ঢাকায় করোনা ফলোআপ ক্লিনিক
করোনা থেকে মুক্তির পরেও অনেকেই শ্বাসকষ্ট, নিদ্রাহীনতা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো নানা সমস্যায় ভুগছেন৷ সমস্যার সমাধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং বিএসএমএমইউ (সাবেক পিজি) চালু করেছে কোভিড-১৯ ফলোআপ ক্লিনিক৷ দেখুন ছবিঘরে...
সীমিত পরিসরে
২৯ আগস্ট থেকে রোগীদের সেবা দিতে শুরু করেছে ক্লিনিক দুটি৷ তবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা৷ শীঘ্রই বড় পরিসরে রোগী দেখা শুরু হবে৷ বিএসএমএমইউ-তে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং ঢামেকে রবিবার ও বৃহস্পতিবার এ সেবা পাওয়া যাবে৷
সেবা নিচ্ছেন অনেকেই
শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করা নাজমুল হায়দার ২ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন৷ তিন সপ্তাহ পর সেরে ওঠেন তিনি৷ তবে এখনো শারীরিকভাবে দূর্বল নাজমুল৷ সারারাত ঘুমাতে পারেন না৷ গণমাধ্যমে জানতে পেরে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে এসেছেন চিকিৎসা করাতে৷ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এখন তাদের ক্লিনিকে ৪০ জনের মতো রোগী আছে৷
সুদূর লাকসাম থেকে
শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন রোগীরা৷ লাকসামে থেকে আসা শফিকুল ইসলাম গত ২৩ আগস্ট করোনা নেগেটিভ হন৷ ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতা নিয়ে৷
চিকিৎসায় আন্তরিকতা
ক্লিনিকগুলোতে সময় নিয়েই রোগের ইতিহাস শুনতে এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেল ডাক্তারদের৷ প্রয়োজনে সহকর্মীর সাথে আলোচনা করে রোগীদের অধিকতর সেবা দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা৷
সপরিবারে আক্রান্ত
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ-তে তার স্ত্রী এবং শ্যালিকাসহ এসেছেন৷ তারা তিনজনই কোভিড পজিটিভ ছিলেন৷ এখনো শহিদুলের স্মৃতিভ্রম হয় এবং বেশিক্ষণ কোন কাজে মনোযোগ থাকে না৷
চিকিৎসকেরা যা বলছেন
বিএসএমএমইউ-র পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. শ্রীনিবাস পাল বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ রোগী আসছেন ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে৷ প্রায় সবারই কাশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, বুকে ব্যথা হচ্ছে অথবা দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট৷ এ রোগীদের যেন দীর্ঘস্থায়ী রোগ ফিব্রোসিস না হয়, সেজন্য যথাসম্ভব চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা৷’’
ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী শহিদুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ কেজি ওজন হারিয়েছেন৷ কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে যেসব রোগী আসছেন, তাদের অনেকেই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ পাশাপাশি কাজে মনোযোগের ঘাটতি, অনিদ্রা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকার মতো মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেকের৷
আশার বাণী
ফলোআপ ক্লিনিকের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা বিশ্বেই করোনা পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন মানুষ৷ তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশেরই এই সমস্যা সাময়িক৷ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে রোগীর শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে চলে যাবে বলে আশা করছেন তারা৷ নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া এবং ওষুধ সেবন এই সমস্যাকে নিরাময় করতে পারে, বলছেন তারা৷
নিয়মিত ফলোআপে সুফল
আগস্টের ৫ তারিখে করোনা পজিটিভ হন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন৷ বুক ও শরীর ব্যথা এবং শারীরিক দূর্বলতার সমস্যা নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে এসেছেন তিন বার৷ চিকিৎসকেরা রোগের অবস্থা জানতে প্রতিবারই নানা রকম পরীক্ষা করতে বলেছেন৷ এতে কিছুটা বিরক্ত হলেও তিনি চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় সন্তুষ্ট৷ তিনি মনে করেন, ডাক্তারের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চললে কোভিড পরবর্তী সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
প্রয়োজন প্রচারের
ঢামেকের করোনা ফলোআপ ক্লিনিকের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. খায়রুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘তাদের কাছে এখন যে হারে রোগী আসছেন, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷ এই ক্লিনিকের কথা মানুষ না জানার কারণে বাকিরা এখানে আসছেন না৷ পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে পারলে এর সুফল পাবে মানুষ৷’’