1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাকা দ্বিগুণের ফাঁদে কেন পড়ছে জনতা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ মে ২০২২

অতীতে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতারিত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। সেই স্মৃতি উস্কে শহরে দুটি বড় চিটফান্ড সংস্থা প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে।

https://p.dw.com/p/4ArpY
Symbolbild - indische Rupie
ছবি: Getty Images

কিন্তু ঝুঁকি জেনেও কেন মানুষ চিটফান্ডের পাল্লায় পড়ছেন? নাকি রয়েছে নজরদারির অভাব?

পশ্চিমবঙ্গে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার ইতিহাস প্রাচীন নয়। সেই ধারাবাহিকতাতেই ফুলেফেঁপে ওঠে সুরানা গ্রুপ ও ‘সেভ দ্য বেয়ারফুট'। নানা ধরনের প্রকল্পের টোপ দিয়ে টাকা সংগ্রহ করছিল প্রতারকরা। বলা হয়েছিল, এক লাখ টাকা দিলে দেড় মাসের মধ্যেই ফেরত দেওয়া হবে দেড় লাখ টাকা। এমনকী মাস তিনেকের মধ্যেই টাকা হয়ে যাবে দ্বিগুণ। সাধারণ মানুষের মধ্যে খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। পার্ক সার্কাস, এন্টালি, বেনিয়াপুকুর এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই লগ্নি করে আংশিক টাকাও ফেরত পান। তাতেই আস্থা বাড়ে চিটফান্ডের উপর। অনেক বেশি লগ্নি আসতে থাকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায়। বহু ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেন লগ্নি করতে। ‘সেভ দ্য বেয়ারফুট' চিটফান্ডের মহিলা কর্ণধার লিজা মুখোপাধ্যায় এভাবেই কয়েকশো কোটি টাকা তোলেন। তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি।

২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ আর একটি চিটফান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে। মোটা রিটার্ন-এর লোভ দেখিয়ে টাকা জমা নিত এরা। তারপর একদিন হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ! এমনই অভিযোগ সুরানা গ্রুপের কর্ণধার শান্তি সুরানার বিরুদ্ধে। এরপর গার্ডেনরিচ এলাকার আর এক চিটফান্ড সংস্থা বিএস এন্টারপ্রাইজের নাম জড়ায় আর্থিক তছরুপে। এরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ৫০ হাজার টাকায় দুই হাজার টাকা সুদ পাওয়া যাবে। যারা লগ্নি করেন, তারা কিছুদিন পর ফাঁকিটা ধরে ফেলেন। ২০২০ সাল থেকে এই সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিপদ বুঝে সংস্থার মালিক বাসুদেব ভৌমিক পলাতক।

সাম্প্রতিক অতীতে রমরমা দেখা গেলেও সেই সাতের দশক থেকেই বাংলায় ভুঁইফোঁড় সংস্থায় লগ্নির প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বারবার চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছে। কিন্তু এরই সঙ্গে বারবার এই প্রশ্নটাও উঠছে যে, আট কিংবা নয়ের দশকের সঞ্চয়িতা, সঞ্চয়িনী, ভেরোনা, ওভারল্যান্ড নাম সংস্থাগুলির পর্দাফাঁসের পরেও বাংলায়

সারদা, আইকোর, এমপিএস, পিনকন, রোজ ভ্যালির মতো বড় মাপের চিটফান্ড কেলেঙ্কারি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ সব বেআইনি সংস্থায় টাকা রাখার প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না কেন? আইএসআই-এর অধ্যাপক শুভময় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একদিকে যেমন যুক্তিহীন লোভ রয়েছে, যার জন্য মানুষ অনেক সময় ঠকে। তেমনই আবার ভাল লাইফস্টাইল বা জীবনের আশায় মানুষ লোভ করে। গরিব মানুষ সহজেই এই ফাঁদে পা দেন। চিটফান্ডের রমরমায় গরিব মানুষেরই ক্ষতি হয়।”

এক দশক আগে সারদা, রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারির আগে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের নেতাদের আনুকূল্যে রমরমা হয় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির। এ নিয়ে কমিশন গড়া হলেও লাভ হয়নি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, "চিটফান্ড কেলেঙ্কারি যে একটা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছিল, সে বিষয়ে আমরা সবাই সহমত। সংস্থাগুলির মাথারা প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন, সেকথা সবাই বুঝতে পেরেছে। শ্যামল সেন কমিশন তো কার্যত মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল। সরকার যে আইন এনেছিল, তার কী কার্যকারিতা কেউ জানে না। সরকার যে আর্থিক প্রকল্প নিয়েছিল তার খবরও কেউ জানে না। সব ধামাচাপা পড়ে গেল।” বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার মন্তব্য, "রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত ছাড়া এত বড় চিটফান্ডের রমরমা গোটা বাংলা জুড়ে চলতে পারে না। আমরা চাই সমস্ত চিটফান্ড মামলায় ধৃত প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। প্রতারিত মানুষ তাদের টাকা ফেরত পান।”

চড়া সুদের প্রলোভনে পা দিয়ে বারবার সর্বস্বান্ত হয় সাধারণ মানুষ। অথচ দেখা যাচ্ছে, ডাকঘরে একসময়ের জনপ্রিয় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে লগ্নি কমছে। সরকারি ব্যবস্থায় ডাকঘরে সুদের হার স্বাভাবিকভাবেই কম। তা হলে কি লোভই পতনের কারণ? মনোবিদ সুবর্ণা সেন বলেন, "প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, অতিমারির পরে সেটা বেড়েছে। নিরাপত্তার অভাববোধ থেকে তারা ভাবছেন, ম্যাজিক হয়ে যাবে। হয়তো কোথাও ভাবছেন, এরা ওরকম নয়, সেজন্য টাকা লগ্নি করছেন।” সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে শুভময় মৈত্র বলেন, "শুধু বন্ধ করলেই হবে না, তা কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ নিষিদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে, যাতে অর্থলগ্নি সংস্থা সক্রিয় থাকতে না পারে।”