তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে
কলকাতা শুধু তাঁর জন্মস্থান নয়, কর্মস্থলও৷ শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি এই শহরেও তিনি রচনা করেছেন কালজয়ী সংগীত, প্রবন্ধ, নাটক ও কবিতা৷ ১৫৬তম জন্মদিবসেও কলকাতা নানাভাবে শ্রদ্ধা জানালো চির ভাস্বর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে৷
ফুল-মালায় শ্রদ্ধা নিবেদন
একসময় শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে গ্রামীণ রীতিতে আলপনা দিয়ে এবং চারদিকে চারটি কলাগাছ পুঁতে রবীন্দ্র জন্মোৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল৷ পরিবারের বাইরে সেটাই ছিল কবির প্রথম জন্মদিন৷ তাঁর জন্মদিন মানে ফুল-চন্দন-মাল্যের সমাহার৷
কবির জন্মস্থানের ছবি
ব্রাহ্ম পরিবার বলে জোড়াসাঁকোয় কখনও ঘটা করে কবির জন্মদিন পালিত হয়নি৷ ভাগ্নি সরলাদেবীর উদ্যোগেই কবির প্রথম জন্মদিন পালিত হয় বৌদি জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর বাড়িতে৷ ঠাকুরবাড়িতে কবির জন্মস্থানের ছবি৷
ঠাকুরবাড়ির বারান্দায় জন্মদিনের প্রথম আলো
রানি চন্দ লিখছেন, ‘‘আজ অনেক আগে থেকেই গুরুদেব বারান্দায় এসে বসেছেন, ফুলের ঠোঙাটি হাতে নিয়ে তা থেকে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ধীরে ধীরে বললেন, আজ আমার আশি বছর পূর্ণ হলো৷’’ ঠাকুরবাড়ির বারান্দায় পঁচিশে বৈশাখের সূর্যের প্রথম আলো৷
জন্মোৎসবের ভাষণে কবি
‘‘খ্যাতির কলরবমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা হয়েছে সেখানে স্থান নিতে আমার মন চায় না৷… আজ ফুলের ঋতু যাক, ফলের ঋতুও শেষ হোক, আজ নির্বিশেষে আপনাকে আপনার মধ্যে পূর্ণ করে তোলবার দিন৷’’
বাংলাদেশের হৃদয় হতে
রবীন্দ্র চেতনার রঙে রাঙা হয়ে ওঠে পঁচিশে বৈশাখ৷ কবি প্রবর্তিত ‘স্বদেশী মেলা’র অনুকরণে বসেছে লোকশিল্প মেলা৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার লোকশিল্প উঠে এসেছে জোড়াসাঁকো প্রাঙ্গণে৷
বাণিজ্যে কবির ছবি
১৯২৫ সালে শান্তিনিকেতনে কবির ৬৫তম জন্মদিন ছিল অভিনব৷ নিমন্ত্রণপত্রও ছাপা হয়েছিল৷ সে বছর মহাত্মা গান্ধী কবিকে অভিনন্দন জানান৷ কলকাতায় জন্মদিনের উৎসবে বিক্রি হচ্ছে কবির ছবি৷
ঘরে ঘরে রবি
বৈশাখের পঁচিশ মানেই কলকাতা রবীন্দ্রময়৷ তিনি সীমান্তহীন বাঙালির আরাধ্য৷ বাঙালির ঘরে নিত্যদিন তাঁর আসন পাতা৷ তবু বিশেষ দিনে তাঁকে আরও একবার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সাধ জাগে!
প্রাণের উৎসবে
সেকালেও দেশের বাইরে পালিত হয়েছে রবীন্দ্র জন্মোৎসব৷ এমনকি, সুদূর পারস্যেও! ঠাকুরবাড়ির স্মরণিকায় সেই ইতিহাস৷
অনন্তের বাণী তুমি
রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে নানা নাটক অভিনীত হয়েছে৷ শান্তিনিকেতনে কবির জন্মদিনে স্বয়ং কবি ‘রাজা’ নাটকে রাজা সেজেছিলেন৷ ঠাকুরবাড়ির বহু নাটকের মঞ্চ ‘বিচিত্রা ভবন’ সেজে উঠেছে আলপনায়৷
প্রেমের রবি
পঁচিশে বৈশাখের পূণ্য প্রভাতে সরলাদেবী নিঃশব্দে কবির বিছানার পাশে নিজের হাতে গাঁথা বকুলফুলের মালা রেখেছিলেন৷ উপহার হিসেবে তিনি সঙ্গে এনেছিলেন এক জোড়া ধুতি, ফুল ও মালা৷ ভালোবাসার সেই ফুল আজও কবির প্রাপ্তি৷
গান আমার যায় ভেসে যায়
অখণ্ড বাঙালি সত্তার প্রতীক বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা জানাতে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে শিল্পী ও শ্রোতার জমায়েত৷
পান্থ তুমি পান্থজনের সখা হে
শান্তিনিকেতনে ১৯২২-এ জন্মদিনের সকালে ‘সবার মাঝারে তোমারে স্বীকার করব হে’ গানটি গাইতে গাইতে আশ্রমিকরা কবির সামনে আসেন৷ মালা চন্দন দিয়ে তাঁকে প্রণাম করেন৷ কলকাতার পথে প্রভাতফেরিতে আজও সেই আবেগ৷
মিনার্ভা থিয়েটারে
শান্তিনিকেতনে শেষ জন্মদিনে সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে কবি লেখেন ‘ওই মহামানব আসে’৷ শান্তিদেব ঘোষের সঙ্গে অসুস্থ কবি গানে সুর দিয়ে গলাও মেলান৷ শান্তিদেবের স্মৃতিধন্য ‘রবীন্দ্র মেলা’-র রবিপ্রণাম মিনার্ভা থিয়েটারে৷
শান্তি করো বরিষণ
‘‘জানি জন্মদিন/ এক অবিচিত্র দিনে ঠেকিবে এখনি/ মিলে যাবে অচিহ্নিত কালের পর্যায়ে...৷’’ কালের সীমা পেরিয়ে মহামানবের পদধ্বনি একুশ শতকের কলকাতাতেও৷ পঁচিশের দিনভর তাঁর সঙ্গেই পথ হাঁটা মহানগরের৷