1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীর ভেজা চুল যৌনতার সংকেত?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ ডিসেম্বর ২০১৯

নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নারীর ভেজা চুলকে যৌনতার সংকেত বলে উল্লেখ করে তা পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন৷ বিষয়টি নিয়ে চলছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/3UDua
ছবি: Fotolia/bertys30

নিউজ নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গত সোমবার কুঁড়িগ্রামের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই কর্মশালা হয়৷ কর্মশালার বিষয় ছিল ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ: নারী সাংবাদিকের নিরাপত্তা’৷ এ বিষয়ে ‘নারীদের পোশাক সংক্রান্ত প্রস্তুতি’ নিয়ে বলতে গিয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম পাওয়ার পয়েন্টের মাধমে ছয়টি টিপস দেন৷

১. ফ্ল্যাট স্যান্ডেল, জুতো পরিধান করে দৌড়ানো সুবিধাজন

২. বিয়ের চিহ্নস্বরূপ আংটি বা অন্যকিছু পরিধান

৩.দামি অলংকার পরিহার

৪.ভেজা চুলে বাইরে যাওয়া যাবে না৷ কোনো কোনো সংস্কৃতিতে এটা যৌন সংকেত

৫. ঝুলানো গলার হার বা অন্যকিছু, যা সহজে টান দেয়া যায় পরিহার করতে হবে

৬. বুলেট প্রুফ জ্যাকেট যদি প্রয়োজন মনে হয়, রাখতে হবে

তার দেয়া এই টিপস-এর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোম মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ কয়েকটি টিপসকে সমালোচকরা ‘নারীর জন্য অবমাননাকর’ বলেছেন৷

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়ামিন বলেন, ‘‘তিনি নারীকে অপমান করেছেন৷ তিনি শিক্ষক হতে পারেন, কিন্তু শিক্ষিত হননি৷ তিনি নারীকে পণ্য মনে করেন বলেই এ ধরনের কথা বলেছেন৷ নারী কেমন পোশাক পরবে, তার চুল কেমন থাকবে এটা নারী বা নারী সাংবাদিকের নিরাপত্তার কোনো ইস্যু হতে পারে না৷ তিনি তার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিবাহিত নারীর নিরাপত্তা কি আলাদা?এই ধরনের মানসিকতার একজন শিক্ষক কিভাবে নারী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষক হতে পারেন, সেটা ভেবে আমি বিস্মিত৷’’

যারা সমালোচনা করছেন তারা না বুঝেই করছেন: অধ্যাপক ইসলাম

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ শিমুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত মানুষই মনে করেন যে, তারা জেন্ডার বিষয়টি বোঝেন৷ আসলে অনেকেই বোঝেন না৷ এই প্রশিক্ষকও বোঝেন না৷ তাই নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তিনি প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণার কথাই বলেছেন৷ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাই প্রশিক্ষক নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷ নয়তো উল্টো ফল পাওয় যাবে, কারণ, তারা ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন৷’’

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ম্যানুয়াল দেখে ওই টিপসগুলো দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি তা বাস্তবতার নিরিখেই বলেছি৷ নারী সাংবাদিকরা যখন ঝুঁকিপূর্ণ রিপোর্টিং করতে যাবেন, তখন তারা এগুলো ফলো করবেন৷ ভেজা চুল কোনো সংস্কৃতিতে যৌনতা উসকে দেয়৷ এটা সত্য৷ আবার নারী যদি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে, সে প্রেক্ষাপটে বিবাহ চিহ্নের কথা বলেছি৷ যারা সমালোচনা করছেন, তারা না বুঝেই করছেন৷’’

এই প্রশিক্ষণে মোট ২৫জন সাংবাদিক অংশ নেন৷ তার মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন নারী৷ তাহলে এই প্রশিক্ষণ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা পুরুষ সাংবাদিকদেরও জানা দরকার৷ আর আমার বিষয় ছিল ওটা৷ আমি কী করব?’’

প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া একমাত্র নারী সাংবাদিক বৈশাখী টেলিভিশনের কুঁড়িগ্রাম প্রতিনিধি লাইলি বেগম বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের সময় এসব বিষয় নিয়ে আমার পুরুষ সহকর্মীরাও প্রশ্ন তুলেছেন৷ কিন্তু তিনি বারবার তার অস্থানে অনড় থেকেছেন৷ তার আচরণেও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব স্পষ্ট ছিল৷ তিনি বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, নারীরাই নারীদের পিছিয়ে থাকা এবং তাদের সমস্যার জন্য দায়ী৷’’ এদিকে এই কর্মশালার আয়োজক প্রতিষ্ঠান নিউজ নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক শহীদুজ্জামানও প্রশিক্ষকের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘যারা সমালোচনা করছেন, তারা না বুঝেই করছেন৷ নারীকে অবমাননা নয়, তাদের নিরাপত্তার জন্যই ওইসব টিপস দেয়া হয়েছে৷’’