1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় মশা কমছে না কেন? 

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন ঢাকার দুই সিটিতে মশা নিধনে সাজ সাজ রব৷ বিদেশ থেকে মশা মারার নতুন ওষুধ আনা হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মরছে না৷ উল্টো মশা আরো বাড়ছে বলে জরিপে জানা গেছে৷ কেন এমন হচ্ছে?

https://p.dw.com/p/3NKLy
Bangladesch Dengue-Patienten im Krankenhaus von Dhaka
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন ঢাকার দুই সিটিতে মশা নিধনে সাজ সাজ রব৷ বিদেশ থেকে মশা মারার নতুন ওষুধ আনা হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মরছে না৷ উল্টো মশা আরো বাড়ছে বলে জরিপে জানা গেছে৷ কেন এমন হচ্ছে?

গত ১৭ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুই সিটি কর্পোরেশনে এডিসসহ অন্যান্য মশা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে৷ জরিপের কাজে এক হাজার বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ তাতে পাচ'শ বাড়িতে গড়ে ২০৭টি এডিস মশা পাওয়া গেছে৷ চলতি বছরের ৩ থেকে ১১ মার্চ ওইসব বাড়িতে পরিচালিত আরেকটি জরিপে এডিস মশা পাওয়া গিয়েছিল গড়ে ৩৬টি৷ একইভাবে এডিস মশার লার্ভাও বেড়েছে৷

আর সার্বিকভাবে মার্চে মাসের জরিপে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতি বাড়িতে গড়ে মশার উপস্থিতি ছিলো ২৬ আর উত্তর সিটিতে এ সংখ্যা ছিল ২১৷ চার মাসের মাথায় তা হয়েছে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৫৭৷ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সানিয়া তহিমনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ জুলাই মাসে করা এ বছরের দ্বিতীয় দফা জরিপে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে ঢাকায় মশার উপস্থিতি গত মার্চ মাসের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য আমরা এখনো বিশ্লেষণ করছি৷ এটা শেষ হলে আমার পুরো রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারব৷’’

মশার সোর্স ধংস করতে হবে: ডা. সানিয়া তহিমনা

এ সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে মশার ওষুধ ছিটানোসহ নানা ধরনের তৎপতার পরও কেন মশা বাড়ছে - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা মশার প্রজননের উত্তম সময়৷ বৃষ্টি আছে, আর্দ্রতা এবং উষ্ণতাও আছে৷ আর পানি জমছে ড্রামে, টবে, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা জায়গায়৷ ফলে এডিসসহ সব মশারই বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন যেটা করা হচ্ছে তা হলো, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে৷ কিন্তু এই ওষুধ দিয়ে এত মশা, লার্ভা ধ্বংস করা সম্ভব নয়৷ মশার সোর্স ধংসকরতে হবে৷ মশা যাতে জন্মাতে না পারে তার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে৷’’

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এখন যে মশা মারার ওষুধ ব্যবহার করছে তা আগের এবং ভারত থেকে আমদানি করা৷ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছি৷ একটি সকালে ড্রেনে বা যেখানে পানি জমেছে সেখানে লার্ভা মারার জন্য, আর অন্যটি ব্যবহার করা হচ্ছে দিনের বেলায়, পূর্ণবয়স্ক মশা মারার জন্য৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘তিন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে আমাদের এই ওষুধে শতকরা ৯৮ ভাগ মশা মরে৷’’

তবে, শুক্রবার ভারতের বায়ার কর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে আনা আরেকটি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে মশা নিধনে সফল হয়নি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন৷ হাইকোর্টের নির্দেশে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিদেশ থেকে আরো চার ধরনের মশা নিধনের ওষুধের নমুনা নিয়ে আসছে৷ তবে কোন দেশ থেকে এ ওষুধ আনা হচ্ছে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷

মশা কেন মরছে না তা তদন্ত শেষে বলতে পারব: মো. মারুফ হোসেন

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম অবশ্য চীন থেকে মশা মারার ওষুধ আনার ঘোষণা দিয়েছেন৷ দুই সিটি কর্পোরেশনই জানায় ওষুধের নমুনা দিয়ে মশা মরে কিনা পরীক্ষা করা হবে৷ মশা নিধনে ওষুধ কার্যকর প্রমাণিত হলে, এসব ওষুধ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন মশা মারার ওষুধ ভারত ও চীনেই বেশি তৈরি হয়৷ তবে তারা অ্যামেরিকা ও ইউরোপের কারিগরি সহয়তা নেয়৷’’

মশার ওষুধ কার্যকর না হওয়ায় সরকারও চিন্তিত৷ এজন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগকে এর কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেনকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তাতে মশা কেন মরছে না তা আমি তদন্ত শেষে বলতে পারব৷ তবে সাধারণভাবে ওষুধের মান, মাত্রা, পরিবেশ এসবের ওপর মশা মরা নির্ভর করে৷ আর মশার একটি বৈশিষ্ট হলো যে তার শরীরে দ্রুত রেসিসটেন্স তৈরি করতে পারে৷ ফলে সেটা বুঝে ওষুধ পরিবর্তন বা মাত্রা পরিবর্তন করতে হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সব ওষুধ মশা মারার জন্য নয়৷ সাধারণ বাড়িঘরে মশা নিধনের যে স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করা হয় তাতে মশা চলে যায় বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে৷ এতে যদি মশা মরত তাহলে তা মানবদেহের জন্যও চরম ক্ষতির কারণ হত৷ সাধারণ মশা বা মশার লার্ভা মারার জন্য ড্রেন, ডোবা বা মানুষের সংস্পর্শে আসেনা - সেসব জায়গা ওষুধ ছিটানো হয় বা স্প্রে করা হয়৷ ফগিং মেশিন দিয়ে এডাল্ট মশা তাড়ানো হয়,  মারাও হয়৷ এখন দেখতে হবে আসলে কোন কাজে কোন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে৷’’