1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিস্তার জলবন্টন: বিতর্কিত মন্তব্য মমতার

৮ মার্চ ২০২১

উত্তরবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

https://p.dw.com/p/3qL4W
তিস্তা
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW

নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের আগে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রোববার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, ''বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার জল যথেষ্ট পরিমাণে থাকলে তবেই আমরা জলবন্টনে রাজি হব।'' মমতা বলেছেন, তিস্তার জলে উত্তরবঙ্গেরও 'হিস্সা' অর্থাৎ, ভাগ আছে। সেই ভাগ পশ্চিমবঙ্গ কোনোভাবেই ছাড়বে না। অর্থাৎ, ভোটের মুখে তার আগের অবস্থানের কথাই আবার জানিয়েছেন মমতা

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই তিস্তা জলবন্টন চুক্তি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো মমতা সেই চুক্তিতে রাজি হননি। ফলে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা যায়নি। বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের সঙ্গে যে কোনো আলোচনায় তিস্তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। ভারত-বাংলাদেশ শেষ ভার্চুয়াল বৈঠকেও শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদীর কাছে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চ মোদী ঢাকায় গেলে ফের এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তার আগে মমতার এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে মমতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই মন্তব্য করেছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে বিজেপি অত্যন্ত ভালো ফল করেছিল। মমতা বিজেপির সেই ভোট নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য উত্তরবঙ্গে দাঁড়িয়েই তিস্তা বিতর্ক নতুন করে তুলে দিলেন। এর ফলে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ মমতাকে পছন্দ করবেন বলে তাদের অভিমত। অন্যদিকে, তিস্তার জলবন্টন নিয়ে মোদী কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কথা ভাববেন। তিস্তা চুক্তি হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ যে তা ভালো ভাবে নেবেন না, মোদী তা ভালোই জানেন। মমতা সেই সুযোগটা রাজনীতির দিকে থেকে কাজে লাগাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, তিস্তার জলবন্টনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি সঙ্গত। ভারত যে ভাবে চুক্তিটি ঝুলিয়ে রেখেছে, তা ঠিক নয়। আবার এও ঠিক, জলবন্টন হলে, উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ সমস্যায় পড়বেন। তারা তিস্তার জলের উপরেই নির্ভরশীল। এবং সে কারণে প্রথম থেকেই মমতা এর বিরোধিতা করছেন। গরমের সময় তিস্তায় জলের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।

ভারতের আইন অনুযায়ী, নদীর জলবন্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারই শেষ কথা বলে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে ফেললে পশ্চিমবঙ্গের কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিপুল দ্বন্দ্ব তৈরি হবে। সেই দ্বন্দ্ব এড়াতেই মনমোহন সিং শেষ পর্যন্ত চুক্তি করতে পারেননি। মোদীও এতদিন পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি উপেক্ষা করে চুক্তি করেননি। পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মুখে নরেন্দ্র মোদী কী করেন, সেটাই এখন দেখার। বিষয়টি জটিল কারণ, বাংলাদেশও তিস্তার জলবন্টন নিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে ভারতও খুব বেশিদিন বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখতে পারবে না। মমতা এই সময় তিস্তা প্রসঙ্গ তুলে বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তি সম্ভবত হয়ে যাবে। তাতে উত্তরবঙ্গের অসুবিধা হবে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে উত্তরবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন। সেজন্যই ভোটের মুখে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)