ঢাকায় ফুটপাত আর বিভাজকে এত উৎপাত!
৩০ মে ২০২৩এমনকি হাঁটতে গিয়ে রাস্তা পারাপারে যে ব্যাপার, সেখানেও পরিস্থিতি জটিল আর কঠিন৷ সড়ক বিভাজকের কোথাও আছে কাঁটাতার, আবার কোথাও দাঁড়িয়ে আছে উঁচু দেয়াল৷
অনেকেই বলে থাকেন যে, নিরাপদে চলতে সুবিধা করে দিতেই তো গড়া হয়েছে পদচারী সেতু৷ কিন্তু সেটাতে গর্ভবতী, বয়স্ক, পা নেই- এমন মানুষদের চড়া যে মহা মুশকিলের সেটা কী কখনো ভেবে দেখেছেন হাঁটার সেতুর কারিগররা? তাদের নজর অবশ্য পথচারী-বান্ধব নগর গড়ার দিকে নেই৷ বড় টাকার বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকেই যেন সব মনযোগ খরচ করতে হয় এই কর্তাদের৷ তাই তো সামান্য খরচের জেব্রাক্রসিং বাদ পড়ে গেছে৷ সাদাকালো ডোরা মুছে দিয়ে আমাদের শহর ভরে উঠেছে অসামান্য খরচের ফুটওভারব্রিজে৷
এই সেতু থেকে আবার শুরুর ফুটপাতে নেমে আসি৷ যেখানে বসত করেন ছিন্নমূল৷ যেখানে পসরা বেচেন হকার৷ যেখানে সামগ্রী রাখেন ভবননির্মাতা৷ যেখানে পড়ে থাকে আবর্জনা৷ এতো এতো উৎপাতে যোগ দেয় আবার ভাঙাগড়ার খেলা৷ ‘বাজেট নাই, বাজেট নাই'- বলে বলে যে শহরে নানা উন্নয়ন ঝুলিয়ে রাখা হয়, সেখানে এক কী দুবছর পরপর ফুটপাতের উপকরণ ও নকশা বদলের বরাদ্দ যে কোত্থেকে আসে সেটাও কোটি টাকার এক প্রশ্ন৷
ধরা যাক, লাল ইটের দারুণ পায়ে চলা পথ বহমান৷ কিন্তু আবার প্রকল্প এসে গেলো৷ উঠাও ইট, বানাও গর্ত৷ ফেলো আবার বালি৷ এবার বসাও রঙিন রঙিন টাইলস৷ এভাবে এভাবে কখনো ঢালাই ফুটপাতে, কখনো ইটে, কখনোবা টাইলসে হাঁটার বন্দোবস্ত হয় শহর ঢাকায়৷ কিন্তু ফুটপাত উন্নয়নের জোয়ার লেগে থাকে বলে হাঁটাহাটির জায়গাটা আসলে মূল সড়কে গিয়ে ঠেকে৷ সেখানে চলন্ত যানের সাথে জানবাজি রেখে পথ চলতে পথচারীদের৷
এক গুলিস্তানের কথাই যদি বলা হয়, সেখানে পথচারীদের চেয়ে ফুটপাত বেশি দখল করে আছে পথ-ব্যবসায়ীরা৷ ফুটপাতের দুপাশে তক্তপোষ পেতে দোকান করা হচ্ছে৷ মাঝে সামান্য জায়গায় ঠেলেঠুলে চলতে হয় সবাইকে৷ ফুটপাতে এমন জনজটলা চোখে পড়ে ফার্মগেট, নিউমার্কেট এলাকায়ও৷ এসব এলাকায় হকার উচ্ছেদের টেকসই কোনো উপায় বের করতে পারেনি প্রশাসন৷ সকালে উচ্ছেদ হলে বিকেলে আবার পায়ে চলা পথে পসরা সাজায় বিক্রেতারা৷ অথচ একটু তালাশেই বের হয়ে আসে যে, গুলিস্তানের মতো এলাকায় বেশিরভাগ বহুতল বিপণিবিতান তৈরি হয়েছে হকারদের পুনর্বাসনের খাতিরে৷ ভবনে দোকান বরাদ্দ নিয়ে পুরনো হকার পথ ছেড়ে দিলেও বেশি দিন ফাঁকা থাকে না ফুটপাত৷ আবার সেখানে নতুন কেউ চলে আসে৷ ফলে পথচারীদের একক অধিকারে কোনোকালেই আসে না শহরের হাঁটার পথ৷
ঢাকা মহানগরের সড়ক বিভাজকেও নানা ফিকির চলে৷ কোথাও তার ইটের গাঁথুনি, কোথাও হলো ব্লক, কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোথাও কাঁটাতার- বিভাজক নিয়ে নিরীক্ষার যেন শেষ নেই৷ সেই ধারার সবশেষ সংযোজন ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়ক৷ বিভাজক উন্নয়নের নামে সেখানে শুধু উপকরণ নয়, উপড়ানো হয়েছে গাছও৷ তা দেখে বিক্ষুব্ধ পরিবেশবাদীরা৷ পুরনো গাছের বদলে অবশ্য নতুন করে ফুল গাছ লাগিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের তুষ্ট করার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু গাছ রেখেও যে বিভাজকের চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব, সেটা আবার দেখা গেছে গুলশান-মহাখালী মূল সড়কে৷ সংস্কারের বদলে এখানেও বিভাজক আমূল পাল্টে ফেলা হলো কেন- এ প্রশ্ন সামনে নিয়ে আরেক রকম প্রতিবাদ হতেই পারে৷ কর্তাদের জন্য আশা-জাগানিয়া ঘটনা হচ্ছে- গাছের পক্ষে বৃক্ষপ্রেমীরা সোচ্চার থাকলেও ফুটপাত আর সড়ক বিভাজক নিয়ে ভাঙাগড়ার খেলা বন্ধে নেই কোনো বাদপ্রতিবাদ৷ তাই সেখানে নাগরিকের টাকায় গড়া রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পাওয়া নগদ বরাদ্দের যথেচ্ছাচার এখনো ধারাবাহিক৷ শহর ঢাকায় পথচারীদের নাকাল দশা তাই আপাতত বন্ধ হবার নয়৷ কোনোদিন কী আদৌ শেষ হবে ফুটপাত আর বিভাজক নিয়ে খরুচে নানা নিরীক্ষার এই পথ?