ঢাকায় উড়ন্ত নওগাঁর ব্যালেরিনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু স্থানে হঠাৎই দেখা গেলো এক ব্যালে শিল্পীকে ঘুরে বেড়াতে৷ ঘুরে বেড়াতে না বলে উড়ে বেড়াতে বলাই ভালো৷ আলোকচিত্রী জয়িতা তৃষার নির্দেশনায় নৃত্যশিল্পী মুবাশশিরা ইরার ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
কে এই ব্যালে শিল্পী?
২০২০ সালে এসএসসি পাস করেন মুবাশশিরা ইরা৷ এরপর ভারতে গিয়ে উচ্চাঙ্গ নৃত্য শেখার ইচ্ছে থাকলেও করোনার কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি৷ কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে মায়ের উৎসাহে বাসায় বসে ইউটিউবেই শিখতে থাকেন ব্যালে নৃত্য৷ ছবিতে যেসব ভঙ্গিমায় ইরাকে দেখা যাচ্ছে, এর সবই ইউটিউব দেখেই শেখা৷
কী বলছেন জয়িতা?
আলোকচিত্রী জয়িতা তৃষার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকার অন্য নানা বিখ্যাত স্থানে ইরার ছবি তোলা৷ কিন্তু রাজু ভাস্কর্যের সামনে লাল-কালো কালিতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড দেখে তার তারুণ্যের শক্তির কথা মনে পড়ে৷ তখনই তিনি সেখানে ইরার ছবি তোলার পরিকল্পনা করেন৷
প্রজেক্টের নাম ‘ব্যালেরিনা’
তৃষা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মূলত বিদেশি ব্যালে ড্যান্সারদের নানা ছবি দেখেই এমন কিছু বাংলাদেশেও করার পরিকল্পনা তার মাথায় আসে৷ বছরখানেক আগে থেকেই বাংলাদেশেও এমন কিছু করা যায় কিনা ভাবছিলেন তিনি৷
ফেসবুকে পরিচয়
কেবল হাতে ক্যামেরা আর মাথায় আইডিয়া থাকলেই হবে না, এমন দারুণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত মডেলও তো দরকার৷ আর এ জায়গাতেই আটকে যাচ্ছিলেন ফটোগ্রাফার৷ কয়েক মাস আগে অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ আসে৷ একটি ফেসবুক গ্রুপে ইরার সঙ্গে পরিচয় হয় তৃষার৷ তার সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার করতেই ইরা রাজি হয়ে যান কাজ করতে৷
নওগাঁর মেয়ের ঢাকা বিজয়
পরিবারের সঙ্গে নওগাঁয় থাকেন ইরা৷ ফেসবুকে তৃষার কাজ দেখে তার বেশ পছন্দ হয়৷ ব্যালে নৃত্যের ভঙ্গিমায় আইকনিক নানা স্থানে ছবি তোলার আইডিয়াও বেশ মনে ধরে৷ এরপর কেবল এই ছবির প্রজেক্টে কাজ করতেই তার ঢাকায় আসা৷
ভুল থেকে শিক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি তোলার আগে ধানমন্ডিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ছবি তুলেছেন৷ তখন নানা ধরনের ভুল ধরা পড়ে৷ কিভাবে ছবিগুলো আরো ভালো ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলা যায়, মডেল ও ফটোগ্রাফার দুজনেই এ নিয়ে ভাবতে থাকেন৷ তখনকার এই ভুলগুলোই এখন এত সুন্দর ছবিতে কাজে লেগেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তৃষা৷
শাবির আন্দোলন, প্রতিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে উড়ন্ত ইরার ছবি সবচেয়ে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড ঝোলানো ছিল ভাস্কর্যের সামনে৷ এর ফলে অনেকেই ইরার মধ্য়ে তারুণ্য ও প্রতিবাদের ছোঁয়া দেখতে পেয়ে এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সম্পর্কও খুঁজে পান৷
ছিল শঙ্কাও
ঢাকার রাস্তায় এমন ভঙ্গিমায় ছবি মানুষ কিভাবে দেখবে, এ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নৃত্যশিল্পী ইরা৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিগুলো যে একটা আলোড়ন তৈরি করবে, সেটা তিনি প্রত্যাশা করেননি৷
নারীর অধিকার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারীর ব্যালের বিভিন্ন মুদ্রায় ছবি তোলাকে সাহসী পদক্ষেপ হিসাবে দেখছেন অনেকে৷ নারীদের যেখানে সমাজের নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বাধার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে মুক্ত পাখির ডানার উড়ে চলার এই প্রতীক অনেকেই নারী অধিকারের বার্তা হিসাবেও দেখছেন৷
ব্যালের প্রসার
বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ নৃত্য ও ব্যালে সম্পর্কে পরিচিতি ও আগ্রহ বাড়বে বলে আশা ইরা এবং তৃষা দুজনেরই৷ বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ইরা জানিয়েছেন, জিমন্যাস্টিকসের শক্তি এবং ব্যালে নাচের নমনীয়তা মিশিয়ে আরো অনেক কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তার৷
চলছে... চলবে...
ফ্রিল্যান্সার তৃষার ‘ব্যালেরিনা’ প্রজেক্ট এই কয়েকটি ছবির মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায়নি৷ বরং এ কেবল শুরু৷ ভবিষ্যতের ছবিগুলো আরো ভালো হবে বলে আশা তাদের৷ ফলে অদূর ভবিষ্যতে সংসদ ভবন বা শহীদ মিনারের সামনে ইরাকে উড়ে বেড়াতে দেখলে অবাক হবেন না৷