1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তথ্য গোপন করার জন্যই কি বিরোধিতা?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৩ এপ্রিল ২০২০

তথ্য গোপন করতেই কি পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি দেখতে যাওয়া কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের তিন দিন ধরে বাধা দেওয়া হলো? প্রশ্ন বিরোধীদের।

https://p.dw.com/p/3bIUO
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

তিনদিন ধরে টানাপোড়েনের পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যবেক্ষক দলকে পশ্চিমবঙ্গে করোনাপরিস্থিতি ঘুরে দেখার অনুমতি পেলেন। সেই মতো কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা প্রথমে রাজারহাটে একটি কোয়ারান্টিন সেন্টার ঘুরে দেখেছেন। লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপর তাঁরা গিয়েছেন বাঙুরে কোভিড হাসপাতাল দেখতে। সেখানেও রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। কলকাতা, হাওড়া সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা ঘুরে দেখে তাঁরা কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট দেবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁদের এই সফর ঘিরে রাজ্যে তৃণমূল সরকার এত বিরোধ করলো কেন? তাঁদের হাসপাতাল, বাজার, কোয়ারান্টিন সেন্টার ঘুরে দেখা নিয়ে এত বিতর্কের  পিছনে কি কোনও আশঙ্কা কাজ করেছে? গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে, এটাই কি আশঙ্কা? বিরোধীদের অভিযোগ এটাই। তাদের দাবি, রাজ্য সরকার করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম করে দেখাচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও কম রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একটি ভিডিও টুইট করে অভিযোগ করেছেন, পুরসভা হাসপাতাল থেকে পরিবারকে না জানিয়ে মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে ফেলেছে।

কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল সোমবার সকাল থেকে। প্রথমে বিতর্কটা ছিল রাজ্য সরকারকে আগাম না জানিয়ে মোদী সরকার কি এই ভাবে রাজ্যে দল পাঠাতে পারে, তা নিয়ে। তারপর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের মধ্যে বিরোধ, চিঠি চালাচালি সবই হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে কড়া চিঠি লেখা হয়। তাতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে এই ধরনের পর্যবেক্ষক দল পাঠাবার অধিকার তাদের আছে। এরপরই মুখ্যসচিব জানান, তাঁরা কেন্দ্রীয় দলকে সবরকম সাহায্য করবেন। ঘটনা হলো, কেন্দ্রীয় দল তো এইভাবে শুধু  পশ্চিমবঙ্গেই আসেনি, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের মতো আরও দুইটি বিরোধী শাসিত রাজ্যেও গিয়েছে। সেখানে কোনও অসুবিধা হয়নি। রাজ্য সরকার পর্যবেক্ষক দলকে খুশিমতো সব কিছু দেখতে দিয়েছে। তা হলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অসুবিধা কীসের?

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''গোটা দেশে কেন্দ্রীয় দল ঘুরছে। কেথাও তাঁদেরকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না, কেবল পশ্চিমবঙ্গেই তাঁরা বাধা পেলেন। তার থেকেই পরিষ্কার, মুখ্যমন্ত্রী এখানে তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছেন। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন, এখনও সব পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে কি না বলা যাচ্ছে না। করোনা রুখতে সকলকে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা এই মনোভাব নিয়ে চলতে পারছেন না।'' রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁরা করোনার পরীক্ষা খুবই কম করছে। ফলে আসল সংখ্যাটা বোঝা যাচ্ছে না। করোনায় যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের মৃত্যুর কারণ হিসাবে অন্য কথা লেখা হচ্ছে। লকডাউনও কড়া ভাবে পালন করা হচ্ছে না।

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম আরেকটা গুরুতর অভিযোগ করেছেন। রাজ্যে লোকে খিদের জ্বালা সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনা হলো, বাবা-মা ভিক্ষে করে খাবার জোগাড় করছিলেন। পাড়া, প্রতিবেশীদের কাছে না পেয়ে তাঁরা দূরে ভিক্ষা করতে গিয়েছিলেন। ২২ বছরের মেয়ে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।'' সেলিমের অভিযোগ, ''তথ্য গোপন দুই সরকারই করতে চাইছে। টেস্ট করার কিট নিয়ে, খাদ্য সরবরাহ নিয়ে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে। দুই সরকার নিজেদের মধ্যে লড়ছে, এর ফলে সরকারের ওপর লোকের বিশ্বাস কমছে। তাঁরা নিজেদের অসুরক্ষিত ভাবছেন, রাগ তৈরি হচ্ছে।'' 

তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, বিজেপি করোনা নিয়ে রাজনীতি করছে। দলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, ''বাংলায় ৩০০ জন করোনা রোগী, কিন্তু সাতটি জেলায় কেন্দ্রীয় দল ঘুরবে। মধ্যপ্রদেশে ১৫০০ করোনা রোগী, সেখানে মাত্র একটি জেলায় তাঁরা যাবেন। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি করোনা রোগী, সেখানে দুইটি জায়গায় কেন্দ্রীয় দল ঘুরবে। বাংলাকে আলাদা করে বেছে নিয়ে অন্যায় আচরণ কেন করা হচ্ছে?'' বিজেপি নেতাদের মতে, রাজ্য সরকার তথ্য গোপন করছে বলেই আসল ছবিটা দেখতে এসেছে কেন্দ্রীয় দল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে কিটই দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা হবে কী করে? সরকারের অভিযোগ, যে কিট এসেছে, সেটাও খারাপ। আইসিএমআর অবশ্য বলছে, ''তাদের পাঠানো কিট রাজ্যে পড়ে আছে। ব্যবহার করা হচ্ছে না।'' বিশিষ্ট চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কেন্দ্র যে কিট পাঠিয়েছে, তাতে ভুল রয়েছে এটা আমি মনে করি না। এই যে বিতর্ক চলছে, এটা একটা রাজনৈতিক বিতর্ক। এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো যোগাযোগ নেই।''

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও বিতর্ককে আরও উসকে দিয়ে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ''কেন্দ্রীয় দল যাতে ঘুরে দেখতে পারে, তার ব্যবস্থা করুন।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দল পূর্ব মেদিনীপুর ও বিষ্ণুপুর ঘুরলো। তাতে লাভ কী হলো, জানান। আর এখন সংবিধান হাতে নেওয়ার সময়। মাইক, ঝাঁটা এ সব যাঁদের হাতে নেওয়ার, তাঁদের নিতে দিন।'' মমতা এখন ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নামছেন, মাইক নিয়ে বলছেন, সে সব নিয়েই কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপাল।

এই বিতর্কের মধ্যে বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিরোধীরা কিন্তু বারবার প্রশ্নটা তুলেই যাচ্ছেন, প্রকৃত তথ্য ধামাচাপা দিতেই কি কেন্দ্রীয় দলকে বাধা দেওয়া হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়ে এই প্রশ্নটা তৃণমূলের কাছে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর। সূত্রের খবর, তৃণমূলও প্রচার বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোরকে দিয়ে পাল্টা প্রচারের পরিকল্পনা ছকে নিয়েছে।