1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় ফুটপাত আর বিভাজকে এত উৎপাত!

তম হোসেন ঢাকা
৩০ মে ২০২৩

পায়ে চলা পথের শহর মোটেই নয় আমাদের ঢাকা৷ এখানে ফুটপাত ধরে চলতে গেলে মেলে বিবিধ উৎপাত৷ যার জন্য পদে পদে হোঁচট খেতে হয় পথচারীদের৷

https://p.dw.com/p/4Ry0p
সড়ক বিভাজকের দুরবস্থা
সড়ক বিভাজকের দুরবস্থাছবি: Millat Hossain

এমনকি হাঁটতে গিয়ে রাস্তা পারাপারে যে ব্যাপার, সেখানেও পরিস্থিতি জটিল আর কঠিন৷ সড়ক বিভাজকের কোথাও আছে কাঁটাতার, আবার কোথাও দাঁড়িয়ে আছে উঁচু দেয়াল৷

অনেকেই বলে থাকেন যে, নিরাপদে চলতে সুবিধা করে দিতেই তো গড়া হয়েছে পদচারী সেতু৷ কিন্তু সেটাতে গর্ভবতী, বয়স্ক, পা নেই- এমন মানুষদের চড়া যে মহা মুশকিলের সেটা কী কখনো ভেবে দেখেছেন হাঁটার সেতুর কারিগররা? তাদের নজর অবশ্য পথচারী-বান্ধব নগর গড়ার দিকে নেই৷ বড় টাকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকেই যেন সব মনযোগ খরচ করতে হয় এই কর্তাদের৷ তাই তো সামান্য খরচের জেব্রাক্রসিং বাদ পড়ে গেছে৷ সাদাকালো ডোরা মুছে দিয়ে আমাদের শহর ভরে উঠেছে অসামান্য খরচের ফুটওভারব্রিজে৷

এই সেতু থেকে আবার শুরুর ফুটপাতে নেমে আসি৷ যেখানে বসত করেন ছিন্নমূল৷ যেখানে পসরা বেচেন হকার৷ যেখানে সামগ্রী রাখেন ভবননির্মাতা৷ যেখানে পড়ে থাকে আবর্জনা৷ এতো এতো উৎপাতে যোগ দেয় আবার ভাঙাগড়ার খেলা৷ ‘বাজেট নাই, বাজেট নাই'- বলে বলে যে শহরে নানা উন্নয়ন ঝুলিয়ে রাখা হয়, সেখানে এক কী দুবছর পরপর ফুটপাতের উপকরণ ও নকশা বদলের বরাদ্দ যে কোত্থেকে আসে সেটাও কোটি টাকার এক প্রশ্ন৷

ধরা যাক, লাল ইটের দারুণ পায়ে চলা পথ বহমান৷ কিন্তু আবার প্রকল্প এসে গেলো৷ উঠাও ইট, বানাও গর্ত৷ ফেলো আবার বালি৷ এবার বসাও রঙিন রঙিন টাইলস৷ এভাবে এভাবে কখনো ঢালাই ফুটপাতে, কখনো ইটে, কখনোবা টাইলসে হাঁটার বন্দোবস্ত হয় শহর ঢাকায়৷ কিন্তু ফুটপাত উন্নয়নের জোয়ার লেগে থাকে বলে হাঁটাহাটির জায়গাটা আসলে মূল সড়কে গিয়ে ঠেকে৷ সেখানে চলন্ত যানের সাথে জানবাজি রেখে পথ চলতে পথচারীদের৷

এক গুলিস্তানের কথাই যদি বলা হয়, সেখানে পথচারীদের চেয়ে ফুটপাত বেশি দখল করে আছে পথ-ব্যবসায়ীরা৷ ফুটপাতের দুপাশে তক্তপোষ পেতে দোকান করা হচ্ছে৷ মাঝে সামান্য জায়গায় ঠেলেঠুলে চলতে হয় সবাইকে৷ ফুটপাতে এমন জনজটলা চোখে পড়ে ফার্মগেট, নিউমার্কেট এলাকায়ও৷ এসব এলাকায় হকার উচ্ছেদের টেকসই কোনো উপায় বের করতে পারেনি প্রশাসন৷ সকালে উচ্ছেদ হলে বিকেলে আবার পায়ে চলা পথে পসরা সাজায় বিক্রেতারা৷ অথচ একটু তালাশেই বের হয়ে আসে যে, গুলিস্তানের মতো এলাকায় বেশিরভাগ বহুতল বিপণিবিতান তৈরি হয়েছে হকারদের পুনর্বাসনের খাতিরে৷ ভবনে দোকান বরাদ্দ নিয়ে পুরনো হকার পথ ছেড়ে দিলেও বেশি দিন ফাঁকা থাকে না ফুটপাত৷ আবার সেখানে নতুন কেউ চলে আসে৷ ফলে পথচারীদের একক অধিকারে কোনোকালেই আসে না শহরের হাঁটার পথ৷

ঢাকা মহানগরের সড়ক বিভাজকেও নানা ফিকির চলে৷ কোথাও তার ইটের গাঁথুনি, কোথাও হলো ব্লক, কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোথাও কাঁটাতার- বিভাজক নিয়ে নিরীক্ষার যেন শেষ নেই৷ সেই ধারার সবশেষ সংযোজন ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়ক৷ বিভাজক উন্নয়নের নামে সেখানে শুধু উপকরণ নয়, উপড়ানো হয়েছে গাছও৷ তা দেখে বিক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীরা৷ পুরনো গাছের বদলে অবশ্য নতুন করে ফুল গাছ লাগিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের তুষ্ট করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু গাছ রেখেও যে বিভাজকের চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব, সেটা আবার দেখা গেছে গুলশান-মহাখালী মূল সড়কে৷ সংস্কারের বদলে এখানেও বিভাজক আমূল পাল্টে ফেলা হলো কেন- এ প্রশ্ন সামনে নিয়ে আরেক রকম প্রতিবাদ হতেই পারে৷ কর্তাদের জন্য আশা-জাগানিয়া ঘটনা হচ্ছে- গাছের পক্ষে বৃক্ষপ্রেমীরা সোচ্চার থাকলেও ফুটপাত আর সড়ক বিভাজক নিয়ে ভাঙাগড়ার খেলা বন্ধে নেই কোনো বাদপ্রতিবাদ৷ তাই সেখানে নাগরিকের টাকায় গড়া রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পাওয়া নগদ বরাদ্দের যথেচ্ছাচার এখনো ধারাবাহিক৷ শহর ঢাকায় পথচারীদের নাকাল দশা তাই আপাতত বন্ধ হবার নয়৷ কোনোদিন কী আদৌ শেষ হবে ফুটপাত আর বিভাজক নিয়ে খরুচে নানা নিরীক্ষার এই পথ?